পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৪৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8X > বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ খান সেনারা ওকে বাঘের খাচায় দৈনিক বাংলা סי য়ারা, ১৯৭২ ঢুকিয়েছিল খান সেনারা ওকে বাঘের খাঁচায় ঢুকিয়েছিল বলিষ্ঠ দেহের অধিকারী জনাব সিরাজুদ্দৌলা ঠাকুরগাঁ শহরেরই অধিবাসী। দিনটি ছিল ২২শে জুলাই। বিকাল ৪টা। দোকানে বসে ছিলেন সিরাজুদ্দৌলা। এমন সময় ৭/৮ জন খান সেনা এসে তাঁকে ধরে ফেলল। তিনি কথা বলার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু খান সেনারা তার কোন কথাই শুনল না। ওরা ওকে জুতা পরতেও দেয়নি। তখনই শুরু হলো মার। ঘুষি, কিল, চড়, থাপ্পড় এক নাগাড়ে, বিরামহীন। ওদের একজন তার হাত দুটো বেঁধে ফেলল। মার খেতে খেতে তিনি ধরাশায়ী হয়ে গেলেন। কে কত মারতে পারে তার প্রতিযোগিতা শুরু হল। চলতে থাকলো সরু পায়ের লাথি। আর মুখখিস্তি। ওদের ক্যাম্পে যাওয়ার আগে চেকপোষ্ট। পশুদের সেকি উল্লাস। মুখ ব্যাদান করা হাসি। একে অপরকে বলছে, “বহুত উদমা শিকার মিল গিয়া।” সাথে সাথে পরম সুখে মারধোর চলতেই থাকলো। ওদের পায়ে পায়ে ফুটবলের মত গড়াতে গড়াতে ক্যাম্পে গিয়ে পৌঁছলাম। ক্যাম্পে আরো বিরাট চেহারার কতকগুলো গাটা গোট্রা খান সেনা এগিয়ে এলো তখনো জ্ঞান হারাইনি। মনে হল এদের মার আমি হজম করতে পারবো না । আজ আমার এখানেই শেষ। কেন জানি না, ওরা মারলো না। ঘরের বারান্দায় শূন্য পাটাতনের উপর আমাকে বসতে বললো। সাহস সঞ্চয় করে বললাম, আমি একজন মেডিক্যাল চাত্র, শিক্ষিত মানুষ। চেয়ার দাও । যেনো ভূত দেখেছে। এমনি দৃষ্টিতে তাকিয়ে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো পশুর দল। বলল, চেয়ার? বাঙ্গালী সে অধিকার হারিয়েছে। খুঁটির সাথে আমার হাত বেঁধে ফেলা হলো। তখন আসরের নামাজের সময় হয়েছে। তিনি অজুর পনি চাইলেন। এনে দিল, বাঁধা হাত ছাড়িয়েও দিল। নামাজের আধঘন্টা খানেক পর শুরু হলো ওদের জিজ্ঞাসাবাদ। আমি নাকি অনেক অবাঙ্গালী হত্যা করেছি, আমি একজন সামরিক অফিসার। আমি ছেলেদের রাইফেল ট্রেনিং দিয়েছি ইত্যাদি। ওরা আমাকে খুবই পীড়িপীড়ি করতে থাকে আমি যাতে সব কিছু স্বীকার করি। এরপর মনে হলো, সিকিউরিটির কিছু অফিসার এলো। তারাও একই ধরনের প্রশ্ন করেত থাকে। আমি সব কিছুই অস্বীকার করি। এবার ভয় দেখালো, ওরা আমাকে মেরে ফেলবে। এরপর ওরা কোথেকে একটা বানর জোগাড় করে আনলো। ওরা বানরটাকে আমার উপর ছেড়ে দিল। চলল বানরের অত্যাচার। কামড়, আঁচড়, থাপ্পড় এক সময় বানরও শ্রান্ত হয়ে গেল। সন্ধ্যা নেমে এলো। এরপর ওরা আমাকে বাঘের খাঁচায় ঢুকিয়ে দিল। কি মর্জি হলো। ওরা আমাকে খাঁচা থেকে বের করে নিয়ে এলো।