পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৪৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8〉○ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড হাজার প্রাণের হত্যাপুরী লাকসাম সিগারেট পূর্বদেশ ৬ ফেব্রুয়ারী, ১৯৭২ ফ্যাক্টরী হাজার প্রাণের হত্যাপুরী লাকসাম সিগারেট ফ্যাক্টরী ৷ এম এ খায়ের মিয়া ॥ লাকসাম, কুমিল্লা লাকসাম জংশনে দাঁড়িয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে দৃষ্টি মেলে ধরলে দেয়াল ঘেরা সুবিশাল এলাকা জুড়ে কালো রং মাখা যে দ্বিতল প্রাসাদটি দেখা যাবে সেটি একটি সিগারেট ফ্যাক্টরী। কিন্তু তার নাম যা-ই থাকুক না কেন লাকসামবাসীরা এটাকে হত্যাপুরী বলেই জানে। বিগত নয়টি মাসে এই ফ্যাক্টরীর বিভিন্ন কোনায় বিভিন্ন কক্ষে ও কোঠায় বিভিন্ন সেলে এবং ছাদে যে অত্যাচার, নারী ধর্ষণ এবং নির্বিচারে গণহত্যা চলেছিল তার দিনে-রাতে যখন-তখন লাকসাম থানার বিভিন্ন গ্রামগঞ্জে হানা দিয়ে গ্রাম বাংলার নিরীহ নারীপুরুষদের ধরে এনে এবং লাকসাম জংশনে অপেক্ষমাণ ট্রেন থেকে যুবক-যুবতী ও যাত্রীদের ছিনিয়ে এনে এই হত্যাপুরীতে বর্বর খান সেনারা বিনষ্ট করেছে অগণিত মা, বোনের ইজ্জত, বধ করেছে হাজার হাজার প্রাণ। ট্রেন থেকে মহিলা যাত্রী আর গ্রাম থেকে পল্লীবালা ও কুলবধূদেরকে ছিনিয়ে এনে ওদের উলঙ্গ করে কারখানার ছাদের উপরে উঠিয়ে দু’হাত উপরে তুলে সারাদিন ভর রেলিংবিহীন ছাদের উপরে হাঁটতে বাধ্য করা হতো কারখানার অনতিদূরে যাত্রীবাহী ট্রেন থামিয়ে যাত্রীদের ঐ ছাদের উপর দৃষ্টিপাত করতে নির্দেম দেয়া হতো। এমনিভাবে সারাদিনভর ধৃত মা-বোনদের বেইজ্জত করে রাতে কারখানার বিভিন্ন কোঠায় নিয়ে মেজর গার্দিজি ও তার দোসররা মা-বোনদের উপর চালাতো পাশবিক অত্যাচার। নিজেরা তো মদ পান করতো, নারীদেরও মদপানে বাধ্য করা হতো। চাবুকে আর চাবুকে এবং পাশবিক অত্যাচারে জর্জরিত হয়ে রাত্রির গভীরতা ভেঙ্গে প্রায়ই ভেসে আসতে মা-বোনদের বুকফাটা করুণ আর্তনাদ। কিন্তু মদ্যপায়ী নরপশুদের অট্টহাসিতে সবকিছু চাপা পড়ে যেত। অনেক অনেক মা-বোনকে বলাৎকার স্থলেই মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে আর যারা নামে মাত্র বেঁচে থাকত তাদের সংজ্ঞাহীন দেহ রাতের আঁধারে সে কারখানার বিভিন্ন কোনায় পুঁতে ফেলা হতো। বিগত ১লা ফেব্রুয়ারী সে কারখানায় প্রহরারত মিত্রবাহিনীর অনুমতি নিয়ে লাকসামের এম, সি এ জনাব আব্দুল আউয়াল ও থানার সেকেণ্ড অফিসার এবং জনকয়েক ভুক্তবোগী ও প্রত্যক্ষদশী সহকারে কারখানাটি দেখতে গিয়েছিলাম। পশ্চিম কারখানাটিতে ঢুকতেই ভেসে এল পচা গন্ধ হয়তো রক্ত পচা গন্ধই হবে। এ কারখানার যেখানেই যে কক্ষে ঘুরেছি সর্বত্রই অনুভব করতে পেরেছি রক্তের চাপ সে রক্তে দুর্গন্ধের আবাস। ভিতরে ঢুকতেই সামনেই দেখতে পেলাম দুটি জীবন্ত পেয়ারা গাছ এবং সদ্য মৃত একটি কাঁঠাল গাছ। গাছ তিনটির প্রত্যেকের ডালে দেখলাম এখনো ঝুলে রয়েছে হত্যার প্রতীক কয়েকটি রশি। জনৈক প্রত্যক্ষদশী জানালেন এ গাছ তিনটিতে যে সমস্ত রশি এখনো ঝুলে রয়েছে সে সমস্ত রশিতে অসংখ্য নারী পুরুষকে ঝুলিয়ে রেখে চাবুকের প্রহারে নিস্তেজ করা হতো। তারপর সে সমন্ত সজ্ঞাহীন দেহ গুড় মেখে একটি চিলে কোঠায় ফেলে রাখা হতো। বলা বাহুল্য, সেই চিলে কোঠায় পূর্বাহ্নেই লুট করা খেজুরের গুড় বা মিষ্টি দ্রব্য