পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৪৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8〉と。 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড টহল দিয়ে এরা শহরের বিভিন্ন রাস্তায় কাউকে বেয়নেট কাউকে গুলী করে মারে। সেদিন চাঁদপুর কলেজের জনৈক ছাত্রসহ ৫ জনকে খুন করে। ১০ই এপ্রিল থেকে শুরু হয় এদের কারিফিউ-এর পালা। কারফিউ-এর সঠিক সময়সীমা এরা জনসাধারণের কাছে গোপন রাখত। আর এ সুযোগে তাদের স্বয়ংক্রিয় রাইফেলগুলো সক্রিয় হয়ে নিধনযজ্ঞে মেতে উঠত। সে দিনই কারা ডিনামাইট দিয়ে শহরের কয়েকটি এলাকার ঘর উড়িয়ে দেয়। শুধু তারাই নয়- কুখ্যাত আল বদর, আল শামস, রাজাকার ও দালাল কমিটির সদস্যদের অকথ্য নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে শান্তিপ্রিয় জনসাধারণ। এরা কাউকে শান্তিতে থাকতে দেয়নি। জুলুম আর অত্যাচারই ছিল এদের প্রধান ধর্ম। এরাই অধিকাংশ সম্পদ লুণ্ঠন করেছ। লুণ্ঠন করেছ শহরের হিন্দু অধুষিত এলাকার ঘরগুলো। দালান থেকে দরজা জানালা খুলে নিয়েছে। শুধু রেখে গেছে বিটে মাটিটুকু। এদের ইঙ্গিতেই প্রাণ হারিয়েছে দশ হাজার নিরীহ লোক। মেঘনা তীরবর্তী চাঁদপুর রেলওয়ে ষ্টেশন এলাকা ছিল খুনীদের কসাইখানা। একবার কাউকে সেখানে নিয়ে গেলে আর কোনদিন খোঁজ পাওয়া যেত না। এ এলাকা ছিল চাদপুরবাসীর আতংকের স্থান। প্রয়োজনেও কেউ সেই এলাকায় যেতে সাহস পেত না। জনৈক প্রত্যক্ষদশী আমাকে বলেন, ওরা নিমর্মভাবে চাবুক দিয়ে পিটিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে সিগারেটের আগুন লাগিয়ে দিত, পরে হাত-পা বেঁধে ওয়াগনের মধ্যে দু’চার দিন আবদ্ধ করে রাখত। এরপরেও যদি প্রাণ না যেত তাহলে ফেলে দিত নদীতে। এ ছাড়া পানিতে দাঁড় করিয়েও গুলী করা হত। এমনি সুপরিকল্পিতভাবে হত্যালীলা চালিয়ে কমপক্ষে দু'হাজার লোককে নিমর্মভাবে হত্যা করা হয়। সেইখানে হানাদার বাহিনীর এরুপ অসংখ্য বর্বরোচিত ঘটনার নীরব সাক্ষী হয়ে রয়েছে চাঁদপুর রেলওয়ে ষ্টেশন।