পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৪৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ՀՀ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড “অরা ছবাইকে গুলি করে মেরেছে” দৈনিক বাংলা ১০ ফেব্রুয়ারী, ১৯৭২ ৷ মোঃ কামরুজ্জামান প্রদত্ত ॥ ঢাকা ঘোড়দৌড় ময়দানের দক্ষিণ প্রান্তে কালী বাড়ীর ধ্বংসস্তুপে দাঁড়িয়ে সেদিন আমাকে শুনতে হয়েছিল তাদের কথা। লালমোহন মালী-হামি তখন পালাইয়া গেছি। অরা ছবাইকে গুলি করে মেরেছ। নন্দনের গায়ে পাঁচটি গুলি লেগেছে। রাম প্রসাদ-হামার পোলাভি মারা গেছে। এখন শুধু তিনটি মাইয়া আচে, সাদিবি হয়নি। সোভা রাণী মজুমদার-ছার-হামারভি ছেলে মারা গেছে। সোনিয়া-হামার ছামী, এক পোলা, দুই মাইয়া মারা গেছে। এক পোলা কোলে আছে। পুরান দাস-হামার ছেলে মারা গেছে। বেচন-হামার ভগনা সুরুজ ভল্লী মারা গেছে ও যেদিন মারা গেছে ছেদিন তার মাইয়া পার্বতীর জনম বৃদ্ধা-নন্দুর পোলা মারা গেছে। সকলের কণ্ঠে-ছামীভি মারা গেছে ছাব। আরো অনেক, অনেকের কণ্ঠে শুনছিলাম আমি সেদিন কালীবাড়ীর ধ্বংসস্তুপের উপর দাঁড়িয়ে-লিলিয়া, বেগনিয়া, লক্ষী রাণী, পুরান দাস, আর শোভা রাণীর মত আপন জনদের হারিয়ে যাওয়ার বেদনামিশ্রিত কথা। কিন্তু আমি অপারগ। তাদের সকলের নাম আর কথা সেদিন লিখে রাখতে পারিনি। সবার তো একই কথা-কারো ছেলে, করো স্বামী, কারো বা মেয়ে, আবার অনেকেই স্বামী, পুত্র, সবাইকে হারিয়েছে। তারা তাদের আপন জনকে হারিয়েছে নরপিশাচ পাক জল্লাদদের হাতে। ২৪শে মার্চের কাল রাতে হানাদার বাহিনী ধ্বংস অভিযান ঢাকা শহরের সর্বত্র শুরু করে। তাদের তাণ্ডবলীলা থেকে প্রাচীন মন্দিরও রেহাই পায়নি। রমনার কালীবাড়ীর মন্দিরটি হানাদাররা ২৭শে মার্চের রাতে ট্যাঙ্কের সাহায্যে ধ্বংস করে দেয়। মন্দিরসহ পুরা কালীবাড়ী আজ রমনার মাঠ থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এর সাথে কালীবাড়ীতে আশ্রিত মোট ৫০ জনের প্রাণনাশ করেছে জল্লাদ সেনারা। আমি সেদিন রমনার কোরবানির হাটে ছবি আনতে গিয়েছিলাম। কিন্তু হাটের ছবি আর আনতে পারিনি, এনেছি তাদের ছবি যারা হারিয়েছে তাদের আপনজনকে। মালীকে কথা বলতে দেখে মনে করেছিলাম-আমি হয়তো রিলিফ সম্পর্কে তাদের নাম ঠিকানা লিখছি। তাই ইত্যাদি। রমনা কালীবাড়ীতে মোট ৭০০ নারী পুরুষের বাসস্থান ছিল। তাদের মধ্যে স্বামীজী-প্রেমানন্দগিরিসহ