পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৪৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ՋՆ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ বগুড়ায় পাক বাহিনীর হত্যাকাণ্ডের ওপর দুটি সং ২ ও ২০ ফেব্রুয়ারী, ১৯৭২ প্রতিবেদন প্রতিদিন বধ্যভূমি থেকে ভেসে আসতো মানুষের মরণ চীৎকার সাধুবাবা আতঙ্কে বিহবল হয়ে তা-ই শনতেন ---আজ থেকে প্রায় সত্তর-আশি বছর আগের কথা। আমাদের গুরু এসে আস্তানা পেতেছিল বগুড়া জেলার বাগাবান কাবরার একটি বটগাছের ছায়ায়। বগুড়া শহর বলতে তখন কিছুই গড়ে ওঠেনি। একটা টিনের ঘরে থানা এবং ফুলবাড়ীর রমজান মণ্ডলের একটি কাঠের কারখানা বোধহয় ছিল। আজকের সাত-মাথা তখন ছিল গাছপালা আর জঙ্গলে ভরা। আমাদের গুরু আনন্দ গোস্বামী এবং ভেরেণ্ডা গোস্বামী এই পৃথিবী ছেড়ে অনেক পূর্বেই বিদায় নিয়েছেন কিন্তু সেদিন এক সঙ্গে চলে গেল আমার দিন ভাই। হাত বেঁধে বগুড়ার সেউজাগড়ীর আনন্দ আশ্রমে সকাল বেলা বসে বসে এই সাধুবাবা সব ঘটনা বলছিলেন। হানাদার পাক বাহিনী বগড়া দখল কারা পরও আশ্রমে চারজন সাধু ও তিন জন মাতা ছিলেন। হানাদার বাহিনী তিনজন সাধুকে বগুড়া রেলষ্টেশনের পশ্চিম দিকে ডিগ্রি কলেজ সড়কের পার্শ্বে গুলী করে হত্যা করে। এদের ভিতর ছিলেন সুন্দর সাধু, মঙ্গল সাধু এবং স্থানীয় বাদুরতলার একজন বৃদ্ধ মুনেন্দ্রনাথ সরকার। তিনজনই ছিলেন বগুড়ার প্রাক্তন অধিবাসী। এই তিন সাধু-বলতে বলতে কেদে ফেললেন সাধুবাবা। বগুড়া অতীত ইতিহাসকে বুকে নিয়ে এই সাধু বাবা আজও বেঁচে আছেন। বগুড়ায় এমন লোক কমই আছেন যারা এই সাধুবাবাকে চেনে না। পাক দস্যদের জঘন্য নৃশংসতার পরও আজ সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে আছেন এই সাধুবাবা। যুগোল কিশোর গোস্বামীকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি বাঁচলেন কেমন করে? হেসে তিনি বললেন,” ওরা আমাকে কেন যে হত্যা করেনি তা আমি বলতে পারব না। আমার তিন ভাই তখন খেতে বসেছিল। হঠাৎ সেই মুহুর্তেই বাড়ীর ভিতরে ঢুকলো কয়েকজন অবাঙ্গালী৷ ওরা আমার ভাইদের খেতে দেয়নি। এসেই ভাইদের হাত বেঁধে ফেললো। ওদের নিয়ে যাওয়ার সময় আমি বললাম, আমাকে মার, ওদের নিয়ে যেয়ো না। বৃদ্ধ বলেই বোধহয় আমাকে ওদের সঙ্গে নেয়নি। কিন্তু আমার ভাইয়েরা আর ফিরে আসেনি। একদিনকে ধাঙ্গড় এসে আমাকে জানালো, পাক সেনারা রাস্তার ধারের গর্তে আমার ভাইদের পুঁতে রেখেছে।” সাধুবাবাকে জিজ্ঞাসা করলাম আপনারা সবাই আগে পালালেন না কেন? সাধুবাবা প্রত্যুত্তরে বললেন, সে অনেক কথা বাবু। প্রায় সকলেই কখন শহর ছেড়ে চলে যান। ভক্তরা এসে আমাদের অনেক অনুরোধ করেছে। কিন্তু সংঘের সাধুর মাতারা নিষেধ করেছিল। আমরা কারো অন্যায় করিনি। ওরা নিষ্ঠুর ওরা কাল, ওরা অনেক অন্যায় করেছেকথা বলতে বলতি মিষ্টভাষী সাধুবাবার মুখ-চোখ লাল হয়ে উঠছিল। সাধুবাবা বললেন, ওরা আমাকেও ছাড়েনি।’ মাঝে মাঝেই পাক সেনারা আশ্রমে অন্যায়ভাবে প্রবেশ করতো। আমার সামনে বন্দুক ধরে বলতো, টাকা কাঁহা-টাকা দোঁ-ওরা আমার পাঁচশত টাকা আগেই নিয়ে গেছে, কিন্তু তারপরেও আসতো টাকার খেজে। এই দেখুন আমার পিঠে রড দিয়ে অনেক মেরেছে। সবসময় ওরা আমাকে ছোরার ভয়ে কাবু রেখেছে। একদিন ওরা আমাকে মন্দিরের সামনে দাঁড় করিয়ে বললো, কুয়া কাহা হায়? আমি ভেবেছিলাম ওরা এবার আমাকে মেরেফেলবে। ওরা আমাকে বললো, বুডডা তুম কালেমা পড়। এরপর হঠাৎ জানিনা ওদের কি মনে হওয়াতে আমাকে ছেড়ে দিল। আমি বেঁচে আছি, কিন্তু ওরা আমাকে যেমন অত্যাচার করেছে, তাতে বেঁচে থাকাটাই আশ্চর্য। জানতে চাইলাম, নয়টি মাস আপনার ও মাতাদের খাবার সংগ্রহ করলেন কোথেকে? তিনি বললেন অনেক কষ্ট করেছি। ভিক্ষেও করেছি। পাশের গ্রামে গিয়েছি।