পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৪৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

85ం বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ খুলনার নরমেধযজ্ঞ দৈনিক বাংলা ১২ ফেব্রুয়ারী, ১৯৭২ ৷ নিজস্ব প্রতিনিধি প্রেরিত ॥ খুলনা: খুলনা শহরের হেলিপোর্টে ও ফরেষ্ট ঘাটে বাঙ্গালীদের যে নৃশংভাবে হত্যা করা হতো, তা দেখে খুলনার তৎকালীন জেলা জজ হার্টফেল করে মারা যান। বর্তমানে হেলিপোর্ট ফরেষ্ট ঘাটের কথা বলা যাক। হেলিপোর্ট জজকোর্টের সামনে এবং সার্কিট হাউস সংলগ্ন। যেসব বাঙ্গালীদের উপর তাদের অত্যাধিক রাগ ছিল জল্লাদরা তাদের প্রকাশ্য দিবালোকে হেলিপোটের প্রবেশ পথে ছাগল ঝোলা করে পা উপরে মাথা নীচে দিয়ে ঝুলিয়ে রাখতো। আর ঐ অবস্থায় চলতো অত্যাচার-চড় ঘুষি ও চাবুকের আঘাত। কোন কোন ক্ষেত্রে ঐ অবস্থার উপর বেয়োনেট দিয়ে খোঁচানো হতো । যতক্ষণ না সে মারা যায় ততক্ষণ চলতো এই নির্যাতন । যার কাছ থেকে কোন স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করা হতো ঐভাবে অত্যাচার করার পর অজ্ঞান হয়ে পড়লে তাকে নামানো হতো, জ্ঞান ফিরলে আবার ঝোলানো হতো পূবর্বৎ একদিন আমার নিজের দেখা একটি মৃত্যুর কথা উল্লেখ করছি। সকাল ১০টা হবে। হেলিপোর্টে লুঙ্গি ও গেঞ্জ পরা দীর্ঘ সবলদেহী একজন বাঙ্গালীর পায়ে, হাঁটুতে ও অন্যান্য গিরায় কাঠের রোলার দিয়ে দু’জন সেনা পিটাচ্ছে আর দু’জন সেনা তা উপভোগ করছে। যার উপর অত্যাচার চলছে তিনি বার বার বাধা দিচ্ছেন আর যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। তারপর তার দু’পায়ে দাড়ি বেঁধে পা উপরে মাথা নীচে দিয়ে ঝুলানো হলো। পরনে থাকলো জাঙ্গিয়া ও গায়ে গেঞ্জী। পরে খালি গা করে গেঞ্জীটিও অপসারণ করা হলো। আর চললো চাবুকের বাড়ি। প্রতিটি বাড়ির সাথে সাথে তার দেহটি মুচড়ে উঠতে লাগলো। ঐ ঝুলন্ত অবস্থাতেই তিনি হাত দিয়ে বাধা দিচ্ছেলেন। কিন্তু পরে আর তার হাতে সে জোর রইল না। কিন্তু চাবুকের বাড়ি চললো অব্যাহতভাবে। আর এইভাবেই সমাপ্তি হলো একটি বাঙ্গালী জীবন। পরে তার সেই ঠাণ্ড শীতল দেহটাকে নামিয়ে অবজ্ঞায় তারা দূরে ফেলে দিল-আবার অপর একজনকে। আমি সরে পড়লাম। রাতের বেলায় জজকোর্টের পিছনে ফরেষ্ট ঘাটে বাঙ্গালীদের এনে জবাই করে হত্যা করা হতো এবং দেহগুলোর পেট চিরে নদীতে ফেলা হতো। ঘাটটি আবার জজ সাহেবের বাসার ঠিক পেছনেই। রাতের নিস্তব্ধতা ভেদ করে সেইসব মৃত্যুপথযাত্রী বাঙ্গালীদের করুণ আর্তনাদ জজ সাহেবের কানে পৌছতো দিনে হেলিপোর্টে ও রাতে ফরেষ্ট ঘাটের এইসব হত্যাযজ্ঞ সহ্য করতে না পেরে জজ সাহেব তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সামরিক অফিসারকে অনুেরোধ করেছিলেন যে বিচারালয়ের সামনে যেন এ ধরনের কাজ না করা হয়। তার উত্তরে তিনি পেয়েছিলেন মৃত্যুর শাসনি। কিন্তু তাদের সাধ মেটেনি। তিনি হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে একরাতে মারা গেলেন। আর একটি বধ্যভূমি চিল গল্লামারী। খুলনা শহরের কেন্দ্রস্থল থেকে মাত্র দেড় মাইল। হেলিপোর্ট ও বাহিনীর গল্লামারকেই তাদের নৃশংসতার উপযুক্ত স্থান বলে বেছে নিয়েছিল। সারাদিন ধরে শহরে ও গ্রাম থেকে বাঙ্গালীদের ধরে এনে জেলকানা হেলিপোর্ট ও ইউ, এফ, ডি ক্লাবে জমায়েত করা হত। তারপর মধ্য রাত হলে সেই সব হতভাগ্য নিরীহ নিরস্ত্র বাঙ্গালীদের পেছনে হাত বেঁধে