পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Σ. δ. বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড নাহি করেগা উপর যেতনা লাশ হয়, নীচে লে আও।” আমরা চারজন তাদের নির্দেশ মত উপর থেকে সদস্য গুলিবিদ্ধ ক্ষতবিক্ষত শহীদদের লাশ নীচে নিয়ে আসলাম। বীর শহীদদের সব লাশ আমরা শহীদ মিনারের গর্তের সামনে নিয়ে এসে দেখলাম - পাক সেনারা সশস্ত্রভাবে সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। লাশগুলি ওরা গর্তের মধ্যে ফেলে মাটি চাপা দিল। হত্যাযজ্ঞ শেষে আরেকদল সৈন্য উপরে গিয়ে আবার তল্লাশি চালিয়ে ফিরে আসলো-আমাদের চারজনকে লাইন করে দাঁড়াবার নির্দেশ দিল- আমরা দাঁড়িয়ে গেলাম লাইন করে, এরপর আমাদের উপর ওরা গলিবর্ষণ করতে লাগলো। আমাদের উপর গুলির শব্দ হওয়া মাত্র আমি মৃত ভান করে পড়ে গেলাম। বীর শহীদদের এই লাশের মধ্যে পড়ে থেকে দেখলাম- পাক সৈন্যরা আর্মি ট্রাক নিয়ে সদলবলে চলে গেল। চারদিকে চেয়ে দেখে যখন নিশ্চিন্ত হলাম তারা আর নাই- তখন সেই লাশের মধ্য হতে উঠে এক দৌড়ে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চলে এসেছি। আমি বাড়ীতে এসে দেখলাম শাঁখারী বাজারে থমথমে ভাব- শাঁখারী বাজারের হিন্দু অধিবাসীগণ মনে করেছিল আর কোন হত্যাকাণ্ড হবে না। পাক পশুরা সাধারণ নাগরিকদের উপর পাইকারীভাবে হত্যাকাণ্ড চালাবে না। আমরা আমাদের এলাকায় ২৭শে ও ২৮শে মার্চ দিনের বেলায় রাস্তায় কোন পাক সেনা দেখি নাই। কিন্তু কাৰ্য আরম্ভ হওয়ার সাথে সাথে পাক সেনারা ঘরে ঘরে প্রবেশ করে হত্যাকাণ্ড চালায় এবং বাড়ীঘরে অগ্নিসংযোগ করে। আমরা কয়েকদিন ছাদের উপর বসে থেকে ঢাকার চারদিকে শুধু গুলিবর্ষণের শব্দ শুনেছি এবং অগ্নিসংযোগ দেখেছি। চারদিকে শুধু আগুনের লেলিহান শিখা এবং গুলিবর্ষনের শব্দ শুনেছি। ১৯৭১ সনের ২৮শে মার্চ গুজব ছড়িয়ে পড়ে ঢাকার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিহারী জনতা হিন্দু মহল্লা হামলা করার জন্য এগিয়ে আসছে। এ সংবাদ পাওয়ামাত্র আমরা তাঁতীবাজার থেকে সকল হিন্দু পরিবার দলে দলে একযোগে বুড়িগঙ্গা নদী পার হয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের উদ্দেশ্যে পল্লী এলাকায় চলে যাই। আমরা কেউ কারও যুবতী, নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ-যুবা, সবাই শূন্য হাতে পালিয়েছে। নদীর অপর পার থেকে আমরা সংবাদ পেয়েছি যে, ঢাকার জিন্দাবাহার মালিটোলা, বাবুবাজার এলাকায় ব্যাপক লুটতরাজ আরম্ভ হয়েছে। মূল্যবান জিনিসপত্র, সোনাদানা, তামা-কাঁসা, পিতল, কাপড়-চোপড়, খান, চকি, দরজা, জানালা সব কিছু তারা লুট করে নিয়ে গেছে। লুট হওয়ার পরক্ষণেই সশস্ত্র বিহারীরা একযোগে এস শাকারীবাজার, তাঁতীবাজার, সুতারনগর, গোপালনগরের সমস্ত হিন্দু বাড়ী দখল করে বসেছে। আমরা নয় মাস নদীর অপর পাড়ে বাঘৈর গ্রামে নিদারুণ দুরাবস্থায় অর্ধাহার অনাহারে কাটিয়েছি। স্বাক্ষর/শ্রী পূর্ণচন্দ্র বসাক ২৯শে বৈশাখ, ১৩৭৮