পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৪৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ՖԳ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ “জল্লাদেরা আছড়েও মানুষ মেরেছে।” দৈনিক বাংলা ১৫ ফেব্রুয়ারী, ১৯৭২ ৷ বিশেষ প্রতিনিধি প্রেরিত ॥ গাইবান্ধাঃ “বাবা, মা নেই। কাকা খোঁড়া চলতে পারেন না। জ্যাঠা পাগল। বোন বিধবা। বচ্চাও আছে একটি। মোট ১০ জনের পরিবার। আমি এদের নিয়ে কি করব বলতে পারেন?” অটো প্রমোশনে প্রদীপ এখন নবম শ্রেণীর ছাত্র। কিন্তু বেতন দেবে কোথেকে। “না। কোথাও যাইনি। যাদের উপার্জনে সংসারের চাকাটা ঘুরতো খান সেনারা তাদের একদিন ধরে নিয়ে গেল। ধরে নিয়ে গেল, চলতি বাংলা সনের জৈষ্ঠ মাসের ১৭ তারিখে। নিয়ে গেল আমার ভগ্নিপতি আমল লাল চাকী এবং পরিবারের অপর তিনজন ননী গোপাল দেব, নিরোদ বিহারী দেব, আর নিরঞ্জন দেবকে। ওরা তো আর ফিরে আসেনি।” হয়ত হেলাল পার্কের বধ্যভূমিতে তাদেরও হত্যা করা হয়েছে। তারপর পলিয়ে পালিয়ে বেড়িয়েছি। আজ এ গ্রাম কাল সে গ্রাম এমনি করে। বাড়ী লুট হয়েছে। কিছু নেই। স্কুলের বেতন দেবে তেমন কিছুও আর অবশিষ্ট নেই। প্রদীপের বোনের বিয়ে হয়েছে মাত্র দু’বছর। এখন বয়স বড়জোর আঠারো উনিশ, সে এখন অর্ধ উন্মাদিনী। “সরাকারের দয়ায় মানুষের সহায়তায় হয়ত একদিন আবার আমরা দাঁড়াতে চলতে পারবো, কিন্তু আমার বোনের স্বামীকে ফিরিয়ে দেবে কে? ছোট ভাগ্নে যখন বড় হয়ে জিজ্ঞেস করবে মামা আমার বাবা কোথায় তখন আমি তাকে কি করে বোঝাবো? কোথেকে এনে দেব তার বাবাবে? “নাম রাখা সার্থক হেয়ছে। প্রদীপ পড়তে চায়। পড়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই। যে করেই হোক তাকে পড়তেই হবে। অশিক্ষিত ছেলেকে চাকুরী দেবে না কেউ। সামান্য কিছু জমি আছে তার। গাইবান্ধা এমারজেন্সী ফোর্স-এ কর্মরত সুবেদার আবদুর রাজ্জাক। তিনি খান সেনাদের বিচারের মহড়া দেখেছেন। একাত্তরের মে মাসের মাঝামাঝি। রান্নার খড়িতে ঘাটতি পড়েছে। মেজর আফজাল ডেকে পাঠাল।জালানী কাঠের ব্যবস্থা করতে হবে। গেলেন রাজ্জাক সাহেব। তার তখন ৮টা। রাজ্জাক সাহেব বললেন, সুবেদারের নাম এখন মনে নেই। সে মেজর আফজালের ঘর থেকে দুজন লোককে বের করে নিয়ে এল। সুবেদারকে সুধোলাম, কেয়া ভাইয়া ইন দোনোকা বিচার হো গিয়া। খান সুবেদার জবাব, তোমহারে সামনে হোগা দেখো। ওদের দুজনকে মাঠে খাড়া করলো। সিপাইকে হুকুম দিল, ইন লোগকো খরচা কর দো। লোক দু’টোকে পিছন ফিরতে ও চোখ বন্ধ করতে বলা হলো। তারপর এক, দুই, তিন, চার। পরপর চারটে গুলি। কাটা মুরগীর মতো ছটফট করতে করতে ওরা মরে গেল। তারপর তাদের কফিল শাহর গুদামের মাঠে যেখানে রয়েছে আরো শত শত মানুষের সমাধি সেখানে গর্তে ফেলে মাটি দেয় হলো। হেলাল পার্কে এবং এখানে যাদের হত্যা করা হয়েছে এই প্রাঙ্গণেই তারা শুয়ে আছে। শুয়ে আছে দশ, বিশ জনে গাদাগাদি হয়ে। আমার যে বোনের সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে পড়ে রয়েছে তাদের পরনের শাড়ীর ছিন্ন অংশ। মাথার চুল। চোখে বাঁধা রয়েছে তার রুমাল। গুদামের কক্ষগুলোতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ইট। তাতে রক্তের দাগ। অনেককে গুলি খরচ না করে ইটের উপর আছড়ে মারা হয়েছে। চিৎকার করতো বলে আর আশপাশের