পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৪৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88S বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড নওগাঁয় পাকিস্তানীদের হত্যাযজ্ঞের পূর্বদেশ ১৫ ফেব্রুয়ারী, ১৯৭২ আরেক অধ্যায় নওগাঁয় পাকিস্তানীদের হত্যাযজ্ঞের আরেক অধ্যায়ঃ কৃপে পানি নেই আছে শুধু গলিত লাশ পূর্বদেশ প্রতিনিধি ॥ যে কেউ নওগাঁ শহরে ঢুকলেই দেখতে পাবেন শহরের মধ্যবর্তী যমুনা নদীর যমুনা ওপর নির্মিত পুরানো অথচ অতি সুন্দর সেতুটির পাশেই বিধ্বস্ত তাজ সিনেমা হলটি। এর দক্ষিণে দেখা যাবে অসংখ্য বাঙ্গালী বিকৃত মৃতদেহ স্তুপাকৃত অবস্থায় পড়ে আছে। এরই আর মাত্র সমান্য দূরে একটি পুরানো পাকা কূপ। সুস্বাদু পানীয় জলের এবং অন্যান্য কাজে ব্যবহারের জন্য কুপটি এলাকার মানুষের প্রভূত উপকারে আসতো। আর এক্ষণে এই কূপটির তিন হাত নীচে থেকে শেষ পর্যন্ত কেবল গলিত ও বিকৃত লাশ আর লাশই দেখা যাচ্ছে। একদা সুপেয় ছিল যার পানি সেখানে পনির চিহ্ন মাত্রও আর নেই। শবদেহ রক্তের ধারার সাথে মিশে একাকার হয়ে গেছে। আর একটু এগিয়ে গেলেই দেখা যাবে দুটি বড় ঢেউ টিনের ঘর। ঘরের ভেতর ঝুলে আছে বহু দড়ি। নীচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে জুতো, জামা, প্যান্ট ও অন্যান্য পোশাক পরিচ্ছেদ। এক নজরেই মনে হবে, এগুলো এক বা একধিক লোকের নয়, শত শত মানুষের ব্যবহৃত কাপড়। আর মেঝেতে চাপ চাপ রক্ত এবং সে রক্তের বিস্তৃতি কৃপ পর্যন্ত লক্ষ্য করা যায়। কপটির ভেতরে প্রথমেই যে মৃত দেহটি চোখে পড়ে তা কোন উচ্চপদস্থ লোকের বলেই মনে হয়। এরই চারপাশে দেখা যায় বহু নিহত ব্যাক্তির মাথা মাত্র। শরীরগুলো নীচের বহু লাশের ভেতর অন্তৰ্হিত বলেই মনে হয়। সনাক্ত করার কোনই উপায় নেই। এবার তাজ সিনেমার নিকটবর্তী পুরোনো পশু হাসপাতালটি অতিক্রম করে উত্তর দিকে কিছুদূর গেলেই দেখা যাবে বাঁয়ে ছোট্ট একটি মসজিদ। তার পাশেই রয়েছে দালান বাড়ীটি বসাবাস করত তথাকথিত কামিজ বিহারী ব্যবসায়ী। নাম ইদ্রীস। প্রতি বৎসর খাজা মঈনউদ্দীন চিশতীর মৃত্যু বার্ষিকী পালনের নাম করে তিনদিন ধরে ওরস হতো এই বিহারীর বাড়ীতে। কিন্তু তার বাসার ভেতরে যেতেই যে কেউ চমকে উঠবেন। দেখতে পাবেন দুই ঘরের ভেতরে নির্মম হত্যার প্রমাণ চিহ্ন। একটি ঘরে অনেক দড়ি ঝুলে আছে। আর অপরটিতে রয়েছে অসংখ্য বাঙ্গালীর রক্তের ছাপ। নরপশুরা বাঙ্গালীর রক্তে জানালা, দেওয়ালে সর্বত্র রক্ত ছড়িয়ে আছে, সর্বত্র ঘরের দেওয়ালে এবং চতুপাশ্বে। জানা গেছে, উক্ত বিহারী ব্যবসায়ী খানসেনাদের সহযোগিতায় যেসব বাঙ্গালীকে ধরে এনে জবাই করতো তাদের রক্তে তার