পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՀԾ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড ll Go || আবদুল কুদ্দুস মিয়া রিজার্ভ ইন্সপেক্টর অব পুলিশ বি, আর পি, হেড কোয়ার্টার, রাজারবাগ, ঢাকা ১৯৭১ সনের ১৫ই মে থেকে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে পশ্চিম পাকিস্তানী পুলিশের জমায়েত করা হয়। পাঞ্জবী পুলিশ লাইনে এসেই আমাদের সাথে যথেচ্ছা ব্যবহার আরম্ভ করে দেয়; কথায় কথায় পশ্চিম পাকিস্তানী পুলিশরা আমাদের বুটের লাথি ও বন্দুকের বাট দিয়ে পিটাতে থাকে, চোখ রাঙ্গিয়ে বলতে থাকে ‘শুয়ারকা বাচ্চা, হিন্দুকা লাড়কা, বেইমান শালা লোগ, হামলোগ আদমী নাহি মাংতা, জামিন মাংতা”। আমাদেরকে হেডকোয়ার্টারের সকল কক্ষ থেকে কুকুর বিড়ালের মতো তাড়িয়ে দিয়ে সেখানে পশ্চিম পাকিস্তানী পুলিশদের জায়গা দেওযা হয়, আমাদের পোষাক পরিচ্ছদ, কাপড় আসবাবপত্র সব বাইরে ফেলে দেওয়া হয়, আমরা অসহায়ের মত আমাদের আসবাব পত্র তুলে নিয়ে আসতাবলের সামনে, ব্যারাকের বারান্দায় আশ্রয় গ্রহণ করি। পশ্চিম পাকিস্তানী পুলিশ রাজারবাগ আসার পরই বাঙ্গালীদের উপর নির্মম অত্যাচার নেমে আসে। প্রতিদিন “ইয়ে শালা লোগ মুক্তি হায়” বলে বহু নিরীহ বাঙ্গালী যুবককে চোখ বেঁধে মিলিটারী ট্রাক ও জীপ থেকে আমাদের চোখের সামনে নামিয়ে হেডকোয়ার্টার বিল্ডিংয়ের উপর তলায় নিয়ে রাখা হয়। সারাদিন এভাবে চোখ বেঁধে বাঙ্গালী যুবকদের রাজারবাগ এনে জমায়েত করা হয় এবং সন্ধ্যার পর এ সব অসংখ্য বাঙ্গালী যুবককে মিলিটারী ট্রাকে করে ঢাকা সেনা নিবাসে নিয়ে হত্যা করা হয়। হেডকোয়ার্টারের তেতলা ও চারতলায় বহু যুবতী মেয়েকে উলঙ্গ করে রাখা হয়-পাঞ্জাবী সেনা ও পশ্চিম পাকিস্তানী পুলিশ এসব ধরে আনা বালিকা ও মহিলাদের উপর অবিরাম ধর্ষণ চালায়। লাইনে পুলিশের কলরবের জন্য আমারা অত্যাচারিত মেয়েদের ক্ৰন্দন রোল শুনতে পেতাম না- লাইনের দূরে গিয়ে দাঁড়ালেই ধর্ষিতা মেয়েদের আর্তনাদ ও আহজারি শুনতে পেতাম-রাতে ধর্ষিতা মেয়েদের বুকফাটা চিৎকারে আমরা ভেসে আসা ধর্ষিতা মেয়েদের আর্তনাদে আমরা বাঙ্গালী মেয়েদের দুর্দশা দেখে দুঃখে, ক্ষোভে, বেদনায় দিশাহারা হয়ে পড়েছিলাম। আমরা ঐ সকল অসহায় মেয়েদের উদ্ধার করার জন্য কিছুই করি নাই, করতে পারি নাই, কারণ ওদেরকে উদ্ধার করার জন্য, ওদের অত্যাচারের সহানুভূতি ও দরদ দেখানোর কোন সুযোগ আমাদের ছিল না। হেডকোয়ার্টারের তেতলা ও চারতলায় যেখানে বাঙ্গালী মেয়েদের উলঙ্গ অবস্থায় ঝুলিয়ে রেখে ধর্ষণ করা হতো সেখানে সব সময় পাঞ্জাবী সৈন্যরা প্রহরায় মোতায়েন থাকতো। সেখানে আমাদের প্রবেশ করার অনুমতি ছিল না। মিঃ বোস্তান খাঁ নামে এক পাঞ্জাবী ভদ্রলোক এ সময় রাজারবাগ পুলিশ লাইনের রিজার্ভ ইন্সপেক্টর ছিলেন। এই ভদ্রলোক আমাদের লাইনের দায়িত্বভার গ্রহন করার পর আমাদের উপর সর্বদিক দিয়ে অত্যাচার ও দমন নীতি আরম্ভ হয়ে যায়। পুলিশ লাইনে কখন আমাদের উপর মৃত্যুর করাল গ্রাস নেমে আসে, আমরা এ ভয়ে সব সময় সন্ত্রস্ত থাকতাম। ১৯৭১ সনের ৪ঠা এপ্রিল রাজারবাগ পুলিশ লাইন থেকে তৎকালীন ষ্টোর-ইন-চার্জ পুলিশ সার্জেন্ট মিঃ মুর্তজা হোসেন এবং সুবেদার আবুল হোসেন খান এবং সুবেদার মোস্তফাকে ঢাকা সেনানিবাসে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পাঞ্জাবী সেনারা এই তিনজন বাঙ্গালী পুলিশকে ওদের ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে নির্মম অত্যাচার চালায়-পঞ্জাবী সেনারা এই তিনজন বাঙ্গালী পুলিশকে ওদের ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে নির্মম অত্যাচার চালায়-পাঞ্জাবী সেনারা লাইন হয়ে ওদেরকে ঘেরাও করে দাঁড়িয়ে ফুটবলের মত বুট দিয়ে লাথি মেরে খেলতে থাকে। ওদের তিন জনের দেহ লাঠি, বেত, বুট ও বেয়নেট দিয়ে গরুর মত পিটিয়ে চুরমার করে দেওয়া হয়, সারা দেহ চাক চাক করে কেটে দেওয়া হয়। ওদের দেহ রক্তাক্ত হয়ে একেবারে অবশ ও অচল হয়ে গেলে তাদের তিনজনকে গুলি করে হত্যা করার নির্দেশ দেওয়া হয়। ওদের ক্ষতবিক্ষত দেহ দেখে যাকে তাদেরকে হত্যা করার নির্দেশ