পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৪৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88(? বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ মরণপুরী ভোলা ওয়াপদা কলোনী পূর্বদেশ ১৭ ফেব্রুয়ারী, ১৯৭২ মরণপুরী ভোলা ওয়াপদা করোনী হাবিবুর রহমান ॥ ভোলায় বর্বর হানাদার বাহিনী নৃশংসতার দ্বিতীয় পর্যায়ের হত্যাকাণ্ডের অধিনায়ক নরপশু ক্যাম্পেন মুনির হোসেন ও সুবেদার সিদিক। এদের গণহত্যা ও জঘন্য পাশবিকতা যে বিভীষিকা ও সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছিল তা অবর্ণনীয়। গত জুন মাসের প্রথম দিকে এই নরপশু আর তার দোসর সুবেদার ভোলাতে আসে। সে এখানে এসে প্রথম অতি স্বাভাবিকতা দেখাতে আরম্ভ করে। মাইক্রোফোনে শান্তি কমিটির মাধ্যমে কেবলই ঘোষণা করতো যে, আপনাদের কোন ভয় নেই। অকুতোভয়ে প্রত্যেকে কাজ কর্ম করে যান। আর হিন্দুদের উদ্দেশ্যে বলা হতো আপনারা গ্রাম ও চরাঞ্চল হতে শহরে প্রত্যেকে নিজ বাড়ী ঘরে ফিরে আসুন প্রেসিডেন্ট আপনাদেরকেও সাধারণ ক্ষমা করেছেন। নির্দেশিত সময়ের মধ্যে ফিরে না এলে অতঃপর বিনা বিচারে গুলি করে হত্যা করা হবে। এ আহবান আর জল্লাদ ইয়াহিয়ার সাধারণ ক্ষমার অন্তরালে ছিল নারী ধর্ষণ, অর্থ সংগ্রহ ও লুটতরাজ এবং নরহত্যার পরিকল্পনা। এ ফাঁদের মাধ্যমেই তাদের ঘৃণ্য কামনা, বাসনা ও উদ্দেশ্য চরিতার্থ করেছিল। প্রথমতঃ যে পরিবারে সুন্দরী মেয়ে ছিল তার অভিভাবককে শান্তি কমিটির পাণ্ডা বা রাজাকার দিয়ে সামরিক বাহিনীর দফতর ওয়াপদা কলোনীতে ডাকা হতো। ডাকার পূর্বেই তার বাড়িঘরের চারদিকের পলায়ন পথে রাজাকার আর দালালরা সাধারণ ভাবে ঘোরাফেরা করত যেনো কোথাও পালিয়ে যেতে না পারে। অতঃপর উপায়ান্তর না দেখে দালালদের সহায়তায় মরণপুরী ওয়াপদা কলোনীতে যেতে হতো। মে তোমহত্যারা লাড়কা গিয়া, আওর মুক্তিবাহিনীকো হামারা খবর পৌছাতা”। এমনি করে দু’এক ঘন্টা আটকিয়ে রেখে দালালদের মাধ্যমে প্রথমতঃ টাকা, তারপর মেয়ে দাবী করত। এদুটির একটিকে পুরণ করতেই হতো। তা না হলে রাতের অন্ধকারে নরপশুদের বেয়নেটের আঘাতে মরতে হতো। এ পরিকলপণার শিকারে যে পড়তো কেবল সেই জানতো। এ হত্যাকাণ্ড ও পাশবিকতার নীরব প্রত্যক্ষদশী ওয়াপদার ইঞ্জিনিয়ার জনাব আবু তাহের ও মনসুর আলী এবং সহকারী ইঞ্জিনিয়ার ওয়াহিদ উদ্দিন। সাহেদ ও আবদুর রব খান। তাঁরা গত ৪ঠা মে হতে চার দেয়ালে ঘেরা ও ওয়াপদা কলোনীর একটি দালানে বলতে গেলে অন্তরীণ অবস্থায় ছিলেন। নিতান্ত প্রয়োজনে বাইরে যেতে হলে অনুমতি নিতে হতো এবং পদলেহী দালালেরা পাশবিকতা ও নরহত্যার কাহিনী এমন কোন ভাষা নেই যে পুরোপুরিভাবে রূপ দেয়া যেতে পারে। আমরা কলোনীর বাইরে বাসা নিয়ে থাকবো এবং সেখান হতে এসে অফিস করার অনুমতি চেয়েছিলাম।