পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৪৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

885, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ অগ্নিদগ্ধ, লুষ্ঠিত ধৰ্ষিত পূর্বদেশ ২৩ ফেব্রুয়ারী, ১৯৭২ অগ্নিদগ্ধ, লুষ্ঠিত ধর্ষিত কাশিয়াবাড়ী । গবিন্দলাল দাস।। অজপাড়া গাঁ হলেও কাশিয়াবাড়ী একেবারে ছোট্ট গাঁ নয়। গাইবান্ধা মহকুমার পলাশবাড়ী থানার এই গাটাতে ছিলো সাতশো গৃহস্থবাড়ী। হিন্দু-মুসলমানের বাসস্থান। মিলেমিশে ছিলো তারা এই গাঁয়ের মাটিতে। এক সম্প্রদায়ের সাথে ছিলো আরেক সম্প্রদায়ের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। পার্শ্ববর্তী গাঁয়ের অবাঙ্গালীরা কত সময় কতবার চেষ্টা করেছে এখানে দাঙ্গা বাঁধাবার কিন্তু কোনবারই তাদের সে চেষ্টা সফল হতে পারেনি। এ গাঁয়ের সাতশো হিন্দু-মুসলিম গৃহস্থ এক পরিবারের ছেলে মেয়ে, ভাই-বোন মা, বাবা। স্বাধীনতা আন্দোলনের এক পর্যায়ে বর্বর পাকবাহিনী অত্যাচারের তান্ডব লীলা চালিয়ে পার্শ্ববর্তী থানা ঘোড়াঘাটে এসে আস্তানা গেড়ে বসে। এখান থেকে মাইল চারেকের পথ ঘোড়াঘাট একদিন এ গাঁয়ের লোক জানতে পারলো শীঘ্রই ওই পশুগুলো আশ-পাশের গাঁগুলোতে অত্যাচারের বিভিমীকার রাজত্বের সৃষ্টি করবে। কথাটা ঠিকই ফললো। কদিনের মধ্যেই ঘোড়াঘাট সংলগ্ন বিভিন্ন গ্রামে অত্যাচারের তান্ডবলীলা শুরু হলো। ঘর-বাড়ী পুড়িয়ে ছাই করতে লাগলো। মা, বোনদের ইজ্জত নষ্ট করতে লাগলো। মানুষ ধরে ধরে গুলী করে পাখি শিকারের মতো মারতে লাগলো। ঘরের জিনিসপত্র লুটতরাজ করে নিয়ে যেতে লাগলো। লোকগুলো দিশেহারা হয়ে পড়লো। অত্যাচারের বীভৎস হাওয়া কাশিয়াবাড়ীতেও একদিন এসে ধাক্কা দিলো। ঘোড়াঘাটে ছিলো অবাঙ্গালীদের এক কলোনী। ওই অবাঙ্গালী কলোনীর দুষ্কৃতকারী পাকবাহিনীর সাহায্য সমর্থন পেয়ে রাইফেল এবং অন্যান্য অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হানা দিতে লাগলো কাশিয়াবাড়ীর শ্যামল মাটির বুকে। কিন্তু হারেস মিয়া বাড়ী থেকে পালায়নি। তার বিশ্বাস ছিলো পাক বাহিনী কাউকে মারবে না শান্তি কমিটির সেদিনের সভাতে সে আশ্বাসই তো বক্তারা দিয়েছিলো। কিন্তু হারেস মিয়া জানতো না ওদের কথার সেক্রেটারী হারেস মিয়াকে ছোরা দিয়ে জবেহ করেছে। জবেহ করেছে স্কুলের শিক্ষক গোলজার মিয়াকে এবং আরো অনেককে। ধর্ষণ করেছে ফুলবানু, গিরিবালাকে। সাত মাসের গর্ভবতী ফুলবানুর উপর এক এক করে ওই পশুগুলো ধর্ষণ চালালে ফুলবানু অতিরিক্ত স্রাবে সেদিনই মারা যায়৷ পেট থেকে গড়িয়ে পড়ে একটি ছোট্ট মৃত শিশু। আর গিরিবালাকে ধর্ষণ করার পর হাত উচু করে খুঁটির সাথে বেঁধে বেয়োনেট দিয়ে বুক চিরে মেরে ফেলে। গ্রামটা আগুন লাগিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছে নরপশুরা। তখনো যারা পালাতে পারেনি তাদের চারদিক থেকে ঘিরে ধরে ফেলে। প্রায় ৭ শত লোককে স্কুলের মাঠে নিয়ে এসে বেদম প্রহার শুরু করে। তোমহারা গাঁওমে মুক্তি ফৌজ হ্যায়। নেই স্যার ঝুট বোলতো। তোমহারে গাঁওছে গোলিকা আওয়াজ শোনাথা। আওর হামারা পাছ ইনফরমেশন হ্যায়। এর কদিন বাদেই এ গাঁয়ে তথাকথিত শান্তি কমিটির তরফ থেকে মিটিং করতে এলো জামাতে ইসলাম আর মুসলিম লীগের লোকেরা। তারা আশ্বাস দিয়ে গেলো এ গাঁয়ের লোকদের। আপনারা পালাবেন না, কোথাও। পাকিস্তানী হিনী