পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৪৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8○○ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড আপনাদের ধ্বংস করতে আসেনি। আপনাদের খুশী করাই তাদের কাম্য। গাঁয়ের সরল নিরীহ লোকগুলো ভাবলো কথাটা হয়তো ঠিকই বলেছে। এবার থেকে হয়তো অত্যাচারের পালা শেষ হবে। দেশে শান্তি আসবে। কিন্তু কি যে শান্তির দিন তাদের সামনে অপেক্ষা করছিল- একদিন আগেও তারা তা বুঝতে পারেনি। কিন্তু যেদিন তারা বুঝলো সেদিন আর আত্মরক্ষার কোন পথই তাদের সামনে থাকলো না। ১১ই জুন ক্যাশিয়াবাড়ীর সরল লোকগুলো দেখলো পিল পিল করে পায়ে হেঁটে কয়েকশ পাক সৈন্য দ্রুত তাদের গাঁয়ের দিকে ছুটে আসছে। পালাও, পালাও, যে যেখানে পারো পালাও। ওই যে দূরে দসু্য পাক বাহিনী ছুটে আসছে। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে সারা গ্রামটায়। মেয়ে পুরুষ বুড়ো জোয়ান যে যেদিকে পারছে পালাচ্ছে। তাড়া খাওয়া হরিণের মতো, অন্য কোন দিকে না তাকিয়ে সবাই গাঁয়ের পার্শ্ববর্তী ক্ষুদ্র নদীর মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ে সাঁতরে ওপারে পালাতে থাকে। আবার অনেকে ধান আর পাটের ক্ষেতে শুয়ে লুকিয়ে পড়ে। শিশুরা কান্না থামাতে মাকে পাগল হতে হয়। সবাই আত্মগোপনে ব্যস্ত। বাড়ী বাড়ী ঢুকে গরু-ছাগল চাল-ডাল থেকে শুরু করে সামনে যা পেত তাই ছিনিয়ে নিয়ে চলে যেতো। প্রতিরোধের সর্বপ্রকার উদ্যোগ নেয়া সত্ত্বেও এই হিংস্র পশুগুলোকে কোন বাধা দেয়ার সাহস পায়নি কাশিয়াবাড়ীর অসহায় লোকগুলো অবাঙ্গালীদের এই ধরনের অত্যাচারে ভীত হয়ে পড়লো গাঁয়ের হিন্দুরা। তারা গাঁ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়ার পরিকল্পনা করতে লাগলো। কারণ তাদের উপরেই ওই দসু্যদের অত্যাচারের মাত্রাটা ছিলো বেশী। ঠিক এমনি সময় সামনে এসে দাঁড়ালেন দারাজ কবিরাজ এবং গাঁয়ের অন্যান্য মাতববর। তোমরা যাবে না এখান থেকে। আমাদের ত্যাগ করে চলে যেয়ো না তোমরা। আমাদের জান দিয়ে হলেও তোমাদের আমরা রক্ষা করবো। থমকে দাঁড়িয়েছিলো হিন্দুরা। তাই তো, এদের ছেড়ে আমরা কেমন করে যাই। এরা কোন দিন তো তাদের ত্যাগ করেনি। কোন দিন তো বেঈমানী করেনি। তবে কেনো এই দুদিনে তাদের ছেড়ে তারা পালাবে। যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলো হিন্দুরা। গাঁয়ের মাতব্বরদের সিদ্ধান্ত মতে হিন্দুদের মূল্যবান জিনিসপত্র মুসলমানদের ঘরে ঘরে এনে জমা রাখা হলো যাতে অবাঙ্গালীদের কোপদৃষ্টি থেকে জিনিসপত্রগুলোকে বাঁচানো যায়। সবাই মিলে অবাঙ্গালী কলোনীর সেই দুষ্কৃতকারীদের হামলাকে প্রতিরোধ করবার জন্য প্রতিরোধ গড়ে তুললো। অতঃপর আরেক দিন সেই দুষ্কৃতকারীরা এ-গাঁয়ে হামলা চালাতে আসতেই চারদিক থেকে তাদের ঘিরে ফেললো গাঁয়ের লোকেরা। তোমরা আর এভাবে আমাদের জান-মাল লুটতরাজ করতে পারবে না। আমরা তোমাদের ক্ষতি করিনি। আমাদের তোমরা বাঁচতে দাও। ফুসে উঠেছিলো সেই অবাঙ্গালী দুষ্কৃতকারীরা। কিন্তু সেদিন কিছু একটা করবার সাহস তারা পায়নি। কারণ সেদিন যার যা ছিলো তা-ই নিয়েই তৈরী হয়েছিলো গাঁয়ের লোকগুলো। কিন্তু সেদিন এ-গাঁয়ের লোকরা ভাবতেও পারেনি যে, ওই দুস্কৃতিকারীরা তাদের জীবনের সর্বনাশ ঘটাবার জন্য কি জঘন্য ষড়যন্ত্র করে বসেছে।------ (অসম্পূর্ণ)