পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৪৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8(?ど বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ গোপালপুর সুগার মিলে গণহত্যা দৈনিক বাংলা ২৬ ফেব্রুয়ারী, ১৯৭২ গোপালপুর সুগার মিলে গণহত্যাঃ আজিম সাহেব বাঁচেননি তিনশ কর্মচারীকেও বাঁচাতে পারেননি ॥ সাখাওয়াত আলী খান প্রদত্ত ॥ “আগে আমাকে গুলি কর। আমাকে গুলি না করে আমার লোকদের তোমরা গুলি করতে পারবে না।” বর্বর হানাদার পাক বাহিনীর সামনে দাঁড়িয়ে কোন জননেতার উক্তি নয় এটা। এই উক্তি একজন দেশপ্রেমিক নির্ভীক বাঙ্গালী মিল প্রশাসকের। এই প্রশাসক ছিলেন একজন লেফটেন্যান্ট আনোয়ারুল আজিম। নাটোরের গোপালপুর সুগার মিলে আরো প্রায় তিন শতাধিক হতভাগ্য মানুয়ের সঙ্গে নির্দয় হানাদার বাহিনী গুলিবিদ্ধ করেছিল একেও। রোগা দেখাচ্ছিল। তিনি বললেন, প্রায় দশ মাস হয়ে গেছে সে নেই- এখন স্বপ্নের মতো মনে হয় সব। দুঃখ করবো কি বলুন শুধু ওকেই তো মারেনি।” তিনশত মানুষকে- নিরপরাধ নিরস্ত্র তিনশত মানুষকে ঠিক পাশের কলোনীতে যাদের স্ত্রী-সন্তান আর আত্মীয়স্বজন রয়েছে কেউ কেউ হয়তো দাঁড়িয়ে দেখেছেও- এক সময়ে লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলী করে মেরেছে। তারপর তাদের লাশ ফেলে দিয়েছে পাশের পুকুরে। বেঙ্গল সুগার মিলে। তাদের দোসর ছিল স্থানীয় অবাঙ্গালীরা। প্রথম দলটি ঢুকেছিল মূল মিলের অভ্যন্তরে, অপর দলটি একই সঙ্গে প্রবেশ করে মিলের পাশের কলোনীতে। প্রথম দলটি মিলে ঢুকে মিলের প্রশাসক জনাব আজিম, প্রশাসনিক অফিসার জনাব শহিদুল্লা, একাউন্ট্যান্ট জনাব সাইফুদ্দীন আহমদ, ইক্ষু সুপারিনটেনডেন্ট জনাব গুলজার হোসেন তালুকদার,সহকারী একাউন্ট্যান্ট জনাব মান্নান ভূইয়া, কৃষি তিনশরও বেশী কর্মচারী ও শ্রমিককে মিলের পুকুরের পাশে লাইন করে দাঁড় করায়। তারপর তাদের গুলী করে হত্যা করে। মিসেস আজিম জানালেন, গোপালপুরে এই হত্যালীলার সঙ্গে যে সমস্ত পাক সামরিক অফিসার প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিল তারা হচ্ছে, মেজর শেরওয়ানী, ক্যাপ্টেন মোখতার ও মেজর ইউলিয়াম। এদের মধ্যে প্রথমোক্ত দু’জন থাকতো নাটোরে আর তৃতীয়জন থাকতো ঈশ্বরদীতে। মিলের অবাঙ্গালী কর্মবারীদের যোগসাজশের কথা বলতে গিয়ে মিসেস আজিম জানালেন, ২৫শে মার্চের কালো রাতের পর থেকেই এখানে অবাঙ্গালীদের উৎপাত বেড়ে গিয়েছিল। তাঁরা হিন্দুদের আর দেশপ্রেমিক অধিকার কারণ তখন তারাই সর্বেসর্বা। কিছু বলতে গেলে বলতো “ইয়েচীজ কো উপর হামলোগকা হক হ্যায়।” মিসেস আজিম বলেন, এসমস্ত যোগসাজশকারী যা করেছে তা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। হানাদার সৈন্যরা গুলী করে তিনশ’ বাঙ্গালীকে হত্যা করার পর মিল ছেড়ে চলে গিয়েছিল। কিন্তু এসব দালাল মৃত জনদের আত্মীয় স্বজনদের লাশের কাছে যেতে দেয়নি। পুকুরে এসব হতভাগ্যের লাশ পচে যখন দুর্গন্ধ ছুটছিল তখন