পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৪৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8\ყyo বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড আর্টিলারীর ফ্যামিলী কোয়ার্টারের বারো থেকে পঞ্চাশ বছর বয়সের দু’শ পচানব্বই জন মেয়েকে ঐ সময় আটক করে রেখে প্রতিদিন রাতে তাদের উপর পাশবিক অত্যাচার চালানো হতো। তিনি আরো জানান যে, তাদের সেলটি কিছুটা দূরে হলেও প্রতিদিন রাতেই ভেসে আসতো মেয়েদের করুণ আর্তনাদ। সেই সাথে বর্বর পাক সেনাদের পৈশাচিক উল্লাসধ্বনি বাতাসের সঙ্গে মিশে এক মর্মবিদারী দৃশ্যের সৃষ্টি করতো। প্রতিদিন বিকেলে জনৈক সুবেদার এসে এইসব মেয়েরা কে কোথায় যাবে তারই একটি তালিকা প্রস্তুত করে যেতো। অতঃপর সন্ধ্যা হলেই উক্ত লিষ্ট মোতাবেক নির্ধারিত মেয়েটিকে পাঠানো হতো নির্ধারিত স্থানে। কখনো কখনো আপন খেয়াল খুশীতে বাইরে নিয়ে এসে পাহারারত কুকুরের দল উপযুপরি নারী ধর্ষণে লিপ্ত হতো। একদিন একটি মেয়েকে এইভাবে পরপর চৌদ্দজন নির্যাতন চালালে মেয়েটি সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলে। কিন্তু তবুও দুৰ্বক্তরা তাকে রেহাই দেয়নি। অচৈতন্য অবস্থায়ই নিজেদের লালসা চরিতার্থ করেছে। মেয়েটির পুনরায় জ্ঞান ফিরে আসতে নাকি ৩৬ ঘন্টা সময় লেগেছিল। জনাব হারেছ বলেন, চৌদ্দ দিন পর তাকে কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়। তারপর ঐ মহিলা বন্দী শিবিরের বাসিন্দাদের পরিণতি সম্পর্কে তিনি কিছুই বলতে পারেন না। অপর একটি মহিলা শিবিরের কথাও তিনি উল্লেখ করেন। ২৫শে সেপ্টেম্বর জেলখানা থেকে পুনরায় তাকে ক্যান্টনমেন্ট নিয়ে আসা হলে সেথায় এফ, আই, ইউ-এ তার উপর নতুনভাবে নির্যাতন করা হয়। সেখানে তিনি ১২ নং এফ, আই, ইউ ব্যারাকের ১০ নং রুমে বহু মহিলাকে বন্দী অবস্থায় দেখতে পান। প্রতিরাতে ঐ ঘর থেকে তাদের চিৎকার শুনা যেতো। এবং একই উপায়ে তারা পাশবিক নির্যাতন চালাতো। এইসব মেয়েদের যৌবন সাধারণতঃ অফিসাররাই উপভোগ করতো। এ সম্বন্ধে হারেছ উদ্দীন আরো বলেন বন্দীশিবিরের মহিলাদের সাধারণতঃ তিন ভাগে ভাগ করে রাখা হতো। প্রথম ভাগে ছিল যুবতী, দ্বিতীয় ভাগে ছিল মধ্যবয়সী এবং তৃতীয় ভাগে কয়েক সন্তানের মাতা। তিনি স্কুল কলেজের সুন্দরী মেয়েদের প্লেনে করে ঢাকা পাঠাতেও দেখেছেন। হারেছ উদ্দীনের বর্ণনা থেকে আরো অনেক তথ্য জানা যায়। দখলদাররা ক্যান্টনমেন্টের ভিতরে আন্ডার গ্রাউন্ড সেল তৈরী করেছিল। যশোর পতনের পর ঠিক এমনি একটি সেল থেকে ১১৩ জনকে উদ্ধার করা হয়েছিল। সবাই জীবিত অবস্থায় থাকলেও তাদের মধ্যে প্রাণ ছিলো না বললেই চলে। আলো বাতাস ও খাদ্যের অভাবে মাংসহীন হয়ে তাদের শরীর একেবারেই ভেঙ্গে পড়েছিল। হাডিড কংকালসার দেহগুলি অসহ্য নির্যাতনের জুলা বহন করে এনেছিল।