পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৫০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 ୩ ୩ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ পাক হানাদারদের ধ্বংসযজ্ঞের কবলে পূর্বদেশ ২৩ জুন, ১৯৭২ কয়েকটি ঐতিহাসিক স্মৃতিচিহ্ন পাক হানাদারদের ধ্বংসযজ্ঞের কবলে কয়েকটি ঐতিহাসিক স্মৃতিচিহ্ন ॥ মাজেদুর রহমান ॥ পাকিস্তানী হায়েনার দল ১৯৭১ সালের ১৪ই এপ্রিল মঙ্গলবার বিকেলে সৈয়দপুর থেকে (রংপুর) পারেনি যে, তারা শুধু এ দেশের মানুষেরই রক্ত নিয়ে হোলি খেলবে না, সব রকম ঐতিহাসিক স্মৃতিচিহ্নগুলোর ধ্বংস সাধন করবে। দিনাজপুর শহর পুনর্দখল করবার পর সম্ভবত ১৭ই এপ্রিল রোজ শুক্রবার বেলা ৯/১০ টার দিকে পাঞ্জাবী হায়েনারা কয়েকটি সাঁজোয়া গাড়ী নিয়ে শহর থেকে এলোপাতাড়ি গুলী করতে করতে দক্ষিণের পাকা রাস্তা ধরে ভারত সীমান্তের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু চেরাডাঙ্গীর নিকট “লক্ষী জলের সাঁকো’ বলতে একটি রাস্তার সংযোগস্থলে ঐ পল্লী এলাকার সংগ্রামী ছাত্র-জনতার নির্মিত আমগাছের একটি ব্যারিকেডে বাধা পেল। রাস্তার উপর ব্যারিকেড দেখতে পেয়ে পাক দস্যরা ক্ষীপ্ত হয়ে উঠলো। এরই প্রতিশোধ হিসেবে তারা ব্যারিকেডের স্থান থেকে দূরপাল্লার শক্তিশালী রকেটের দ্বারা একের পর এক মহরমপুর, পাইকপাড়া, তাজপুর ও মহব্বতপুরের কিয়দংশ জুলিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করেছিল। সেদিনের সবচাইতে বেদনাদায়ক ও হৃদয়বিদারী ঘটনা হলো যে পাঞ্জাবী নরাধমরা পাইকপাড়া নিবাসী স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষক জনাব মোহাম্মদ রোস্তম আলীকে ধরে নিয়ে আসে। বয়সে তরুণ ও বলিষ্ঠ চেহারার অধিকারী যুবক রোস্তম তার পরিবারের জ্যেষ্ঠ পুত্র এবং একমাত্র উপার্জনক্ষম সন্তান ছিলেন। তাকে তারা কি বলেছিল এবং তিনি নিজে কি বলতে চেয়েছিলেন তা আজও জানা যায়নি। পাক সেনারা ঐ স্থান ত্যাগ করে চলে যাবার পর দেখা গেল রোস্তম আলী আর বাড়ী ফিরছে না। তার উদ্বেগাকুল পরিবার খোঁজাখুঁজি শুরু করলে বিকেল বেলা দেখা গেল রোস্তমের তাজা লাশ লক্ষ্মীজল সাঁকোর ধারে কয়েক রাউন্ড গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। স্বাভাবতই আঁচ করা গেছে যে গাছ কেটে ব্যারিকেড নির্মাণের অভিযোগে রোস্তম দেশের জন্য ঐ এলাকার বাঙ্গালীদের মধ্যে প্রথম শহীদ হন। হায়েনার দল যখন বেলা ১/২ টার দিকে শহরে ফিরে আসছিল তখন পথে জেলার প্রাচীনতম (১৯৩২ সন) হাইস্কুল চেরাডাঙ্গীপাড়ায় তারা সাঁজোয়া বাহিনী নিয়ে ঢুকে পড়ে। চেরাডাঙ্গী হলো উক্ত ইউনিয়নের বোর্ড কার্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রাণকেন্দ্র। বোর্ড কার্যালয় ভবনটি প্রধান মিলনায়তনসহ কয়েকটি ছোট ছোট কক্ষে বিভক্ত ছিল। চিকিৎসালয় ও ইউনিয়ন কনজুমার্স ষ্টোর্সের অফিসগুলো বিদ্যামান ছিল। এ ছাড়াও ঐ একই এলাকায় জেলার বৃহত্তম বেসরকারী ১৯৩২ সালে নির্মিত চেরাডাঙ্গী উচ্চবিদ্যালয়ের এক বিরাট হোষ্টেলসহ চেরাডাঙ্গী নবীন মজলিস ও পাবলিক লাইব্রেরী নামে একটি ক্লাবও রয়েছে। হানাদার বাহিনী প্রথমে চেরাডাঙ্গীতে ঢুকে বেদম এলোপাতাড়ি গুলি করে স্কুলের বিজ্ঞান ভবন ও অফিস ঘরটিতে ঢুকে পড়ে।