পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৫০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 Գծ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড

  • ওরা ডাক্তার মেরেছে” ‘বাংলাদেশে গণহত্যা বাংলার বাণী, ১৯৭২

বিশেষ সংখ্যা ওরা ডাক্তার মেরেছে “শুধু শ্লোগান আর মিছিলের সংগ্রাম নয়। যত সত্বর পার ইমার্জেন্সী মেডিক্যাল ফাষ্ট এইড স্কোয়াড তৈরী কর। ব্যাপক রক্তক্ষয়ের জন্য প্রস্তুত থাক।“ ১৯৭১ সালের ২১শে মার্চ যখন বাংলাদেশের পথে-প্রান্তরে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়েছে তখন সিলেট চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ের ছাত্রদের উদ্দেশ্য করে যে কথাগুলো বলেছিলেন মানবতার সেবায় আত্মোৎস্বর্গকৃত নির্ভীক মহৎপ্রাণ সিলেট চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ের প্রধান শল্য চিকিৎসক অধ্যাপক ডাঃ শামসুদ্দিন আহমদ। বাংলাদেশে গণহত্যার বর্বরোচিত ও নৃশংসতম উদাহরণ বিশ্বে তুলনাহীন। কয়েক মিনিটের ঘটনা কিন্তু কত ব্যাপ্ত, কত বিস্তৃত, কত মর্মান্তিক, কত দুর্ঘটনা, কত মর্মস্পশী দৃশ্য, কত পৈশাচিকতা ছিল এ হত্যাকাণ্ডে। শতাব্দীর পর শতাব্দী বিশ্বে যে ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে, বাংলাদেশে গণহত্যার কাছে সবকিছু স্নান হয়ে গেছে। এত বড় হত্যাকাণ্ড কোন ভাষায় লিখব, কেমন করে লিখব, কি লিখব, কে লিখতে পারবে? বাংলাদেশের এক কোটি পরিবারের ঘটনা লিপিবদ্ধ করতে হলে এক কোটি ইতিহাস লিখতে হবে। তা না হলে এ নৃশংসতার বহু অধ্যায় বাদ পড়ে যাবে। কিন্তু তা কি সম্ভব? না সম্ভব নয়। সুতরাং এ ইতিহাস অলিখিত থাকবে। এ ইতিহাস লেখা যায় না। এ ইতিহাস লেখা যাবে না। এখানে ঐতিহাসিক ব্যর্থ, এখানের ইতিহাস ব্যর্থ। এ ব্যর্থ ইতিহাসে শহীদ ডাঃ শামসুদ্দিন আহমদকে প্রকাশ করাও এক ব্যর্থ প্রয়াস। কেন তাকে হত্যা করা হলো? কেমন করে তাকে হত্যা করা হলো? সৌম্য দর্শন দেবতুল্য লোকটিকে পাক বর্বর পশুরা কি করে গুলী করলো? এতো মানুষকে হত্যা করা নয়, মানবতাকে হত্যা করা হয়েছে। মার্চের অসহযোগ আন্দোলন শুরু হতেই অধ্যাপক শামসুদ্দিন আহমদ নতুন এক কার্যক্রমের অবতারণা করলেন। অসহযোগের ফলে অন্যান্যদের কাজ কমে গেলেও তাঁর নতুন আরও কাজ বেড়ে গেল। সামনে কি ঘটতে যাচ্ছে তা তিনি যেন চোখের সামনে স্পষ্ট দেখতে পেলেন। ছাত্রছাত্রী সেবক-সেবিকাদের ডেকে ফাষ্ট এইড স্কোয়াড গঠনে প্রবৃত্ত হলেন। প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি নিয়ে অনেকগুলো প্যাকেট তৈরী করে বিভিন্ন স্থানে মওজুত করে রাখলেন। তিনি যেন দেখতে পারছিলেন ঐ যে কয়েক গজ দূরে হানাদার বাহিনী তেড়ে আসছে, এতেই আঘাত করবে, এক্ষুনি ফাষ্ট এইডের প্রয়োজন হবে। হ্যাঁ, সত্যি সত্যিই নরপশুরা এসে বর্বরোচিত আক্রমণ করেছে, অসংখ্যা লোককে হত্যা করেছে, অগণিত লোককে আহত করেছে আর শল্যবিদ সামসুদ্দিন আহমদ তড়িৎ গতিতে চিকিৎসা শুরু করেছেন। কিন্তু মানুষ শাসমুদ্দিনকে যখন হিংস্র দসু্যরা গুলী করেছে, গুলী করে ধরাশায়ী করেছে, হত্যা করেছে, তখন তাঁকে কেউ ফাষ্ট এইড দিতে আসেনি। কেউ দাফন করতে আসেনি। কারণ তিনিই ছিলেন শেষ মানুষ, তিনিই ছিলেন শেষ সেবক, তিনিই ছিলেন সে ইতিহাসের শেষ নায়ক। ১লা এপ্রিল, ১৯৭১ সাল। সূর্য সারা প্রকৃতিকে ছেয়ে রেখেছে। রক্তিম রশ্মি বিচ্ছুরিত হচ্ছে চারিদিকে। সিলেট শহর আবার শত্রদের কবলিত। ২৫শে মার্চের কাল রাতের পর হতেই স্বতঃস্ফুর্তভাবে বেঙ্গল রেজিমেন্ট, তখনকার ই, পি, আর, আনসার, মোজাহিদ, ইউওটিসি, ক্যাডেট, জেসিসি, ক্যাডেট, পুলিশ, ছাত্র ও যুবকরা