পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৫১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8Ե- Ֆ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড যোগেশ বাবুর হত্যা-কাহিনী বাংলাদেশে গণহত্যা বাংলার বাণী, ১৯৭২ বিশেষ সংখ্যা কেউ ভাবতে পারেননি যে যোগেশ বাবুকে এভাবে হত্যা করা হবে শ্রী যোগেশচন্দ্র ঘোষ। একটি নাম। একটি ইতিহাস। দুঃস্থ অসহায় মানুষের কল্যাণে নিবেদিত একটি প্রাণ। তাঁর জীবনের একমাত্র ছিল ‘সাধনা ঔষধালয়’। যে ঔষধালয়ের বাংলাদেশ ছাড়াও সমগ্র বিশ্বজোড়া রয়েছে খ্যাতি। এমনি নব নব সৃষ্টির মাঝেই যোগেশ বাবু বেঁচে ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি নিজেই বাঁচতে পারেননি। বর্বর খান সেনাদের হাতে তাঁকেও প্রাণ হারাতে হলো। নরপিশাচদের হাতে অবসান হলো একটি অমূল্য জীবনের। সহকর্মীদের সবাই সেই কালরাত্রিতে কোন গতিকে প্রাণ নিয়ে বেঁচেছিল। প্রাণের মায়ায় পালাতে বাধ্য হয়েছিল তারা। শুধু যোগেশ বাবুর পোষা প্রিয় বানরটা তাঁকে ছেড়ে পালিয়ে যায়নি। প্রভূর সমূহ বিপদের আশংকায় সেদিন বনের পশুটি পর্যন্ত চীৎকার দিয়ে ঘোষণা করেছিল বিপদ বার্তা। কিন্তু যোগেশ বাবু তেমনি রইলেন। পালানোর সামান্যতম চেষ্টাও করেননি তিনি। বিপদের আশঙ্কায় তিনি শঙ্কিত হয়েছিলেন বটে, কিন্তু আকস্মিক ভয়াবহ মৃত্যুর কথা বোধ হয় ভাবতে পারেননি। পচিশে মার্চ। ভয়াল বীভৎস রাত। এই দিন বাংলার বুকে নরপশু খান সেনারা যে হত্যালীলা চালিয়েছিল তার করুণ কাহিনী ইতিহাসের পাতায় কালো কালিতে বাঁধা থাকবে। রাজধানীর ঢাকার সমস্ত শহরটা ভয়ে প্রকম্পিত গ্রামে পালিয়ে যাচ্ছে নগরবাসী। সবাই পালাচ্ছেন- দূরে অনেক দূরে, নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে। বর্বরদের হাত থেকে নিস্কৃতি পাবার প্রত্যাশা প্রত্যেকের। পুরান ঢাকার সূত্রাপুর এলাকার অনেকেই এরই মধ্যে শহর ছেড়ে পালিয়ে গেছে। সমস্ত এলাকার মাঝে শুধু একটি মাত্র বাড়ীই যেন একমাত্র প্রহরী। স্তব্ধ, নিঃঝুম পরিবেশ। বিরাট এলাকা জুড়ে একটা কারখানা সাধনা ঔষধালয়। সমস্ত বাড়ীটার প্রহরী যোগেশ বাবু। কারখানার নির্জন প্রকোষ্ঠে তিনি কাটিয়েছেন জীবনের সুদীর্ঘকাল। তাঁর একমাত্র সাধনাস্থল এই কারখানা। নিঃসঙ্গ জীবনের একমাত্র সাথী ছিল কারখানার শ্রমিকরা। দিন শেষে পড়ন্ত বেলায় শ্রমিকরা সবাই যখন একে একে চলে যেত, তখন রামপাল আর সুরুজ ছিল তাঁর একমাত্র সাথী। রামপাল ও সুরুজ কারখানার দারোয়ান। তারা দীর্ঘ সতের বছর ধরে বাবুর সাথে কাটিয়েছে। পচিশে মার্চের পর সবাই যখন একে একে চলে গেল- তখনও ওরা বাবুকে ছেড়ে যায়নি। জীবনের ঝুঁকি নিয়েও ওরা তাঁর কাছে ছিল। রাত দুপুরে বাবু যখন উন্মনা হয়ে উঠতেন- তখন ওরাই ছিল তাঁর একমাত্র সাথী- নিঃসঙ্গ আলাপ করছিলাম দারোয়ান দু’জনের সাথে। তখন সূর্যদেব সবে বিদায়ের তোড়জোড় করেছেন। আধো আলো আধো আঁধারের এক প্রকোষ্ঠের মধ্যে বসে কথা হচ্ছিল আমাদের। পচিশে মার্চের পরের ঘটনা। সম্ভবতঃ এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ অথবা মাঝের শেষের দিক। সেই দুর্যোগ রাতের সঠিক তারিখ আজ নাকি ওদের কারো মনে নেই। স্মরণ নেই সেই ভয়াবহ তারিখের কথা।