পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৫১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪৮৫ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ ইত্তেফাকের সাংবাদিকের লেখায় ২৫শে মার্চ | বাংলাদেশে গণহত্যা বাংলার বাণী, ১৯৭২ রাতের সামরিক হামলার প্রত্যক্ষ বিবরণ বিশেষ সংখ্যা মৃত্যুতে বিস্মিত হবার কিছু নেই মৃত্যুতে বিস্মিত হবার কিছু নেই, বেঁচে থাকাই পরম বিস্ময় কথাটা যে কে বলেছিলেন, ঠিক এ মুহুর্তে আমি তা স্মরণ করতে পারছি না। তবে কথাটা যে অসত্য বা অতিরঞ্জিত কিছু নয় নিজ জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতা দিয়ে আমি তা মর্মে মর্মে অনুভব করেছি। আর না করেই বা উপায় কি। সাক্ষাৎ মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে যাওয়া সে যে কত বড় বিস্ময় তা অনুমানের পর অনুভূতির ব্যাপার, সে বিভীষিকাময় স্মৃতি যখন মনে এর জবাব দেবার জন্য আমাকে ফিরে যেতে হবে পচিশে মার্চের সেই ভয়ঙ্কর রাতে। যে রাতে আমরা আটটি প্রাণী প্রাণান্তকর অবস্থার ভিতর দিয়ে অনুভব করেছি প্রতিপক্ষের মৃত্যুযন্ত্রণা। লক্ষ্য করেছি একদল মানুষ জন্তুর হু-হুংকার। আর শাশানের শেষ প্রান্ত চরদের মানুষের জীবন নিয়ে কানামাছি খেলার নিদারুণ উপহাস। দৈনিক ইত্তেফাক-এর সম্পাদকীয় বিভাগের একজন সদস্য হিসাবে সাধারণতঃ রাতের বেলায় অফিসে থাকার কথা আমার ছিল না। কিন্তু স্বভাব যায় না মলে। আডডা মেরে যার অভ্যাস, সকাল সকাল সে বাসায় ফিরে কেমন করে। সকাল দশটার দিকে অফিসে আসতেই এডিটর সাব ডেকে বললেন, শেষ পরিণতি মোটামুটি ভালর দিকেই মনে হচ্ছে। আপনাকে একটা এডিটরিয়াল লিখতে হবে। এডিটরিয়ালটার বক্তব্য বিষয় হবে মোটামুটি এরকম। সাড়ে বারটার মধ্যেই আমার লেখা শেষ হয়ে গেল। গেলাম প্রেসক্লাবে এবং তারপর সেখান থেকে সবুজ শ্যামল ছাওয়া রমনা পার্কের পূর্বদিকস্থ সাবেক প্রেসিডেন্ট ভবনের (গণভবন) কাছে সাবেক প্রেসিডেন্ট ভবনের পশ্চিম দিকের ফুটপাতের উপর একদল লোক দাঁড়িয়ে আছে। আশেপাশে যতদূর চোখ যায় শুধু পুলিশ আর পুলিশ এবং সে সাথে উর্দি পরা ও সাদা পোশাক পরিহিত সামরিক সেনারা। এদের গর্হিত পদক্ষেপ আর শ্যেনদৃষ্টি কালা পাহাড়ের চিত্তকেও ভীতিবিহবল করে তোলে। সেখানে অধিকক্ষণ দাঁড়ানো তাই স্বস্তিকর বোধ হলো না। ফিরে এলাম প্রেসক্লাবে। কথাবার্তা এবং বাতাসে ভেসে আশা গন্ধে যেন অনুভব করলাম একটা দ্রুত পরিবর্তনের সুর। প্রভাত সূর্য যে আশা ও সম্ভবনার বাণী নিয়ে উদিত হয়েছিল, পড়ন্ত বেলায় যেন তা রাহুগ্রস্ত প্রায়। এ অবস্থায় বাসায় ফিরব মনে করে পথে নামতেই সিরাজ ভাই (শহীদ) ডেকে বললেন “মিলন, চল অফিসে যেতে হবে।” কেন জিজ্ঞেস না করেই রিকশায় তার পাশে যেয়ে বসলাম। তিনি বলতে লাগলেন, “সবকিছু উলটপালট হয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে একটা ভীষণ পরিণতির দিকে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।” এমনি বেশী কথা বলার অভ্যাস আমার নেই, তদুপরি বক্তব্যটির কোন সুদত্তর খুঁজে পেলাম না। পুনর্বার যখন অফিসে ফিরে এলাম রাত তখন নটা। তাড়াতাড়ি প্রেস থেকে এডিটরিয়ালটা আনিয়ে আপাদমস্তক সংশোধন করলাম। তখন কে জানতো কাল প্রভাতে কেন কোন দিনই এ সম্পদকীয় আর আলোর মুখ দেখবে না। রাত দশটার দিকে সিরাজ ভাইকে বললাম, ‘ভাব-সাব ভারী খারাপ মনে হচ্ছে, চলুন বাসায় ফিরে যাই।” তিনি জবাব দিলেন, “কেমন করে যাব, কাগজ বের করতে হবে না?” প্রত্যুত্তরে আমি আর কিছু বলা সমীচীন বোধ করলাম না। জানতাম ইত্তেফাক সিরাজ ভাইর প্রাণ, সিরাজ ভাইর ধমনীতে এর স্রোত প্রবাহিত, সুতরাং বলে-কয়ে লাভ নেই। আরও কিছুক্ষণ আলাপ করার পর তিনি বললেন, ‘তুই বরং চলে যা। কিন্তু আমার জানি কেন অফিস ছেড়ে যেতে ইচ্ছে হচ্ছিল না। কি ঘটে না ঘটে তা দেখার ও