পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৫১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8brb বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজে পাক বাহিনীর | বাংলাদেশে গণহত্যা বাংলার বাণী, Տ5ԳՏ হামলার বিবরণ বিশেষ সংখ্যা হানাদারদের ঘাঁটি ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ অধ্যাপক গোলাম জিলানী নজরে মোরশেদ ॥ স্বাধীনতাউত্তর বাংলাদেশের আর পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের মত ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজেও কাজ চলছে পূর্ণোদ্যমে ছাত্রদের পদভারে কলেজ আজ সরগরম। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যা বর্বর পাক বাহিনী তাচ্ছিল্যভাবে নষ্ট করে দিয়েছিল তা এক এক করে জোগাড় করা হচ্ছে। কলেজের শ্রীবৃদ্ধির জন্য নিরলস চেষ্টা চলছে। সবই একদিন হয়ত হবে। আর সব অভাবই হয়ত একদিন পূরণ হবে। কিন্তু পূরণ হবে না কয়েকটি নিবেদিত প্রাণের অভাব, এরা ফিরে আসবেন না। এরা হচ্ছেন অধ্যাপক লেঃ কর্নেল মনজুরুর রহমান, অধ্যাপক হালিম খান, মালি আবদুস সাত্তার, চৌকিদার গাজী ও চৌকিদার সইজদীন। এদের মর্মান্তিক মৃত্যুর কাহিনী বলতে গেলে আরও একটু গোড়া থেকে শুরু করতে হয়। ২৫ তারিখের রাতে ঢাকার বুকে ইয়াহিয়ার সৈন্য বাহিনীর হত্যাযজ্ঞের খবর যখন ঝিনাইদহ পৌঁছল তখন ঝিনাইদহের জনসাধারণের সাথে সাথে ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজের সকল শ্রেণীর কর্মচারীরাও দেশের জন্য সংগ্রাম করার বলিষ্ঠ শপথ নিল। সেই সময় বর্তমান প্রবন্ধকার, অধ্যাপক আবদুল হালিম খান (মরহুম) ও অধ্যাপক শফিকুল্লার (বর্তমানে ক্যাপ্টেন), নেতৃত্বে ক্যাডেট কলেজ প্রতিরক্ষা দল গড়ে তোলা হলো এবং ঝিনাইদহের সে সময়কার এস, ডি, পি, ও জনাব মাহবুব উদ্দীন (বর্তমানে মেজর ও বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র দপ্তরের ডেপুটি সেক্রেটারী) এর সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা হয়। (ইনি প্রথমে ঝিনাইদহ প্রতিরক্ষা বাহিনী গড়ে তুলে চুয়াডাঙ্গাস্থ সাবেক ই, পি, আর-এর মেজর আবু ওসমানের নির্দেশ মত কাজ করছিলেন। এক পর্যায়ে তিনি ক্যাপ্টেন পদে উন্নীত হন ও পরে মুজিব নগর থেকে মেজর পদে উন্নীত হন)। এরপর ৩০ শে মার্চ গভীর রাতে কুষ্টিয়া থেকে পাক বাহিনীর ২৫ বেলুচ রেজিমেন্টের ১ কোম্পানী সৈন্য যখন অতি সন্তপণে ঝিনাইদহের নিরীহ নিরপরাধ জনসাধারণের উপর তাদের হিংস্র নখরাঘাতের জন্য মারণাস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ধীরে ধীরে এগুচ্ছিলো, তখন ঝিনাইদহে শুধু ক্যাডেট কলেজের মুষ্টিমেয় সংগ্রামী বীর ছাড়া আর কেউ ছিল না। এরাই রাত দুটোয় তাদের অগ্রগতিকে প্রতিহত করে। এরপর এই হানাদার দলকে বাংলার যে বীর সৈনিকরা নির্মুল করে তাদের অধিকাংশই ছিল এ কলেজের কর্মচারী। এরপর ১লা এপ্রিল যখন যশোহর থেকে আগত সৈন্যরা নতুন করে ঝিনাইদহ দখলের ব্যর্থ চেষ্টা করে তখন তাদেরকে ঝিনাইদহের ছমাইল দূরে বিষখালিতে যে বাধা দেওয়া ও পর্যুদস্ত করা হয় তাতেও ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজের শিক্ষক ও অন্যান্য শ্রেণীর কর্মচারীদের দান অপরিসীম। শুধু যুদ্ধ করাই নয়, নতুনদের শিক্ষা দেওয়া, সংবাদ সরবরাহ, মুক্তিবাহিনীর রসদ যোগানোর দায়িত্ব নেয় এ কলেজের কর্মচারীরা। ৫শত মুক্তিযোদ্ধার খাবার তৈরী করার ভারও নেয় এই কলেজের কর্মচারীরা। অবশ্য সে সব কথার অবতারণা অন্যত্র করা যাবে। এখন মূল প্রসঙ্গে আসা যাক। এরপর জয়-পরাজয়ের মাঝে চললো কিছুদিন। কখনও মুক্তিবাহিনী যশোহরের দিকে এগিয়ে যায় আবার পিছিয়ে আসে। এদিকে হানাদার বাহিনী প্রতিদিনই বিমানযোগে যশোহরের প্রচুর গোলাবারুদ অস্ত্রশস্ত্র ও নতুন সৈন্য সমাবেশ করে ফেলল। সে সময় মেজর আবু ওসমান সাহেবের নির্দেশে ক্যাপ্টেন মাহবুব উদ্দীন মুক্তি বাহিনীকে Close up করে ভারতে চলে গেলেন। ক্যাপ্টেন পড়ে রইল অরক্ষিত অবস্থায়। পাক বাহিনী ফাঁকা মাঠ পেয়ে বীরদৰ্পে ঝিনাইদহে প্রবেশ করল ১৬ই এপ্রিল।