পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৫১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪৯২ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড একাত্তরে রংপুরের আলমনগর বাংলাদেশে গণহত্যা বাংলার বাণী, ১৯৭২ বিশেষ সংখ্যা ১৯৭১: আলমনগর, রংপুর তিনটে গুলী, তিনটে শব্দ, তিনটে দাগ দাসু মিঞার একটি চোখে, একটি মুখে একটি বুকে। বাসু মিঞার আর এক নাম মোহাম্মদ ইসমাইল মিঞা। তিনি রংপুর শহরের আলমনগর নিবাসী একজন জনগণমান্য দেশবরেণ্য বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ছিলেন। তার অপরাধ তিনি ধনী এবং আওয়ামী লীগার। তাকে যেদিন মারা হয় আমি সেদিন রংপুরে। একাত্তরের এপ্রিল মাসের প্রথমদিকে সপরিবারে নিজস্ব মোটরে করে শহর থেকে পালালেন দূর মফস্বল“পদ্মগঞ্জে”। বাসু মিঞা পালানোর কয়েক দিন আগেই তার বাড়ীর পাশের পাড়ার (মোড়ল) আজিজ মিঞাকে খান সেনারা রংপুর প্লাটফর্ম থেকে অবাঙ্গালীদের ইশারায় ধরে নিয়ে যায়। আজ পর্যন্তও সে আজিজ মিঞা আর ঘরে ফিরে আসেননি। আমি তখন স্বয়ং প্লাটফরমে দাঁড়ানো। বাসু মিঞা পালালেন জানাজানি হয়ে গেল অবাঙ্গালীদের মধ্যে। শুরু হল তার তল্লাশী। এদিকে শহরে ধরপাকড় করে পথে-ঘাটে সমানে গুলী করে মারছে খান সেনারা বুনো শুয়োরের মত। একদিন শহরের গণ্যমান্য সর্বপরিচিত এগারজন বাঙ্গালীকে হাত পা বেঁধে মাহিগঞ্জ শ্মশানে রাত বারটায় গুলী করে মারে। তার মধ্যে একজন ভদ্রলোক “ডাঃ মন্টু”। তিনি প্রথম গুলীর আওয়াজে মুহুর্তেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান ঘাতকের অগোচরে। এগারজনের উপর প্রায় ৩০/৪০ টি বুলেট চালিয়ে চলে যায়। কিন্তু বিধাতার ইচ্ছা ডাক্তার মন্টু মরেন নি। শেষ রাতের দিকে তিনি আহত অবস্থায় জ্ঞান ফিরে পেয়ে শ্মশান ও বাঁধন মুক্ত হয়ে ভারতের কোন এক হাসপাতালে যেয়ে ভর্তি হন। মৃত দশজনের মধ্যে জরজেট মিঞার জন্য আজও রংপুরের লোক দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। এদিকে বাসু মিঞার তল্লাশী চলছে। “বাসু মিঞা গাদ্দার হ্যায়, ও জয়বাংলাকা আদমী।” অবাঙ্গালী ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের মুখেও শুনেছি। বাসু মিঞার জনৈক অন্তরঙ্গ দালাল বন্ধু খোঁজ পেয়ে বাসু মিঞার কাছে যেয়ে টাকা খাওয়া শুরু করলেন এবং তাকে শহরের বাড়ীতে ফিরে আসতে অনুরোধ জানালেন। সে দালাল বন্ধুটি অভয় দিলেন মেজর, কর্নেল, সবাই তার বন্ধু লোক। তাঁদের সঙ্গেই তিনি উঠাবসা করেন। অতএব তার কোন ভয় নেই, চিন্তা নেই, আশঙ্কা নেই। তাকে তো মারবেই না বরঞ্চ মেজর, কর্নেল তাকে তাদের নিজের গাড়ীতে করে নিয়ে ঘুরে বেড়াবেন। সে দালালের তখন যথেষ্ট আধিপত্য রংপুর শহরে (দালালটি সম্ভবতঃ খৃষ্টান ধর্মীয় বাঙ্গালী) বন্ধুর আধিপত্য দেখে, বিশ্বাস করে দীর্ঘ দেড় মাস পরে ফিরে এলেন শহরে নিজগৃহে। দালাল বন্ধুটি মিথ্যা বলেন নি। সত্যিই মেজর, কর্নেল, নায়েক সবাই দলে দলে যাতায়াত শুরু করেন বাসু মিঞার বাড়ীতে। বাসু মিঞাকে তারা দোস্ত বানালো, বাসু মিঞার মাকে মা, স্ত্রীকে ভাবী এবং অন্যান্য আর সবাইকে বেটা, মেয়ে, দোস্ত, চাচা, বন্ধু ইত্যাদি পাতিয়ে নিলো খান সেনারা। বাসু মিঞা ওদের বন্ধুত্ব পেয়ে নিশ্চিন্ত হলেন মৃত্যুর হাত থেকে। এদিকে রোজ বাসু মিঞাকে সকাল মিলিটারী যে সিভিল পোষাকে তাকে চোখে চোখে করে রাখতো তা আমি নিজে চোখে দেখেছি। ক্যান্টনমেন্টে রোজ বাসু মিঞাকে নিয়ে নাচ, গান বাজনা আর পানীয় চলতো। এতে প্রায় দৈনিক ১/২ হাজার টাকা খরচ