পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৫২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8句8 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড গোশত, পোলাও, কলা খেয়ে যেত সেই সব দোস্ত বন্ধুদেরই দল। গেদুকে, জুলুকে তখনও খেয়াল করেনি। তাদের সঙ্গে কর মর্দনের উদ্দেশ্যে হাত বাড়াতেই দোস্তজি খপ করে হাত ধরে বলে বাহেনচোত শা-লা। তারপর হাত বেঁধে ফেলে। ততক্ষণে বাসু মিঞাও ঢুকে পড়েছেন। এসব অবাঞ্ছিত ব্যাপার দেখে সাধারণ জ্ঞান লোপ পেয়ে যেন পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি। বাসু মিঞা ধরা পড়লেন। হাত বাঁধলো, চোখ বাঁধলো, নিয়ে গেলো, ছয় মাইল দূরে দমদমা নদীর ধারে। এখানে পা রাখার জায়গা নেই। আধ হাত মাটির নীচে নীচে সোনার বাংলার মানুষ বাস করছে। নদীর পটভূমি ছোট্ট এক কুলগাছ। সেখানে তাদের বাঁধলো এবং ওদের দিয়েই ওদের কবর খোঁড়ালো। চাঁদু, জুলু, আর গেদুকে সেই কুল গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখে কয়েকজন সেনা বাসু মিঞাকে ফিরিয়ে নিয়ে এলো, উদ্দেশ্য মোটা মালপানি কিছু নেবে। নিলো সামান্য কিছু-মাত্র ১৯০০.০০ টাকাই ঘরে ছিল। উদ্দেশ্য সিদ্ধি হল। আবার হাত বাঁধলো, চোখ বাঁধতে যাবে, বাসু মিঞা কাকুতি জানালেন এক মিনিট আমায় সময় দিন। কথাটা রাখল পাষণ্ডরা মা জহুরা তখন মিলিটারীর পায়ের তলায় কেদে কেদে কাকুতি মিনতি করে পুত্রের প্রাণ ভিক্ষা চেয়ে লুটোপুটি খাচ্ছেন। মাকে বল্লেন- মা, লিটনকে (ছোটছেলে) একবার নিয়ে এস। মা কাঁদতে কাঁদতে লিটনকে নিয়ে এলেন। কিন্তু হাততো বাঁধা। মাকে বলেন, লিটনকে আমার বুকের সঙ্গে একটু ঠেকাও। মা লিটনকে তার বুকে চেপে ধরলেন, চোখের সমস্ত পানি যেন একেবারে শেষবারের মত বাঁধ ভেঙ্গে বেরিয়ে এল বাস মিঞার। চোখ বেঁধে ফেল্ল পাষণ্ডরা। শেষ কথা মাকে ডেকে বল্লেন- তা এই শেষ দেখা। দমদমার গর্তের কাছে ওদের বেঁধে রেখেছে আমার গর্তও হয়ে গেছে। তোমরা সবাই মিলে মিশে থেকো, আমার মৃতদেহকে নিয়ে এসে ভাল করে দাফন করো। কিন্তু তা আর হয়নি। পাষণ্ডরা তার মৃতদেহ নিয়ে আসতে দেয়নি। দমদমার ছোট কুল গাছটির তলায় যেখানে রংপুর সরকারী কারমাইকেল কলেজের তরুণ দম্পতিকে একসঙ্গে একই গর্তে মাটিচাপা দিয়ে রেখেছে ঠিক তারই পাশে আজ তিনটে গুলী, তিনটি শব্দ, তিনটে দাগ চিহ্নিত বাস মিঞার দেহকে মাটিচাপা দিয়ে গেল ওরা। কিন্তু চাঁদু, জুলু, গেদুর লাশ কোথায়- এ প্রশ্নের জবাব আজও পাওয়া যায়নি। -আজাদ এম, কবির