পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨૭ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড I 여 II মতিউর রহমান সাব-ইন্সপেক্টর অব পুলিশ ১৯৭১ সনের ২৫শে মার্চ আমি সারাদিন থানা সংলগ্ন পুলিশের সি, আই, অফিসের কাজ করছিলাম। আর, পি, থেকে আমার এক বিশিষ্ট বন্ধু টেলিফোনে আমাকে জানালো যে, ঢাকা সেনানিবাস থেকে ভারী অস্ত্র ও কামান সেট করা সত্তরটি আর্মি ট্রাক ভর্তি সশস্ত্র পাক হানাদার এয়াপোর্ট রোড ধরে ঢাকা শহরে প্রবেশ করছে। রাত প্রায় এগারোটার সময় পাক হানাদাররা আমাদের থানার উপর আক্রমণ করে। ওরা এসেই ভারী মেশিনগানের সাহায্যে বৃষ্টির মত আমাদের থানায় গুলি বর্ষণ করতে থাকে। থানার সামনে নিয়োজিত আমাদের সশস্ত্র প্রহরী ও কতিপয় পুলিশ অফিসার পশুদের অবিরাম গুলিবর্ষণে বেশীক্ষণ টিকে থাকতে পারে নাই। পাক সেনারা থানায় ঢুকেই তাদের সবাইকে বন্দী করে। এরপর বহু পাক সেনা আমাদের দিকে গুলিবর্ষণ করতে করতে অগ্রসর হতে থাকলে আমরা গুলিবর্ষণ শুরু করি এবং প্রাণপণে পশুদের প্রতিরোধ করতে থাকি। এভাবে আমরা সারারাত শত্রসেনাদের প্রতিরোধ করতে থাকি। সকালে সাড়ে পাঁচটায় ওরা থানার কলোনী সশস্ত্রভাবে ঘেরাও করে ব্যাপক তল্লাশী আরম্ভ করে এবং আমাদের সবাইকে বন্দী করে। আমরা থানায় পুলিশের সাধারণ সিপাহী, উচ্চপদস্থ পুলিশ অফিসারসহ মোট ৪৫ জন ওদের হাতে বন্দী হয়েছিলাম। আমাদের সাথে বাইরের আরও ৫০ জন পুলিশ বন্দীকে রাখা হয়েছিল। আমাদের সবাইকে থানার দেকার মিটেট মে শো যাও” বলে আমাদেরকে উপড় করে লাথি মেরে শুইয়ে দেয়। সকাল ছয়টা থেকে নয়টা পর্যন্ত তিন ঘন্টা আমাদেরকে বেগম পিটানো হয়। হাতের বেত, বন্দুকের নল এবং যার হাতে যা ছিল তাই দিয়ে আমাদের উপর এলোপাতাড়ি পিটুনি চলতে থাকে। “শালা মালাউন, শোয়ার কা বাচ্চা আভী জয় বাংলা করতে থাকে আর অবিরামভাবে প্রহার করতে থাকে। আমার ঘরে নৌকার সুন্দর আর্ট করা গ্রাম বাংলার একটি দেওয়াল চিত্র দেখে আমাকে আরও বেশী প্রহার করতে থাকে। আমাদের সি, আই, মিঃ মোয়াজ্জেম হোসেন, লজ্জায় এবং অপমানে বিমূঢ় হয়ে সারাদিন হাউমাউ করে পাগলের মত কাঁদতে থাকেন। তার দু’ছেলেও তার সাথে বন্দী হয়ে চরম অত্যাচারের শিকার হয়েছিল। তিন ঘন্টা থানার সামনের মাঠে বেদম কারো হত পা ভেঙ্গে গিয়েছিল। এরপর আমাদের প্রায় ৪০ জন কে এলোপাতাড়ি পিটাতে পিটাতে থানার একটি আট ফুট প্রশস্ত ও দশ ফুট চওড়া ছোট কামরায় ঠাসাঠাসি করে চাউলের বস্তার মত গুদামজাত করে রাখা হয়। আমরা বেগমভাবে প্রহৃত হওয়ার পর থানার সম্মুখে প্রাঙ্গণে মানুষের তাজা রক্তে ভরপুর দেখেছি। আমাদের থানা হাজতে একজন আসামী ছিল তাকেও গুলি করা হয়। কিন্তু সে মরে নাই, আধমরা ভাবে ভীষণ যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিল। আমরা ছোট কামরায় প্রবেশ করার সময় দেখলাম আমাদের দু’জন শহীদ সিপাহীর লাশ থানার পিছনের মাটিতে পোত হচ্ছে। সারারাত আমরা সকল সিপাহী বন্দী দাঁড়িয়ে থেকে যন্ত্রনায় কেঁদেছি, সাংঘাতিক যন্ত্রণা ভোগ করেছি। ওরা মেশিনগান নিয়ে সর্বক্ষণ প্রহরায় ছিল। পরের দিন ২৭শে মার্চ সকাল সামনে দাঁড় করিয়ে রেখে বলে, “যাও শালা লোগ পিয়ো”। ঐ পানিতে পশুরা নেমে সকাল থেকে গোসল কারায় পানি দূষিত ও বিষাক্ত হয়ে গিয়েছিল। আমাদের বন্দীদের মধ্যে কতক সেই পচা পানি দিয়েই হাত মুখ ধুয়ে নিল, তৃষ্ণায় একেবারে দিশাহারা হয়ে অনেকে পানি খেয়ে নিল, অনেকেই সে পানি স্পর্শ করতে পারলো না। আমরা পানির হাউজের সামনে যাওয়ার সময় লক্ষ্য করলাম পূর্বের দিন যেখানে আমাদের দু’জন