পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৫৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○○b বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড উত্তরে তিনি সাক্ষাৎকারের সুযোগ পান এবং পরে বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারী মহাবিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। একসময় তিনি জগন্নাথ মহাবিদ্যালয়ে গণিত বিভাগের অধ্যক্ষ ছিলেন। সেখান থেকে তিনি গণিত শাস্ত্রের বিশেষজ্ঞ হিসেবে উন্নয়ন বিজ্ঞান ও কারিগরি বিদ্যা শিক্ষণ কেন্দ্রে (আই, এ, এস, টি.টি) যান। সেখানে তিনি বৎসরখানেক ছিলেন। অধ্যাপনা জীবনে আজাদ বৃত্তি নিয়ে আর একবার যুক্তরাজ্যে যান। এবার তিনি ম্যানচেষ্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতশাস্ত্রে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী, মেঘবিজ্ঞানে ডক্টরেট এবং তরল পদার্থ সম্পর্কিত বলবিজ্ঞানে ডিপ্লোমা নেন। এছাড়া গণিতশাস্ত্রে পাণ্ডিত্যের জন্যে তিনি লন্ডনের রাজকীয় আবহাওয়া বিজ্ঞান সমিতি, যুক্তরাজ্যের ফলিত গণিত সমিতি এবং বোষ্টনের আবহাওয়া বিজ্ঞান সমিতির ফেলো নির্বাচিত হন। ম্যানচেষ্টারে তিনি কিছু দিন সার্বক্ষণিক অধ্যাপক ছিলেন। সার্বক্ষণিক এবং স্থায়ী অধ্যাপকের পদও তাকে দেয়া হয়। কিন্তু মা, ভাইবোনদের কথা ভেবে তিনি ফিরে আসেন। অস্বাভাবিক পরিস্থিতির দরুন যুদ্ধের আগে কয়েকদিন আজাদের সাথে আমি যোগাযোগ রক্ষা করতে পারিনি। হঠাৎ তাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার খবর পেলাম ১৭ই ডিসেম্বর। আমি সেদিন পাড়ার মুক্তি যোদ্ধাদের সম্বর্ধনার আয়োজনে ব্যস্ত। কাজের চাপে সেদিন আজাদের বাসায় যেতে পারিনি, শুধু মুক্তিবাহিনীর কাছে আজাদের সন্ধানের জন্যে অনুরোধ জানিয়েছি। পরদিন তার বাসায় যাওয়ার উপক্রম করছি, তখনই এলো সেই শেষ খবর। আজাদ ফিরেছেন। কিন্তু নিম্প্রাণ, ক্ষতবিক্ষত দেহে, রায়েরবাজারের বধ্যভূমি থেকে। খবরটি শোনামাত্র আমার স্ত্রী কাঁদতে শুরু করেছিলেন। তাঁকে নিয়ে কোনক্রমে আজিমপুরের দায়রা শরীফের দিকে ছুটছিলাম। আজাদের বাসা দরগার ভেতরে। সেই দরগার মর্যাদাহানি করে বদর বাহিনীর পাঁচটি খুনী ১৫ই ডিসেম্বর সকালে তাদের বাসায় ঢুকে পড়ে। প্রথমে তারা আজাদের সামনে রিভালবার ধরে তাঁকে নিয়ে ঘুরে ঘুরে অকারন তল্লাসী চালায়। তারপর নিরপরাধ আজাদকে বাসি মুখে ধরে নিয়ে যায়। ছোট বোনটি তখন তাদের পায়ে ধরেছিল। মা, বার বার তাদের বুকে জড়িয়ে ধরে বলেন, বাবা তোমরা বাঙ্গালী, তোমরাও আমার ছেলে, ওকে তোমরা ছেড়ে দাও। কিন্তু কেউ তাঁর কথা শোনেনি, নরপশুরা এই নারীকে প্রতিবারই প্রচণ্ড ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছে। সেদিন তিন ঘন্টার জন্যে সান্ধ্য আইন উঠে যায়। তখন আজাদের ছোট ভাই ইভনিং পোষ্ট’-এর নেওয়ার জন্যে নানাভাবে চেষ্টা করেন। কিন্তু কোন ফল হয়নি। শেষ পর্যন্ত তাকে পাওয়া গেল ১৭ই ডিসেম্বর বিকেলে, ডঃ রাবিবসহ আরো কয়েকজন জ্ঞানীগুণীর লাশের পাশে। দৈনিক বাংলা, ৭ জানুয়ারী, ১৯৭২ আ, ন, ম, গোলাম মোস্তাফা আনম গোলাম মোস্তফাকে আলবদরের জল্লাদরা ১১ই ডিসেম্বর সকাল ন’টায় তাঁর গোপীবাগের বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়। বদর বাহিনীর তিনজন জল্লাদ বাসায় এসেছিল। বলেছিল, আপনার সাথে কিছু কথা আছে, বাইরে আসুন।