পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৫৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○ >の বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড মোস্তফা তখন তাঁর নয় মাসের শিশুসন্তান অভীকে কোলে নিয়ে পায়চারী করছিলেন। বাচ্চাকে নামিয়ে রেখে তিনি ওই জল্লাদদের সাথে বেরিয়ে যান। বেরিয়ে যাবার পরমুহুর্ত থেকে ওর খোঁজখবর শুরু হয়। আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব সবাই তার খোঁজে বেরিয়ে পড়েন। কিন্তু আকস্মিকভাবে কারফিউ জারী করায় সেদিনের মত অনুসন্ধান কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এবং একটানা কারফিউ চলতে থাকায় এই অনুসন্ধান কাজ আর শুরু করা যায়নি। ইতিমধ্যে জামাতে ইসলামীর সদস্য বলে পরিচিত পূর্বদেশের ষ্টাফ রিপোর্টার চৌধুরী মঈনুদ্দীনের শরণাপন্ন হয়েছিলো অনুসন্ধানকারীরা। হয়, তখনও কে জানতো এই চৌধুরী মঈনুদ্দীনই ছিল আলবদর বাহিনীর অপারেশনাল ইনচার্জ। মোস্তফার খোঁজে বেরিয়েই জানা গেলো বদর জল্লাদদের আগ্রাসী ক্ষুধার কথা। জানা গেল এই দিনই ভোরে ইত্তেফাকের কার্যনির্বাহী সম্পাদক জনাব সিরাজউদ্দীন হোসেনের গ্রেফতারের কথা। আরো অনেকের বাড়ীতে তাদের হানা দেবার কথা। তার ভাইয়েরা, আত্মীয়স্বজনেরা, বন্ধুবান্ধবরা, রায়ের বাজারের বিলের বধ্যভূমিতে পাগলের মত খুঁজে ফিরেছে তাঁর লাশ। কিন্তু না, কোন সন্ধান তাঁর মেলেনি। মনজুর আহমদ দৈনিক বাংলা, ২৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১ ডাক্তার মোহাম্মদ মোর্তজা তাঁর সঙ্গে শেষবার কথা হয়েছিল একাতুরের মার্চ মাসের সম্ভবতঃ বাইশ তারিখে। ঢাকা আন্দোলনের সম্ভাবনা, পরিণাম ইত্যাদি। তারপর ২৭শে মার্চ কাফিউ বিরতির সময় মোটরসাইকেলে তাঁকে ছুটে যেতে দেখেছিলাম। আমি ছিলাম সপরিবারের সশঙ্ক, আশ্রয়সন্ধানী। কথা হয়নি, পরে আর দেখাও হয়নি। স্বাধীনতার পর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ফিরে জানলাম, যে সমস্ত প্রিয় পরিচিত ঘনিষ্ঠ মুখ চিরতরে হারিয়ে গেছে, তিনি আছেন তাঁদের মধ্যে। কেননা মোহাম্মদ মোর্তজা শুধু ডাক্তার ছিলেন না, ছিলেন সমাজ সচেতন, রাজনীতি সচেতন ব্যক্তি, ছিলেন লেখক। মোহাম্মদ মোর্তজা চব্বিশ পরগনার বাদুরিয়া থানার চন্ডীপুর গ্রামে ১৯৩১ সালেন ১লা এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৬ সালে তিনি ম্যাট্রিক পাশ করেন কলকাতা বালিগঞ্জ সরকারী হাই স্কুল থেকে। তারপর কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ১৯৪৮ সালে আই,এস,সি,পাশ করে ঢাকায় চলে আসেন এবং ১৯৫৪ সালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এম,বি,বি,এস ডিগ্রী লাভ করেন। ডাঃ মোহাম্মদ মোর্তজা ১৯৫৫ সালের ১৯শে নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী মেডিক্যাল অফিসার পদে যোগদান করেন এবং নিহত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ঐ পদেই অধিষ্ঠিত ছিলেন। শুনেছি, ডাঃ মোর্তজা কিছুকাল যাবৎ ঘনিষ্ঠভাবে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছিলেন। তাঁর কিছুটা পরিচয় মেলে কপোত পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত তাঁর রাজনীতির পরিচয় প্রবন্ধে। এছাড়া অধুনালুপ্ত ‘গণশক্তি’ পত্রিকায় তিনি বেনামে প্রবন্ধ লিখতেন বলে শুনেছি। তিনি ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেনঃ সমাজতন্ত্র নামে একটা বই লিখবেন। সে ইচ্ছা পূর্ণ হয়নি।