পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৫৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○ めb বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ শহীদ চার ভাই সচিত্র স্বদেশ বিজয় দিবস সংখ্যা ১৮ ডিসেম্বর, ১৯৭২ শহীদ চার ভাই মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চার ভাইয়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ক্যাপ্টেন মোজাম্মেল হোসেন বললেন, “১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ। দেশ রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত সশস্ত্র বাহিনী পরিণত হলো ঘাতক বাহিনীতে। ওরা পশুশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লো নিরস্ত্র জনগণের উপর। আমাদের তখন বাসা ছিলো মগবাজারের মধুবাগে। রাজারবাগের পুলিশ বাহিনীর উপর খান সেনাদের আক্রমণ শুরু হলো। আমরা ক’ভাই আমাদের এম এল, রাইফেল, দোনালা বন্দুক এবং হাতে বানানো গ্রেনেড নিয়ে এগুলাম। পজিশন নিলাম মালিবাগ মোড়ে। প্রথম কাউন্টার হতেই দেখলাম দ্রুত বেগে ট্রপ ছুটে আসছে রাজারবাগ থেকে। পিছু হটে আসা পুলিশ সদস্যদের ফেলে যাওয়া কয়েকটা রাইফেল নিয়ে আমরা মগবাজারে ফিরে এলাম। পরবর্তী দিনগুলো কাটলো অবর্ণনীয় ভীতির মধ্য দিয়ে। ঢাকা প্রায় জনশূন্য হয়ে আসছে। সবাই পালাচ্ছে। এমন এক সময় রেডিওতে মেজর জিয়ার ভাষণ শুনে ভরসা পেলাম। এদিকে পাবনা (আমাদের দেশের বাড়ী) থেকে খবর এলো, পাবনা তখনও মুক্ত। ২৬ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের একটা কোম্পানী পাবনা অপারেশনে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। সেখানে আমার দুই ভাই এমনকি বৃদ্ধ বাবাও যোগ দিয়েছেন প্রতিরোধ যুদ্ধে। ঢাকায়ও প্রতিরোধ সংগ্রাম শুরু হয়েছে। মে মাসের প্রথম দিকে বিচ্ছিন্নভাবে হলেও বিস্ফোরণ এবং গুলী বিনিময় চলছে এখানে, ওখানে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি গ্রুপ ২ নং সেক্টর থেকে ঢাকায় এসে গেছে। এর মধ্যে জয়নালের গ্রুপের সঙ্গে বাডডায় গিয়ে দেখা হয়। এক বাড়ীতে অস্ত্রশস্ত্রের সন্ধান পেলামঃ ওদের কিছু অস্ত্র আমাদের বাসায় নিয়ে আশা হলো । এবং তখন থেকেই সক্রিয়ভাবে কাজ শুরু হলো। আমরা বেশ কয়েকটা অপারেশন চালিয়েছি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে রামপুরা পাওয়ার স্টেশন এবং খিলগাঁও জেনারেটরে গ্রেনেড নিক্ষেপ প্রভৃতি। ইতিমধ্যে নিউমার্কেট, দিলকুশা ও জিপিও’র সামনে বেশ কয়েকটা বিস্ফোরণ ঘটে আশ্বস্ত হলাম যে, যাক আমরা শুধু একা নই। অন্যত্রও চলছে প্রতিরোধের তৎপরতা। এদিকে আমাদের কথা ততদিনে জানাজানি হয়ে গেছে। খবর পেলাম যে-কোনদিন বাসা রেইড’ হতে পারে। ঐ রাতেই আমরা বাড়ী ছেড়ে চলে গেলাম। স্ত্রী-পুত্র-কন্যাদের অন্যত্র রেখে এসে কুমিল্লা হয়ে সীমান্ত পেরোবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলাম। খবর পেলাম পাবনার বাড়ীও লুট হয়ে গেছে। আবার ঢাকা হয়ে আরিচা-নগরবাড়ীর পথ ধরে পাবনা হয়ে সীমান্ত পেরোবার সিদ্ধান্ত নিলাম। নগরবাড়ী ঘাটে নামার সাথে সাথে খান সেনাদের হাতে ধরা পড়ে গেলাম। নিয়ে যাওয়া হলো স্থানীয় ক্যাম্পে। সেখানে কয়েকটা দিন কাটলো প্রতি মুহুর্তে মৃত্যুর আশংকায়। ক্যাম্পের অনেককেই পালাক্রমে ফায়ারিং স্কোয়াডে তোলা হলো। চতুর্থ দিনে আমাদের বধ্যভূমির দিকে নিতে এসেছে। আমাদের তোলা হলো একটা ট্রাকে। এ সময় আমাদের সব ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেলো। মরতে যখন হবেই তখন শেষ চেষ্টা করে দেখা যাক। সমস্ত শক্তি আর সাহস নিয়ে মুহুর্তের মধ্যে Revolt করে বসলাম। সিগারেট ধরাবার নাম করে এক সেন্ট্রির থুতনিতে মারলাম ঘুষি। চারদিনের ক্ষুৎপিপাসা ও মৃত্যুর ভয়ে জর্জরিত দেহে জানি না অত শক্তি সেদিন কোথেকে পেলাম। ততক্ষণে আমার অন্যান্য সহযাত্রীরা অন্যান্য সেন্ট্রি ও চালককে ঘায়েল করে ফেলেছে। হাইওয়ে ফেলে গ্রামের রাস্তা ধরে আমরা প্রাণ নিয়ে পালালাম। ওপারে গিয়ে দেখলাম স্বাধীনতা যুদ্ধের আর এক চিত্র। দেখা করলাম যুদ্ধকালীন প্রধানমন্ত্রী মরহুম তাজউদ্দিন সাহেবের সাথে। তাঁকে আগে থেকে চিনতাম। গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ, কে, খন্দকারের সাথে দেখা করে অকপটে জানালাম, “এখানে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। আমি একা সৈনিক। আমি যুদ্ধ করতে এসেছি আরাম