পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৫৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(8Ջ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড s fান্তর ৩ এপ্রিল, ১৯৭১ এখান থেকে এরা কোন ভবিষ্যতে পাড়ি দেবে? ইছামতীর তীরে সারি সারি নৌকা নোঙ্গর করেছে অনেক দিন হল। কিন্তু ঐ সব নৌকোর মধ্যে যারা রয়েছে তারা যে এরপর কোথায় পাড়ি দেবে তা তারা জানে না। অন্য কেউই কি জানে? ঐ নৌকোগুলি করেই তারা পূর্ব বাংলা ছেড়ে এসেছে। ভিটে-মাটি, যা সামান্য সম্পত্তি ছিল তা ফেলে রেখে রাতের অন্ধকারে ওরা জন্মভূমি ছেড়েছে। পেছনে খান সেনা আর তাদের সাগরেদদের অত্যাচারের স্মৃতি, সামনে অজানা ভবিষ্যৎ ভারতের তীরে এসে যখন নীেকো ভীড়ল তখন নিশ্চয়ই পায়ের তলায় শক্ত মাটি পাওয়ার আশায় ওদের বুকটা দুলে উঠেছিল। কিন্তু শক্ত মাটি জুটল কই? এখনও বেশ কিছু বৃদ্ধ প্রৌঢ়, যুবক, নারী ও শিশুর জীবন দিনরাত ইছামতীর দোলায় দুলছে। নৌকোর মধ্যেই তাদের সংসার রান্না-খাওয়াশোয়া। নদীর জলে স্নান। আর নদীর ধারেই স্বাস্থ্যরক্ষার সব নিয়ম-কানুন তুচ্ছ করে মলমূত্র ত্যাগ। হাসনাবাদের মাটিতে তারা নামছে, কিন্তু সেখানে বা অদূবে টাকীর শিবিরে ঠাই নাই ঠাই নাই। নতুন করে আর রেজিষ্ট্রেশন হচ্ছে না। আসছে। ওরা শুনেছে, বারাসতে নাকি নতুন রেজিষ্ট্রেশন হচ্ছে। সেখানে যাবে। -হাঁটবে অতদূর? -আর কী করা বাবু? নৌকোয় আর কদিন কাটে? ছিল সের পাঁচেক চাল। তাই এক বেলা করে খেয়ে পাঁচ সাত দিন চলছে। শুনছি ক্যাম্পে নাকি চাল-ডাল দিতে আছে। -ঠিক জানো তো যে বারাসতে গেলে জায়গা পাবে? -তা ঠিক জানি না। যাই, দেখি ঘুরে গদি না-পাই তবে না খেয়েই মরব। মরণ যদি কপালে থাকে এ পারেই মরব। সবাই যে হাঁটা পথ নিয়েছে তা নয়। যারা খোঁজখবর রাখে তারা কাছের রেল ষ্টেশন থেকে হাসনাবাদ-বারাকত ট্রেনে চেপে বসছে। ফলে ট্রেনে ভীড় খুব স্থানীয় লোকের যাতায়াতে অসুবিধে। কিন্তু সেও তো অজানার উদ্দেশ্যেই পাড়ি। কারণ এতদিন পায়ের নীচে মাটি না-থাকা মাথার ওপরে নৌকোর ছই ছিল। যাওয়ার আগে নীেকোগুলো ওরা জলের দরে স্থানীয় লোকের কাছে বিক্রি করে দিয়ে যাচ্ছে। ইংরিজি জানলে ওরা বলতে পারত, উই হ্যাভ বারন্ট আওয়ার বোটস। বারাসাতে বা অন্য কোথাও ঠাই না পেলে ফিরে আসার জায়গা সত্যিই ওদের নেই। তবু এক হিসেবে ওদের ভাগ্যবান বলে মনে করতে পারা যাবে বৈকি? দারুণ দুর্যোগের সময় ওরা একটা আড়ালে থাকতে পেরেছিল। ছইয়ের ওপর মাদুর, চাদর, কোথাও বা রঙ্গিন লেপ দিয়ে ছিদ্র ঢাকার ব্যবস্থা করেছিল। কিন্তু আরো এগিয়ে এসে টাকী বাস স্টাণ্ডের কাছে যাদের দেখা পেলাম তাদের মাথার ওপর ঢাকা বলতে গাছের ডাল। ওখানে কতকগুলি পরিবার গাছতলায় দিন আষ্টেক ধরে রয়েছে। বর্ষার মধ্যেও ঐ ভাবেই কেটেছে। জলে গা ভিজছে, যা সামান্য জামা-কাপড় আছে তাও ভিজছে, মাদুর-চাদরও ভিজেছে। কাপড় আবার গায়েই