পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৫৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(#88 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড সরকারী কর্মীরা যথেষ্ট করেছেন, তবু সমস্যা থেকেই যায়। পরাণ মণ্ডলের রেশন কার্ড হারিয়ে গেছে। মাথা খুঁড়লেও কি আর খুঁজে পাবে? সরকারী কেরাণী বাবুর পা ধরে পড়েছে, বাবু আমায় আর একটা কার্ড করায়ে দ্যান। পরাণের কান্নার সঙ্গে অফিসের ঠিক বাইরে এক বুড়ির কান্নার অবশ্য অনেক তফাৎ। তার বিশেষ জ্ঞান আছে বলে মনে হল না। একবার করে বড় নিঃশ্বাস নিচ্ছে। আর ডুকরে কেদে উঠছে। চোখ দুটো প্রায় ঠেলে বেরিয়ে আসে আর কি বুড়িকে ঘিরে ক্যাম্পেরই কতো লোক ভীড় করেছে। বুড়ি পূর্ব বাংলা থেকে এসেছে ওরা ওকে ক্যাম্পে দিয়ে চলে গেছে। আরো কাছে কাছাকাছি কোথায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে। বুড়িকে দেখার কেউ নেই। ওখানেই শুচ্ছে, ওখানেই যা পারে খাচ্ছে এবং মলমূত্র ত্যাগ করছে। ক্যাম্পের ভারপ্রাপ্ত অফিসার একটা হতাশা সূচক আওয়াজ করে বললেন, একে নিয়ে কী করি বলুন তো? বুড়ির দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে দেখি ওদিকে কিছু ছেলে পান বেচছে। স্থানীয় ছেলে নাকি? না, ক্যাম্পেরই ছেলে। বাজার থেকে কিছু পান, চুন, সুপারি কিনে ঝুড়ি নিয়ে বসে গেছে। কত বিক্রি হয়? সামান্য। আজ তো মাত্র পনের পয়সা ব্যাচলাম। সেই নিরুদ্বেগ নেই। প্রধান প্রশ্ন, এরপর কী? প্রায় সকলেই ঠিক করে ফেলেছে, দেশে ফেরা আর নয়। জানি না, সরকার এদের কী করে দেশে ফেরাবেন। সেটাও তো বোধহয় পরের প্রশ্ন। ক্যাম্পে অনেকেরই ভাবনা, এরপর সরকার কোথায় পাঠাবেন? কিছু কিছু লোক যে বাংলার বাইরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তা ওরা শুনেছে। তবে যেখানেই পাঠান বাবু ভারতের মধ্যে যেখানেই পাঠান যাব। সরকার আমাদের জন্য এত করছেন, খেতে দিচ্ছেন, পরতে দিচ্ছেন, আমরা কথা শুনব বৈকি।” ক্যাম্পের বাইরে ছোটোখাটো জটলা। ক্যাম্পে জায়গার খোঁজে অনেকে এসেছে। কিছু লোক বারাসতের পথে থেমেছে। শুনছি, এই ক্যাম্পে থেকে নাকি কাল আরো টিকিট দেবে? আরে না, না, ওসব বাজে কথা। এখানে নতুন লোক নেওয়া বন্ধ। চল, চল, বারাসতেই শেষ চেষ্টা। ওরা যাবে অবশ্যই, ক’জন বারাসত পৌছবে জানি না। পৌছলেও হয়ত শিবিরে জায়গা পাবে না। অনেকে তার আগেই এদিক ওদিক ছড়িয়ে পড়বে। কোন পরিত্যক্ত বাড়িতে, অথবা কোনো বাড়ির দাওয়ায় আশ্রয়। কিম্বা হয়ত গাছতলায়। তারপর পথশ্ৰম বা রোগে মৃত্যু। অথবা কোন অসৎসঙ্গে পড়তেই বা বাধা কোথায়? ফেরার পথে বারাসতে রাস্তার দু’ধারে এমন অনেককেই দেখলাম। দু’একটা স্কুল-বাড়িও এখন বেসরকারী শিবির। অসংখ্য লোক, হৈ চৈ নোংরা হয়ে উঠছে চার দিক। এদের জন্যে কোথায় কী ব্যবস্থা? হাসনাবাদ থেকে যারা শেষ আশায় বুক বেঁধে হাঁটতে শুরু করেছে তাদের গন্তব্যের শেষ হবে কোথায়? -দেবব্রত মুখোপাধ্যায়