পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩২ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড বুড়ীগঙ্গা নদীতে ভাসমান হাত-পা, চোখ বাঁধা অসংখ্য যুবকের লাশ তুলেছি। আমরা ৩০শে মার্চ ঢাকা বুড়ীগঙ্গা নদী থেকে তিন-ট্রাক লাশ তুলে স্বামীবাগে ফেলেছি। পাকসেনারা কুলি দিয়ে পূর্বেই সেখানে বিরাট বিরাট গর্ত করে রেখেছিল। পরের দিন আমরা মোহাম্মদপুর এলাকার জয়েন্ট কলোনীর নিকট থেকে সাতটি পচা-ফুলা লাশ তুলেছি। ইকবাল হলে আমরা কোন লাশ পাই নাই। পাক সেনারা পূর্বেই ইকবাল হলের লাশ পেট্রোল দিয়ে জুলিয়ে ভস্ম করে দেয়। বস্তি এলাকা থেকে জগন্নাথ হলে আশ্রয়ের জন্য ছুটে আসা দশ জন নর-নারীর ক্ষত বিক্ষত লাশ তুলেছি। ফেরার পথে আমরা ঢাকা হলের ভিতর থেকে চারজন ছাত্রের উলঙ্গ লাশ তুলেছি। ১৯৭১ সনের ১লা এপ্রিল আমরা কচুক্ষেত, ড্রাম ফ্যাক্টরী, তেজগাঁও, ইন্দিরা রোড, দ্বিতীয় রাজধানী এলাকাস্থ ঢাকা বিমান বন্দরের অভ্যন্তর, ঢাকা ষ্টেডিয়ামের মসজিদের পূর্ব দক্ষিণ দিক থেকে কয়েকজন ছাত্রের পচা লাশ তুলেছি। এর পর থেকে প্রতিদিন আমরা বুড়ীগঙ্গা নদীর পাড় থেকে হাত-পা, চোখ বাঁধা অসংখ্য যুবকের লাশ তুলেছি। রায়ের বাজার ইটখোলায় আমরা কয়েক হাজার বাঙ্গালী যুবকের লাশ তুলেছি। মিরপুর এক নম্বর সেকশনের রাস্তা পার্শ্বে ছড়ানো, ছিটানো, বাঙ্গালী যুবকের লাশ তুলেছি। মোহাম্মদপুর গনকটুলি, ধানমণ্ডি, কলাবাগান, কাঁঠালবাগান, এয়ারপোর্ট রোডের পার্শববর্তী এলাকা, তেজগাঁও মাদ্রাসা থেকে অসংখ্য মানুষের পচা-ফুলা লাশ তুলেছি। অনেক লাশের হাত-পা পেয়েছি মাথা পাই নাই। মেয়েদের লাশ সবই উলঙ্গ ও ক্ষত বিক্ষত দেখেছি। কিছুদিন পর আমি কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মত কারখানায় গিয়ে সাধনা ঔষধালয়ের মালিক প্রফেসর যোগেশচন্দ্র বাবুর বেয়নেটের আঘাতে ক্ষত-ক্ষিত রক্তাক্ত তাজা লাশ তুলে স্বামীবাগ ফেলেছি। পাক পশুরা যোগেশ বাবুর সর্বস্ব লুণ্ঠন করে তাকে তার নিজস্ব কামড়ায় বক্ষে বেয়নেট ঢুকিয়ে দিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে রেখে যায়। পরে তার পবিত্র ক্ষত-বিক্ষত লাশ নীচে নামিয়ে এনে খাটের উপর রেখে দিয়েছিল। আমরা গিয়ে দেখলাম প্রফেসর যোগেশ বাবুর লাশ জীভ বের করে হা করে আছে। গায়ে ছিল ধুতি আর গেঞ্জি।