পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ֆb বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড | N8 ll ছোটন ডোম রেলওয়ে সুইপার কলোনী ২২৩ নং ব্লক, ৩নং রেল গেট ১৯৭১ সনের ২৮শে মার্চ সকাল আটটায় ঢাকা পৌরসভার সুইপার সুপারভাইজার পঞ্চম আমাদের নিতে আসেন। পাকসেনারা রাজধানী ঢাকার বহু লোককে নির্বিচারে হত্য করার ফলে বিভিন্ন এলাকায় যে সকল লাশ পচে ফুলে রাস্তায় পড়ে আছে তা তুলে ধলপুর ময়লা ডিপোতে ফেলার জন্য রেলওয়ে কলোনী থেকে আমাকে ও দুখী লালকে ডেকে নিয়ে যায়। আমরা ঢাকা পৌরসভায় গিয়ে সেখানে আমার ভাতিজা ডোম গাংওয়া, আমার মেয়ে জামাই হরি ডোম, সন্টু, ফেকু ডোম, দরবারী, গণেশ, লেমু, লালবাহাদুর, খুবী, পরদেশী অর্জুন সবাইকে হাজির দেখেছি। আমার দলে আমরা-আমি, দরবারী, মহেশ, কানাই, হরি ফেকওয়া এই ছয়জন ছিলাম। সুইপার সুপারভাইজার পঞ্চ আমাদের সাথ ছিলেন। আমাদের ট্রাক ইংলিশ রোডের মুখে রায়সাহেব বাজারের প্রবেশ পথ দিয়ে গোয়ালনগরের স্কুল ও মন্দিরের সম্মুখে যেয়ে থামানো হয়। মন্দিরের ভিতর প্রবেশ করে হাফ শার্ট ও হাফ প্যান্ট পরা এক চৌদ্দ বছরের সুন্দর ফুটফুটে ছেলের সদ্য মৃত লাশ দেওয়ালে ঠেশ দিয়ে পড়ে থাকতে দেখলাম-ছেলেটিকে রাস্তা থেকে তাড়িয়ে নিয়ে পিছন দিক থেকে হাত বেঁধে মাথার পিছন দিক থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। মাথার পিছন দিক দিয়ে অঝোরে তাজা রক্ত ঝরতে দেখলাম- সদ্য মৃত তাজা লাশ, হাত দিয়ে বড় আদরের সাথে ট্রাকে তুলে দিলাম। কচি ছেলের তুলতুলে লাশ তুলতে গিয়ে আমার হৃদয় যেন কেঁপে উঠলো, হাহাকার করে উঠলো। হায়, না জানি কোন মায়ের আদরের দুলাল, চোখের মণিকে পশুরা তাড়িয়ে এন এভাবে হত্যা করে গেছে। লাশের ডাগর ডাগর চোখের দিকে তাকাতেই আমার চোখ বেয়ে পানি ঝরতে লাগলো অঝোরে, আমি কিছুতেই আমার চোখের পানি আটকে রাখতে পারলাম না। পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে রাস্তার উপর আরও একটি যুবকের তাজা লাশ মায়ের মন্দিরের নিকটবর্তী বাড়ীর অভ্যন্তরে রান্নাঘরে প্রবেশ করে সেখানে এক ঘরেই এগারটি পচা ফুলা লাশ দেখলাম- তিনজন বাইরে- অবশিষ্টগুল পাল-এর নীচে। একজন অর্ধ বয়সের রূপসী মহিলা মাথায় কোমর পর্যন্ত লম্বা চুল, হরিণের মত মায়ময় চোখ, লাবণ্যময় দেহ, সারা দেহের উপর যেন ভগবান দুধের সর বিছিয়ে দিয়েছিলেন। প্রবেশপথে দুটি যুবক ও একজন কিশোরের লাশ দেখলাম-ঘরের ভিতরে পালং এর নীচে থেকে আরও ছয়জন যুবক ছেলের লাশ তুলে আনলাম। পাশের ঘরে প্রবেশ করে দু’জন যুবক ছেলে ও একজন মধ্যবয়সী লোকের পচা লাশ তুলেছি। উপরোক্ত সমস্ত লাশ আমি ধলপুর ময়লার ডিপোতে গিয়ে দেখলাম- বড় বড় গর্ত করে কুলিরা বসে আছে- ট্রাক থামিয়ে আমরা সব লাশ গর্তে ঢেলে দিলে কুলিরা মাটি ফেলে গর্ত বন্ধ করে দিল। লাশ উঠাবার জন্য আমাদের প্রত্যককে মাত্র তিন টাকা করে দিলে আমি সারাদিন না খেয়ে লাশ তুলতে অস্বীকার করে চলে আসি। সারাদিন লাশ তুলে আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। পরেরদিন থেকে আমি আর লাশ তুলতে যাই নাই। টিপসহি ছোটন ডোম Գ-8-Գ8