পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ֆի, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড Ꮣ ᎼQ ! পঞ্চম সুইপার সুপারভাইজার ঢাকা পৌরসভা সুইপার কলোনী, গণকটুলী নবাবগঞ্জ, ঢাকা আমি ১৯৭১ সনের ২৫শে মার্চ কালরাতে গণকটুলী পৌরসভার সুইপার কলোনীতে ছিলাম। এখানে আমাদের পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা আমার সাথে অবস্থান করছিল। সেইদিন রাত থেকে আমাদের কলোনীর চারিদিকে সান্ধ্য আইন জারী করে বর্বর পাক সেনারা ই,পি, আর, হেড কোয়ার্টারে বাঙ্গালী প্রহর গুনছিলাম। বাইরে চলছিল চারিদিকে বৃষ্টির মত গোলাবর্ষণ। ২৭শে মার্চ সকাল নয়টায় পাক সেনারা সান্ধ্য আইন কিছুক্ষণের জন্য উঠিয়ে নিলে সবাই সপরিবারে ঢাকার বাংলাদেশ মাঠ (পাকিস্তান মাঠ- আগা সাদেক রোড) সংলগ্ন সুইপার বস্তিতে আশ্রয় গ্রহন করি। গণকটুলীর আমাদের সুইপার কলোনীর একজন পুরুষ সুইপার মুখ ধোয়ার সময় এবং কাউসিলা দেবী নামে একজন হিন্দু সুইপারকে পাক সেনারা গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করে। “পৌরসভার সকল কর্মচারীকে অবিলম্বে কাজে যোগদান করতে হবে”— রেডিও মারফত আমি এ ঘোষণা শুনে চাকুরীর স্বার্থে পৌরসভায় এসে রিপোর্ট করি। অফিসে এসে দেখলাম, পৌরসভার তৎকালীন কনসারভেন্সি অফিসার ইদ্রিস সাহেব ক্রোধান্ধ হয়ে ডোমদের ডাকছেন। তার নির্দেশে আমি, সুইপার ইন্সপেক্টর রামদীন, ডোম পরদেশী, লেমু, গণেশ এবং লাল বাহাদুর -আমরা সবাই প্রথমে ঢাকা মিটফোর্ড হাসপাতালের লাশ তুলতে যাই। আমরা সেদিন মিটফোর্ড থেকে দুট্টাক লাশ তুলেছি- সকল লাশ আমরা ওয়ার আউটকলে ফেলেছি। সেখানে পূর্বেই শ্রমিকদের দ্বারা বিরাট বিরাট লম্বা লম্বা গর্ত করে রাখা হয়েছিল। আমরা লাশ নিয়ে সেই সব গর্তে ফেলেছি। পরের দিন আমার দল আবার মিটফোর্ডে লাশ তুলতে যায়। আমরা ২৯শে মার্চ মিটফোর্ড লাশ ঘর থেকে দুট্টাক লাশ তুলেছি। পরদেশী এবং তার ভাই চুন্ন নীচে দাঁড়িয়ে পচা, ফুলা, গুলিতে ক্ষতবিক্ষত লাশ তুলে ট্রাকের সম্মুখে এনেছে- রঞ্জিত (লাল বাহাদুর) ও গণেশ দু’জন ট্রাকের উপরে ছিল। অধিকাংশ লাশ খাকী শার্ট পরা-পুলিশের ছিল। আমরা সকল লাশ ওয়ারী আউটকলে ফেলেছি। পরের দিন আমার দল বুড়ীগঙ্গা নদীর পাড় ও শ্যামবাজার থেকে লাশ তুলেছি। তিনদিন পর আমার দল রমনা কালীবাড়ীতে লাশ তুলেছে। ডোম রঞ্জিত, গণেশ ও বদলু ছয়টি গন্ধ পোড়া লাশ তুলেছে। রমনা কালী বাড়ী পুকুরের পাড় থেকে রশি দিয়ে হাত, পা ও চোখ শক্ত করে বাঁধা দুজন যুবকের লাশ তুলেছে। ইহা ছাড়া আমার দল রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন রাস্তা থেকে বহু লাশ তুলেছে। বুড়ীগঙ্গা নদী থেকে আমার দল আমার উপস্থিতে যেসব বাঙ্গালী যুবকের লাশ তুলেছে তার প্রায় সবই চোখ হাত-পা বাঁধা ছিল। আমার দল বেশ কয়েকদিন পরে ঢাকা হলের ভিতর থেকে তিন জন যুবকের পচা লাশ তুলেছে। স্বাক্ষর/ পঞ্চম Տ S-(f-Գ8