পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

& 8 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড լլ Ջ(ծ կ আবুল কালাম আজাদ নাগরপুর টাংগাইল ১৬ই এপ্রিল টাঙ্গাইলে ডি.সি, জালাল আহমদ সাহেব এবং এ, পি, নুরুজ্জামান সাহেব আসেন লুঙ্গী পরা অবস্থায়। সব ঘটনা বলেন এবং ২/৩ দিন থাকেন আমার ওখানে গোপনে। ওঁদের বন্ধু ছিলেন টাঙ্গাইলের জনাব আযম খান। ওঁর সাথে আলাপ করে ঠিক করা হয় কাজে যোগ দেয়ার। আযম খান গাড়ী নিয়ে এসে নিয়ে গেলেন। এই খবর পাক গোয়েন্দা বিভাগ জেনে ফেলে আযম খানের বাড়ী ঘিরে ফেলে। ওঁদের তিন জনকে ব্যাপক মারধর করে ঢাকা পাঠিয়ে দেয়। ঢাকাতে কয়েকদিন অত্যাচার করে জবানবন্দী নিয়ে তিন জনের জবানবন্দী এক হওয়ায় তাঁরা ছাড়া পান। প্রতিটি ষ্টেটমেন্টে আমার কথা ছিল। এমনকি আযম খানকে যে চিঠি পাঠিয়েছিলাম সেটিও পাক কর্তৃপক্ষের হাতে গিয়েছিলো। আমি সবসময় মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত ছিলাম। শেষ পর্যন্ত ওঁরা মুক্তি পেয়েছেন শুনে শান্তি পেলাম। ডি.সি ও এস,পি ৩০শে এপ্রিলের দিকে কাজে যোগ দেন। ১০ই মে ডি.সি’র ওখানে সভাতে পাক ক্যাপ্টেনের কথাগুলি বললেন। সভা শেষে ডি.সি, সাহেব গোপনে আমাকে ডেকে বললেন সাবধানে থেকে আর হিন্দুদেরকে বলো সাবধানে থাকতে, পূজাগুলো এখন বন্ধ রাখতে বলো- বাঁচলে অনেক কিছু করতে পারবে। আমি সে মোতাবেক রাত ১০টায় পৌছে সবাইকে ডেকে এ খবর দেই; তারা সেইমত সাবধানতা অবলম্বন করে। ভোর রাতে প্রচুর গুলির শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায়। বাড়ীতে সবাই কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। দেখলাম পাক সেনারা তিন দিক থেকে নাগরপুর আক্রমন করেছে-অত্যাচার চালাচ্ছে। আমরা গেলাম ক্যাপ্টেনের কাছে, ক্যাপ্টেন বললো তুমিই সেই ম্যাজিষ্ট্রেট যে জামুকীতে আমার বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা পাঠিয়েছিলে। তুমিই তো গতকাল হিন্দুদেরকে পালিয়ে যেতে বলেছ। আমি চুপ থাকলাম। ক্যাপ্টেন আমাকে খুব গালাগালি করলো, সেই কিছু কিছু হিন্দু ধরে এনে বেয়োনেট চার্জ করতে লাগলো। আমার খবর শুনে রাতেই অধিকাংশ হিন্দু পালিয়ে গিয়েছিলো। ফলে বহু লোক সেদিন বেঁচে যায়। ক্যাপ্টেন আমাকে ১ ঘন্টা সময় দেয় যে এর মধ্যে ১০০ হিন্দু এনে দিতে হবে। নইলে একটি বুলেট তোমার জন্য বলেই এক চড় মারে। আমি এ্যাডামেন্ট হয়ে বেশ কথা কাটাকাটি করলে ক্যাপ্টেন নরম হয়ে আমাকে গাড়ী করে নিয়ে যায়। থানায় গিয়ে দেখলাম ৮/১০ জন নিরীহ লোককে হত্যা করার জন্য রেখেছে। আমি ওরা ঝাড়ুদার বলে ওদেরকে বাঁচাই। ডাঃ কাশেম (ডেন্টিষ্ট) এবং ম্যারেজ রেজিষ্ট্রার আমার বিরুদ্ধে টিক্কা খাঁর কাছে দরখাস্ত করেছিলো মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে কাজ করায়। ঐ দিন পাক সেনারা সামনে যাদেরকে পেয়েছে তাকেই গুলি করে হত্যা করেছে। থানায় যেতে গিয়ে রাস্তার বিভিন্ন স্থানে মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখলাম। বার ঘাট, বাড়ী-ঘর সব ওরা লুট করে নেয়। আমাকে এক জায়গায় বসিয়ে রেখে ক্যাপ্টেন চলে যায়। আধ ঘন্টা পরে ডেকে পাঠায়। যাওয়ার সাথে সাথে ক্যাপ্টেন আমার বুকে রিভলবার ধরে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে মারধর শুরু করে। সেখানে ২০/২৫ জন হিন্দু লোককে শুইয়ে রেখেছে দেখলাম। চারদিকে সিপাইরা বেয়োনেট উচিয়ে ঘিরে ধরলো। আমার বিরুদ্ধে চার্জ দিলো আমার বাড়ী থেকে নাকি ৬ রাউণ্ড গুলি ছুড়েছে পাক সেনাদের উপর। অনেক কাকুতি করে ১ মিনিট