পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ჯ8 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড l ○こ l শ্রী মনোরঞ্জন দত্ত ডাকঘর- সরিষাবাড়ী ময়মনসিংহ বর্বর পাক ফৌজের অত্যাচারের কাহিনী বাংলার জনসাধারণ চিরদিন ঘৃণার সঙ্গে স্মরণ করবে। মানুষ ক্ষমতা এবং স্বার্থের মোহে কেমন ব্যবহার করতে পারে সেই দৃষ্টান্ত সামনে রেখে- শোষিত, অত্যাচারিত, ভদ্র বাঙ্গালী উদার নৈতিক মনুষ্যতের পথকে খুঁজে নেবার সুযোগ পাবে এবং তারা স্বাধীনতার সুবর্ণ স্বাদকে সুমধুর করে উপভোগ করার যোগ্যতা অর্জন করবে। আমার মনে পড়ে শহীদ আবদুল হামিদ মোক্তার, শহীদ হাসান খান, শহীদ সুরেন দত্ত, শহীদ ধীরেন বাবু এবং সমাজসেবক ওয়াছিম উদ্দিন সাহেব এবং সাব-রেজিস্ট্রার আবদুল হাই সাহেব ও আমার নিজের অমানুষিক নিপীড়নের ইতিহাস। তখনও থানা পর্যায়ে পশ্চিমা অত্যাচারের কসাইখান খোলেনি। একদিন আমাদেও থানার দারোগা আমাকে এ্যারেষ্ট করে জামালপুর হাজতে চালান দিল। অপরাধ আমরা হিন্দু তার উপর ভারত বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামীদের সহায়তা করছে- গুরুতর অপরাধ সুতরাং শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হাজত থেকে আমাকে মিলিটারী ক্যাম্পে চালান কাজ করিয়ে নেবার ফন্দি অটল। আমার আয়ু বাড়িয়ে দিল কয়েকদিন। ওরা আমাকে দোস্ত বলে। আমি কোন ভরসা পাই না- আমার আত্মারাম তো খাঁচা ছাড়া। আমাকে বলে শুধু আল্লাহকে ডাক, ইত্যাদি আশ্বাস দিয়ে আশ্বস্ত করে এবং দোভাষীর কাজ আদায় করে। যে সমস্ত স্বাধীনতকামী বাঙ্গালীদের তারা একদিক থেকে হত্যা করার জন্যে ফন্দী করছিল তাদের জবানবন্দীকে কোন রকমে উর্দু করে বুঝিয়ে দিতে হত আমাকে। দাসত্বের এতটুক স্বাধীনতার কিছু কিছু ভালো আচার ব্যবহার পেতাম আমি। এই করে আমি সুষ্ঠভাবে ভাবনাচিন্তায় সহজ মানসিকতা খুঁজে পাই। কিভাবে মুক্তি পাওয়া যাবে এবং এই মৃত্যু থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে সে কথা মনে মনে সারাক্ষণ ভাবি। দিন যেতে থাকে। আমি দিনের পর দিন অত্যাচার ও অবিচারের অমানুষিকতা প্রত্যক্ষ করতে থাকি। শিক্ষিত, অশিক্ষিত, আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা নির্বিশেষে সে কি মার, সে কি অত্যাচার- ভাষা দিয়ে সে বর্বরতা প্রকাশ সম্ভব নয়। চড়, ঘুষি, বুটের লাথি, গায়ে জুলন্ত সিগারেট গুজে দেয়া, উপরে পা বেঁধে মাথা নীচের ইতিহাস তার বর্ণনা হয় না। এই অবস্থা দেখে আমার কাণ্ডজ্ঞান লোপ পায়। অবশেষে একদিন আমাকে ও আরও কয়েকজনকে বলল যে, তোমাদের ময়মনিসিংহ পাঠানো হবে। আমাদেরকে ট্রাকে উঠতে বলল। ট্রাক চলতে থাকে কিন্তু আমি তখন দেখলাম ট্রাক ময়মনসিংহের পথে না যেয়ে উপস্থিত হলো শ্মশানঘাটে। তখন আমার আত্মা উড়ে গেল। স্মৃতির পটে পৃথিবীর আলো, মা, বাবা, জন্মভূমি ভিটে, স্ত্রী, সন্তানের মুখ ছায়ার মত কাঁপতে কাঁপতে ভেসে উঠল, তারপর দুঃখের যবনিকায় হাবুডুবু আমার পিছনে আরও বেশ কয়েকজন। ঠিক ভরা ব্ৰহ্মপুত্রের তীর বেয়ে লাইনটি। ধীরেন বাবুর বুকের সাথে সংলগ্ন মেশিনগানের নাল। মেশিনগানধারী একজন পাক সৈনিক। প্রভুভক্ত মানুষ নামধারী হিসংস্র জানোয়ার। অধমৃত