পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড l ○○ l এম, এ, রশিদ ভৈরব, ময়মনসিংহ পাক বাহিনী ভৈরবে যে নৃশংস ধ্বংসযজ্ঞ চালায় তা এক কথায় অবর্ণনীয়। তারা প্রায় দু'হাজার বাড়ী ও দোকানপাট সম্পূর্ণ ভস্মীভূত করে। ভৈরব বাজারের লক্ষ লক্ষ টাকার মালামাল লুট করে বহু ব্যবসায়ীকে সর্বস্বান্ত করে। তারা ভৈরব থানার নিরীহ সর্বমোট ২৩৭ ব্যক্তিকে হত্যা করে ও ১০৭ ব্যাক্তকে মারাত্মকভাবে আহত করে। তন্মধ্যে স্থানীয় পরিবার পরিকল্পনা অফিসার জনাব কাজী আব্দুস সামাদকেও অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে পাক বাহিনীর সামনে পড়ে। সে সময় তাঁর কাছে তাঁর একটা ব্যক্তিগত টেপ রেকর্ডার ছিল। দসু্য সৈন্যরা ওটাকে একটা ওয়ারলেস সেট মনে করে অফিস সংলগ্ন বিলের পাড়ের একটা খোলা মাঠে কোন কথা জিজ্ঞেস না করে গুলি করে হত্যা করে। এমনি ধরনের আরও অজস্র বিবরণ নিরীহ গ্রামবাসীদের হত্যায়ও পাওয়া যায়। স্থানীয় পৌরসভার প্রাক্তন সহ-সভাপতি জনাব মসলন্দ আলীকে তৎকালীন সার্কেল অফিসার (ডেভ) জনাব আমিনুল হক সাহেবের মাধ্যমে লিখিত নিৰ্ভয়ের আশ্বাস প্রেরণ করে পাক বাহিনী সম্ভবতঃ হত্যা করে। আজ পর্যন্ত তাঁর কোন খোঁজ নাই। একই সঙ্গে আরও কয়েকজন বিশিষ্ট আওয়ামী লীগ নেতা ও কর্মী যথা- জনাব হাফিজ উদ্দিন মিয়া, জনাব মতিউর রহমান, জনাব রইস মিয়া ও আরও অনেককে হত্যা করে। এই ধরনের পৈশাচিক হত্যায় ভৈরবের নেতৃত্বের ক্ষেত্রে সৃষ্টি করেছে। স্থানীয় নেতৃস্থানীয় লোকদের কেউ কেউ রাজনৈতিক ভিন্ন মত পোষণ করত: পাক অফিসারদের নির্দেশে বা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্যে পাক বাহিনীর ধ্বংসমুখী ক্রিয়াকলাপে সহযোগিতা করেছে। রাজাকার নিয়োগ করার ব্যাপারেও তাদে ভূমিকা ছিল অগ্রণী। তবে এস লোকদের সংখ্যা ছিল অতি নগণ্য। বর্তমানে তাদের অনেকেই বেঁচে নেই। মুক্তিবাহিনীর হাতে তাদের অনেককেই প্রাণ হারাতে হয়েছে। বাকীরা কেউ কেউ হারাতে আছে ও কেউ বা সম্পূর্ণ মনোভাব পালটিয়ে স্থানীয় নেতৃবৃন্দের করুণায় টিকে আছে। এ প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য যে, পাক বাহিনীর ভৈরবে স্থিতিকালে স্থানীয় থানা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রস্থিত সরকারী অফিসসমূহের বহু রেকর্ড ও আসবাবপত্র নষ্ট করে এবং পৌরসভার ক্যাশ রুমের লোহার সিন্দুকটি ভেঙ্গে ১১০০০ টাকার উপরে লুট করে। ঐ সঙ্গে পৌরসভার বহু আসবাবপত্রও নষ্ট করে। ভৈরব থানার কালিকাপ্রসাদ ও শিমুলকান্দি ইউনিয়নের ইউনিয়ন পরিষদ অফিস, বীজাগার ও সংলগ্ন দাতব্য চিকিৎসালায় সম্পূর্নরূপে ধ্বংস করে। স্বাক্ষর/এম, এ রশিদ ৬/১১/৭৩