পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՆյԳ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড হত্যা, ধ্বংস ও নির্যাতনের বিবরণ ॥ রাজশহহী বিভাগ ॥ l ○8 l মোঃ আরশাদুজ্জামান (আশু) দি ইউনিভারসাল রেডিও হাউস ২৫শে মার্চ শহরে যখন মিলিটারীদের তৎপরতা বেড়ে যায় তখন আমি ভাঙপাড়া গ্রামে কোন এক বন্ধুর বাড়ীতে আশ্রয় নেই। পাকিস্তানী বেতার থেকে ঘোষণা করা হলো যে, মালিকবিহীন দোকান পেলে তারা অন্য জনকে দিয়ে দেবে। তার পরিপ্রেক্ষিতে ২১শে মে আমি রাজশাহীতে চলে আসি এবং ঘোড়ামারায় চাচাতো ভাইয়ের বাসায় উঠি। জুমআর নামাজ পড়ে আসার সময় একজন বাঙ্গালী পশ্চিমাদের দালাল আমাকে দেখে। দেখার পর জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পারে যে, আমি বাংলদেশের পতাকা উত্তোলন করেছিলাম। এপর অকস্মাৎ দুজন বর্বর সৈন্য গাড়ীসহ দালালের বাড়ীতে যায়। ইতিপূর্বে সে ফোনে মিলিটারীদের সাথে আলাপ করেছিল। তারপরে আমার ভাইয়ের বাসায় মিলিটারীরা ঢোকে। ঢোকার পরে আমাকে নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন একজন অধ্যাপক সাহেবের রান্নাঘরে নিয়ে যায়। সেখানে অন্য একজন কাষ্টম অফিসের আবদুল ওয়াহেদ নাম একজন লোককে দেখতে পাই নামাজ পড়া অবস্থায়। তাকে (ওয়াহেদ সাহেবকে) নানা জিজ্ঞাসাবাদ করায় বাইরে পাহারারত একজন মিলিটারী এসে আমাকে নির্মমভাবে বুটের লাথি মারে এবং তারপরে বেলা তিনটের সময় নওয়াবগঞ্জ কলেজের সহ-অধ্যক্ষ জনাব মোনামুল হক সাহেবকে মোটা শিকল দ্বারা দু’হাত বেঁধে নিয়ে আসে। তার কিছুক্ষণ পর কানে বালিওয়ালা লম্বা পাতলা মত একজন মিলিটারী আসে। হাতে কাঠের রোলার দরজা বন্ধ করে উর্দুতে বলে যে, “তুম নবাবগঞ্জ কলেজ কা ভাইস প্রিন্সিপ্যাল হ্যায়?” বলে প্রহার আরম্ভ করে। তারপর আমাকে জিজ্ঞাসা করে যে, আমি নাকি বিহারীগণকে হত্যা করেছি, নারীর ইজ্জত নষ্ট করেছি, সেই জন্য তারা দুই হাজার মাইল দূর থেকে এসেছে। তারপর কাঠের রাত আটটার পরে কাষ্টম অফিসের জনাব ওয়াহেদ সাহেবকে বের করে অন্য ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। তার পরে আমাকে ঐ একই ঘরে রাখে এবং জিজ্ঞাসা করে জানতে চায় ভোট কাকে দিয়েছিলাম। উত্তরে আমি বলেছিলাম যে, আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছিলাম। প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে ক্যাপ্টেন জাফর। তারপরে হিংস্র পশুর মত আমাকে প্রহার করে। প্রহারের দরুন মাটিতে পড়ে যাই। তারপরে জিজ্ঞাসা করে যে, আমি বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়েছিলাম কিনা। আমি সম্মতি জানাই। তারপরে উক্ত ঘরে নিয়ে রাখা হয়। পরের দিন সকালে মাটিতে একটি রুটি ও এক কাপ চা তিনজনকে খেতে দেয়া হয় শরীরে অসুস্থতার জন্য দু’জন চা পান করছিল না বলে বর্বর সৈন্যরা দুজনকে লাথি মারে বেপরোয়াভাবে। ৯টার দিকে আমাকে দিয়ে সৈন্যদের ব্যবহৃত ড্রেন, থালা বাসন, উঠান পরিষ্কার করে নেয়। বেলা তিনটার দিকে আমাকে ও ওয়াহেদ সাহেবের পিছনে হাত বেঁধে খাড়া অবস্থায় প্রায় এক ঘন্টা সময় রাখা হয়। তার পরে ক্যাপ্টেন জাফর উপর থেকে নীচে নেমে আসে। নাম ধরে বলে “তুমহারা নাম আশু হ্যায়, তুম রেডিও কা কাম