পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Գo বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড l ○と l জেলা- রাজশাহী জুন মাসের ১৩ তারিখে পাক দালালরা ষড়যন্ত্রমূলক আমার শ্বশুরবাড়ীর একস্থানে গুলিসহ চাইনিজ আমার দুই ছেলে, আমার সম্বন্ধী ক্ষীতিশচন্দ্র রায় ও নিরোদ কুমারকে থানাতে নিয়ে যায়। ওদের ধারণা ছিল আমাদের কাছে প্রচুর টাকা-পয়সা সোনা আছে। বন্দী করে সেগুলি আদায় করার পরে হত্যা করবে। রাত ১/১-৩০ দিকে আমাদের থানাতে নিয়ে যায় ৫ জনকে ষ্টেটমেন্ট নেবে বলে। আমাদের পাঁচজনকে চালাকি করে হাজতখানায় বন্দী করে। সারারাত কিছু খেতে দেয়নি। তার পরদিনও না। বিকালে আমার বাড়ী থেকে কিছু খাবার নিয়ে আসে। ঐদিন শেষ রাতের দিকে আমার স্ত্রী দারোগাকে বহু অনুরোধ উপরোধ করে গায়ের সমস্ত গয়না খুলে দিয়ে নগদ কয়েকশত টাকা দিয়ে বলল গেন সামরিক আইনে তার ভাই, স্বামী ছেলেকে না দেয়। দারোগাকে টাকা ঘুষ দিলে আমাদের সবাইকে হাজত থেকে বাইরে এনে রাখার ব্যবস্থা করেছিল। হঠাৎ করে একদিন আবার হাজতে পুরতে বলে। আমার দুই ছেলে আমার সাথে কান কথা না বলে পাশের নদীতে ঝাঁপ দেয় বাঁচবার জন্য। পিছু পিছু পুলিশ ছুটে ওদের চিৎকারে গ্রামের লোকজন ধরে ফেলে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। থানায় নিয়ে এসে অকথ্য অত্যাচার চালায় আমার দুই ছেলের উপর। একজন কৃষক সে আমার ছেলেদের ধরেনি বলে পুলিশ তাকে থানায় ধরে এনে ভীষণভাবে মারধর করে। এখনই ছেলেদেরকে হত্যা করবে কিন্তু টাকার বিনিময়ে নিরস্ত হয়। চার্জশীটের মধ্যেও পালানোর কথা উল্লেখ করেনি। ১৫ই জুন আমাদের সবাইকে নাটোর চালান দেয়। হাশেম দারোগা চাইনিজ রাইফেলসহ চললো। টাকা পয়সা নেওয়া সত্ত্বেও আমাদের হটিয়ে নিয়ে যায়। পথে পাক বাহিনীর সাথে দেখা হলেই সালাম আলায়কুম জানিয়ে বলে দেখিয়ে কেয়া চীজ লেআয়া হ্যায়। দারোগা বার বার আমাদের দেখিয়ে দেয় মুক্তিফৌজ হিসাবে। থানায় ও,সি, হাশেমকে নিষেধ করেছিলো অস্ত্র ঐভাবে খোলা নিয়ে যেতে কিন্তু হাশেম এ, এস, আই, তা শোনেনি। নাটোর কোর্টে নিয়ে যাচ্ছে এমন সময় ইনসপেক্টর (পুলিশ) জাফর সাহেবের সাথে আমাদের দেখা। জাফর সাহেব আমার ছেলের এবং শালার বিশেষ বন্ধু ছিল। সে দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে হাশেমকে। মাঠে আমাদের বসিয়ে রাখে। পাকসেনারা আসে নাম শোনে আর সবাইকে লাথি চড় মেরে চলে যায়। সামরিক কোর্টে ক্যাপ্টেন ও মেজর আসেন। আমরা ২৫ গজ মত দূরে বসে চাইনিজ রাইফেলের কথা শোনার সাথে ক্যাপ্টেন খতম করার নির্দেশ দিলেন। কিন্তু পুলিশ ইন্সপেক্টর অনুরোধ করে একটি ইনকোয়ারী করার জন্য কারণ ওরা ভালোমানুষ। মেজর বলেন, কেমন করে চিনলে ওদের ঐ থানাতে আমি থানা ইনচার্জ ছিলাম বহুদিন। ইনসপেক্টর বলেন, মেজর আমাদের ডাকেন আমাদের বক্তব্য আমরা বলি। মেজর সব শুনে কোটে পাঠাতে বলে ইনকোয়ারীর ভার দিলেন। এস, ডি, ও জেলহাজতে পাঠিয়ে দিলেন। সামান্য একটু ঘরে আমাদের রাখলো। আমরা ৩০/৩৫ জন ছিলাম, শোয়াতো চিন্তা করা যায় না ভালো করে বসারও উপায় ছিল না। জেল ওয়ার্ডার মোজাফফর খাঁ (বিহার) বাঁশের লাঠি দিয়ে বেদম প্রহার করে বাইরে এম,পি, (মিলিটারী পুলিশ) ছিল সেও রাইফেলের বাট দিয়ে মারতে লাগলো। আমাদের মধ্যে কয়েকজন কয়েদী ছিল যারা স্বাধীনতার প্রথম ক্ষণে জেল ভেঙ্গে পালিয়েছিল। তাদের উপর অমানুষিক অত্যাচার চালায়। চিৎ করে শুইয়ে দুই হাতে লাঠি তুলে শরীরে যত শক্তি