পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Գ Տ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড আছে তা দিয়ে ঘন ঘন আঘাত করতে থাকে। লোকজন পরে শুধু আল্লাহর নাম করতে থাকে। তারপর দিনও ঐভাবে সাবইকে মারতে থাকে। সরারাত শুনলাম মানুষের অসহ্য যন্ত্রনার চিৎকার। আমার মত এমনি বহু অধ্যাপক, ছাত্র, এ্যাডভোকেট ইত্যাদিকে সারারাত ধরে নির্যতন চালায়। কান্না চিৎকারে জেল প্রকম্পিত হচ্ছিল। পাক সেনারা মারতো আর হাসতো। লোকজনের উপর অত্যাচারের জন্য একটি স্কোয়াড থাকত যাদের কালো ব্যাজ থাকতো। জেল ওয়ার্ডার হরমুজ আমাদের উপর অত্যাচার চালাতে থাকে। ১৬/১৭ই জুন আমাদের ১৬ জনকে একসাথ রাজশাহী সেন্ট্রাল জেলে পাঠিয়ে দেয়। রাজশাহী জেলে বহু রকমের লোকদের দেখলাম। যাদের আনতো তাদের অধিকাংশ কারো চোখ নাই, কারো হাত-পা ভাঙা। বিশেষ করে পাক সেনারা যা পাঠাতো তারা প্রায় মৃত বা অর্ধমৃত হয়ে আসতো। জেলে যাদেরকে দেখেছি বেশীর ভাগ শান্তি কমিটির লোকেরাই ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলো। একজন কৃষক কয়েদীর সাথে আলাপ করলাম। সে এসেছিল শহরে জমি বিক্ৰী করতে। মহুরীর সাথে বাজারে বেরিয়েছে এমন সময় কিছু লোক কৃষকটিকে জোর করে এক বাড়ীতে ডেকে নিয়ে গিয়ে বলে তোর ছেলে মুক্তিফৌজ, সে বলে আমার বড় ছেলেই নেই। তারপর মারধর করে জেলে পাঠিয়ে দেয়। আমাদের কেস ইনকোয়ারীর জন্য ইনসপেক্টর গ্রামে যান এবং আমাদের পক্ষে রিপোর্ট দেন। বর্তমান বরিশাল এস,পি, গোলাম মোর্শেদ তখন রাজশাহী এস,পি, ছিলেন। তিনি আমাদের ধরিয়ে দেবার জন্য এ, এস, আই, হাশেমকে প্রমোশন দিয়ে থানার ও, সি, করে দেন। নাটোর শান্তি কমিটি জাফর ইন্সপেক্টরের বিরুদ্ধে পাক সেনাদের কাছে অভিযোগ করে। জাফর (ইন্সপেক্টর) সাহেবের চাকরী যাবার মত। আমার ছেলে আইনুদ্দিনকে (এম, এন, এ, মুসলীম লীগ) বহু টাকার বিনিমিয়ে তার তদ্বরে আমাদের জামিন হয় ২৮শে সেপ্টেম্বর। পরে ইনসপেক্টর আবার ইনকোয়ারী করে নভেম্বর মাসে আমাদের বিরুদ্ধে কিছু না পেয়ে মুক্তি দেয়। আমরা আবার গ্রামে চলে যাই (গালিমপুর)। আমাদের বাড়ী জামাতে ইসলামীর সভাপতি দখল করে নেয়, সমস্ত কিছু লুট করে রাজাকারের ক্যাম্প করে। আর একটি কক্ষে জামাতে ইসলামের সভাপতি থাকতো। আমরা আবার গ্রাম থেকে গ্রামে পালিয়ে বেড়াতে লাগলাম। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে পাক সেনারা আমাদের গ্রামে আবার হামলা চালায়। সমস্ত গ্রাম লুট করে বহু জনকে ভীষণভাবে মারধর করে, কিছু লোকজনকে হত্যা করে। আমাদের সব লুট করে নেয়। তারপর দেশ মুক্ত হয়। মালঞ্চ এবং নদীর অপর পাড়ে সকল গ্রামে তখন কোন বাড়ী ছিল না যে বাড়ীর মেয়ে ধর্ষিত না হয়েছে। পাক সেনাদের চাইতে রাজাকার, আল বদর এরাই বেশী অত্যাচার চালিয়েছে। দালালরা এবং তাদের সহযোগীরা গ্রামকে লুট করেছে, ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। ডিসেম্বরে যুদ্ধ বাঁধলে আমরা সবাই উল্লাসিত হয়ে উঠি। একদিন গেলাগুলির শব্দ না পেলে আমাদের মন খারাপ হয়ে যেত। ১৬ই ডিসেম্বর যখন শুনলাম পাক বর্বর বাহিনী আত্মসমর্পণ করেছে তখন সেই রাতে আমার এই বৃদ্ধ বয়সে সারা গ্রাম হেঁকে বেড়াই পাক সেনারা আত্মসমর্পণ করেছে। মানুষজন গ্রামকে মাতিয়ে তোলে। স্বাধীনতার আনন্দে সবাই “জয় বাংলা” ধ্বনিতে গ্রামকে মুখরিত করে তোলে। স্বাক্ষর/বীরেন্দ্র কৃষ্ণ রায় Φο/ob/a'ο