পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ԳՋ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড l ○ a l সালু মিয়া থানা-সদর জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের দিকে সাহেব বাজারের নিজস্ব দোকান থেকে জনৈক বিহারীর ইঙ্গিতে আমাকে গ্রেফতার করে বোয়ালিয়া থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরের দিন বিকাল পর্যন্ত থানাতেই বন্দী ছিলাম। তারপর ডিএসপি নাছিম সাহেব জিজ্ঞাসাবাদ করেন যে আপনি বিহারী কয়টা মেরেছেন; ভোট কাকে দিয়েছেন। তারপর রাত্রিতে মিলিটারী গাড়ী করে জোহা হলে নিয়ে যায়। ৭ দিন সেখানে বন্দী থাকাকালে আমাকে দিয়ে কয়েকদিন মাটি কাটিয়ে নিয়েছে এবং ত্রিপলাদি শুকিয়ে নিয়েছে। সেখানে ৭-৮ জনকে একই থালায় বসিয়ে দুর্গন্ধযুক্ত অপর্যাপ্ত ভাত দেওয়া হতো। ডাল হিসাবে শুধু পানি, লবণ, হলুদ দিয়ে সিদ্ধ করে দেওয়া হতো। আর কোন তরকারি থাকতো না। ৭-৮ দিন পরে আবার আমাকে থানায় নিয়ে আসে। সেখানে আমাকে ১৯ দিন রাখা হয়। প্রথমে ক্ষমা ঘোষণার পর থানার বন্দী সকলেই ছাড়া পেলেও আমি এবং আর একজন অধ্যাপক ছাড়া পাননি। একদিন সিকিউরিটি অফিসার আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন এবং বলেন তোমাকে ইণ্ডিয়ায় দেখেছি। না উত্তর দেওয়ায় প্রহার শুরু করে। অতঃপর ডিএসপি নাছিম সাহেব এসে সিকিউরিটি অফিসারকে জানান যে আমাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে। অতঃপর আমাকে ছেড়ে দেয়। এর ১৬-১৭ দিন পর এক রবিবার দিন রাত দুটার সময় আমাকে বাড়ী থেকে ধরে জোহা হলে বন্দী করে রাখে। সকালের মধ্যেই রাজশাহী ন্যাপ প্রধান আতাউর রহমানসহ বহু জনকে বন্দী করে নিয়ে যায়। সেখানে তাদের সবাইকে দিয়ে ঘাস কাটিয়ে নিয়েছে। এর মধ্যে রোজা এসে যায়। সময় মতো তাদের কোনো খাবার দেওয়া হতো না। কোন কোন দিন সেহেরীও দেওয়া হতো না। পহেলা রমজান রাত ১১টায় আমার রুম থেকে দুজন, ন্যাপ প্রধানের রুম থেকে একজন, পাশের রুম থেকে তিনজনকে, আর এক রুম থেকে সাহেব বাজারের কেতু মিয়াকে হাত ও কালো কাপড় দিয়ে চোখ বাঁধা অবস্থায় নিয়ে যায়। পরদিন সকালে ঔৎসুক্যের বশবর্তী হয়ে জনৈক সেন্ট্রিকে জিজ্ঞাসা করি যে রাতে ছেড়ে দিলে তারা কোথায় গেছে। তখন উত্তর দেয় যে তাদেরকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। আমি আবার জিজ্ঞাসা করি হাত, পা কেটে কষ্ট দিয়ে না মেরে গুলি করে কেন মার না। উত্তরে জানায়, গুলি করে মারা হয় না, রাম দা দিয়ে জবাই করে মারা হয়। আমি আবার জিজ্ঞাসা করি রাতে যারাই বেরুবেন তাদেরই কি মারা হবে? উত্তর পাই রাত ১১টার পর যারা বেরুবে তাদের সবাইকেই বাংলাদেশে পাঠানো হয়। এর চার-পাঁচ দিন পর থেকে প্রায় প্রত্যহ রাতে ৭-৮ জন করে লোক উধাও হয়ে যেতো। ২৬-২৭ দিন পর একদিন বেলা দেড়টার সময় আমাকে ছেড়ে দেয়। আসার আগে আমি আমার কাছের দশটি টাকা অন্যান্য বন্দিদের ইফতারি কেনার জন্য দিয়ে আসি। কারণ সেখানে কোন ইফতারি দেওয়া হতো না। ছেড়ে দেয়ার দুই দিন পর পুলিশ আবার আমাকে খোঁজাখুঁজি করে এবং গ্রেফতার করে জোহা হলে মেজরের নিকট নিয়ে যায়। জিজ্ঞাসাবাদে মেজর আমাকে বলেন উপার যায়েগা না ঘার যায়েগা। শেষ অবধি আমাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। জোহা হলে বন্দী থাকা অবস্থায় সারাদিন প্রশ্রাব করতে দেওয়া হতো না। তাই বাধ্য হয়ে আমি নিজের জুতার মধ্যে প্রশ্রাব করে তিন তালা থেকে ফেলতাম। পৌর এলাকার ১ নং ওয়ার্ডের ৯৮ জন ধৃত ব্যক্তির মধ্যে আমিই শুধু বেঁচে আছি। স্বাক্ষর/সালু মিয়া