পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : একাদশ খন্ড দলিল প্রসঙ্গঃ সশস্ত্র সংগ্রাম (৩) পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধ এবং আক্রমণের তৎপরতা সংক্রান্ত তথ্য ও প্রতিবেদনভিত্তিক দলিলপত্র বর্তমান খন্ডে সন্নিবেশিত হয়েছে। যুদ্ধকালীন বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ও সেক্টরসমূহে নিয়মিত ও মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা স্বাধীনতার লক্ষ্যে যে তৎপরতা চালাতনে সে সম্পর্কিত প্রতিবেদন প্রেরিত হতো বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সদর দফতরে। সেগুলিই যুদ্ধ পরিস্থিতি প্রতিবেদন হিসেবে প্রচার ও প্রকাশনার জন্য পত্রপত্রিকা ও বেতারে পাঠানো হতো। এগুলির প্রতিটিই সরকারী দলিল। বর্তমানে গ্রন্থে মুদ্রিত প্রতিবেদনসমূহে স্বাধীনতা যুদ্ধের গোটা সময়কাল বিধৃত হলেও মুক্তিযোদ্ধাদের দেশব্যাপী পরিচালিত অভিযানের খুব সামান্যই এতে উল্লেখিত হয়েছে। এর কারণ সংগ্রহ ও সংগঠন থেকে শুরু করে প্রতিরোধ ও আক্রমণ পর্যন্ত প্রক্রিয়া-এক কথায় যুদ্ধের পুরো সময়টাই এতো অনিশ্চয়তাপূর্ণ ছিল যে, সে সময়ে এমনিতর প্রতিবেদন নিয়মিত পাঠানো সম্ভব হয়নি। তথাপি এই খন্ডে সন্নিবেশিত দলিলসমূহ মুক্তিযোদ্ধাদের তৎপরতা এবং যুদ্ধের গতিধারার একটি প্রতিনিধিত্বশীল চিত্র তুলে ধরবে। উল্লেখ্য যে পর্যাপ্ত প্রতিবেদনের অভাবজনিত শূন্যতা পূরণের জন্য গ্রন্থের শেষাংশে সংযোজিত হয়েছে পত্রপত্রিকায় রণাঙ্গন সংবাদ (পৃঃ-৬৪০) বাংলাদেশের বিস্তৃত রণাঙ্গনে যুদ্ধকালীন সময় বেশ কিছু পত্রপত্রিকা প্রকাশিত হয়েছিল (৬ষষ্ঠ খন্ড দ্রষ্টব্য)। এগুলোর কোন কোন প্রত্রিকা ছিল হস্তলিখিত ও সাইক্লোষ্টাইলকৃত। যুদ্ধের দৈনন্দিন ঘটনাপ্রবাহের সংবাদ প্রকাশে এসব পত্রপত্রিকার ভূমিকা ছিল অসাধরন। এগুলির মধ্য দিয়ে ঘটনাপ্রবাহের ধারাবাহিকতা সম্পর্কে যেমন ধারণা লাভ করা যাবে তেমনি যুদ্ধ পরিস্থির মূল্যায়ন করাও অনেকাংশে সম্ভব হবে। এই অংশে তারিখের ধারাবাহিকতা রক্ষার প্রয়োজনে ভারতের পত্রপত্রিকার সাহায্য নেয়া হয়েছে। স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালনায় অস্থায়ী সরকারের ভূমিকা ছিল ফলপ্রসূ যুদ্ধের সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও তত্ত্বাবধানের পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে প্রচারিত প্রচারপত্র, বিবৃতি ও বেতার ভাষনের মধ্য দিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে স্বাধীনতার মহান লক্ষে জনগণ ও মুক্তিযোদ্ধাদের অণুপ্রাণিত করার প্রচেষ্টা গৃহীত হতো। এরই উদাহরণ হিসেবে অস্থায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদের দুটি বেতার ভাষন বর্তমান খন্ডে সন্নিবেশিত হয়েছে (পৃঃ ১৭৮-৮০, ১৮২-৮৩)। এই ভাষন দুটিতে প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতা সংগ্রামের পটভূমি ব্যাখ্যা করে পাকিস্তানের সামরিক জান্তার স্বরূপ ও উদ্দেশ্য তুলে ধরেছেন, স্বাধীনতাবিরোধী আন্তর্জাতিক শক্তিসমূহের তীব্র সমালোচনা করেছেন এবং আহবান জানিয়েছেন চূড়ান্ত লক্ষ্য স্বাধীনতা অর্জন পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাবার জন্য। মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক কর্নেল এম এ জি ওসমানীরও এমনি একটি বেতার ভাষণ মুদ্রিত হয়েছে গ্রন্থের ১৮৪ পৃষ্ঠায়। এতে তিনি যুদ্ধ পরিস্থিতির ব্যাখ্যা করে মুক্তিযোদ্ধাদের ভূয়সী প্ৰংশসা করেন এবং তাদের মনোবল সমুন্নত রাখার আহবান জানিয়ে শহীদ ও বীর যোদ্ধাদের জন্য ঘোষনা করেন সমানজনক পদক ও নগদ আর্থিক পুরস্কার প্রদানের সরকারী সিদ্ধান্তের কথা। সর্বাধিনায়ক হিসেবে তিনি বিভিন্ন সময়ে সেক্টর কমান্ডারদের উৎসাহিত করে যে চিঠিপত্র লিখতেন তার নমুনা হিসেবে মুদ্রিত হয়েছে চারটি চিঠি (পৃঃ ৪৮৭, ৪৮৮-৮৯, ৪৯৪, ৫০০)। এই চিঠিগুলিরও কোনো কোনোটিতে ছিল পদক ও পুরস্কারের জন্য সুপারিশ করে নাম পাঠানোর তাগিদ। মুক্তিযোদ্ধাদের পদকপ্রাপ্তির জন্য পেশকৃত দুটি সুপারিশনামা মুদ্রিত হয়েছে বর্তমান গ্রন্থে (পৃঃ ৪৯০-৪৯৩) । যুদ্ধকালে বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা বাহিনীতে ভর্তির জন্য ব্যবহৃত ফরম (পৃঃ ৫৩০৫৩২) এবং বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর রেকর্ড অফ পেমেন্ট ফরমও (পৃঃ ৫২৬-২৭) মুদ্রিত হয়েছে নমুনা হিসেবে। গেরিলা যুদ্ধের কৌশল অবলুন করে স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালিত হলেও মুক্তিযোদ্ধাদের খুব সামান্যসংখ্যকেরই এ সম্পর্কে জ্ঞান বা ধারণা ছিল। এই অভাব পূরণের লক্ষ্যে ৮ নং সেক্টরের অধিনায়ক মেজর এম এ মঞ্জুর প্রণীত বাংলার মুক্তিযুদ্ধ নামের পুস্তিকাটি মুদ্রিত হয়েছে বর্তমান গ্রন্থে (পৃঃ ৪৮২-৪৮৬)। এ ছাড়া