পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/২০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : একাদশ খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ ৮। বাংলাদেশের সশস্ত্র সংগ্রাম সম্পর্কে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় মুজিবনগর- | ২৩ নভেম্বর, ১৯৭১ প্রধানমন্ত্রী তাজউদিনের আবারও ভাষণ এর দলিল জাতির উদ্দেশে ২৩শে নভেম্বর ১৯৭১-এ প্রদত্ত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমদের বেতার ভাষণঃ দেশবাসী সংগ্রামী ভাইবোনরা, গত সেপ্টেবর মাসে আপনাদের কাছে আমাদের মুক্তি সংগ্রামের পর্যালোচনা করেছিলাম। তারপর আড়াই মাস আপনাদের কাছে আমাদের মুক্তি সংগ্রামের পর্যালোচনা করেছিলাম। তারপর আড়াই মাস কেটে গেছে। এর মধ্যে আমাদের সাফল্য এসেছে নানা দিক থেকে। দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর আক্রমণ যে সর্বক্ষেত্রে তীব্রতর হয়েছে, সে কথা শক্রমিত্র নির্বিশেষে সকলেই স্বীকার করেছেন। মুক্তিবাহিনী এখন যে সময়ে যে কোন জায়গায় শত্রকে আঘাত করতে পারে; এমনকি শত্রর নিরাপদ অবস্থানের কেন্দ্রে মুক্তিবাহিনীর। নদীপথে হানাদাররা বিপর্যস্ত, মংলা ও চট্টগ্রাম বন্দর প্রায় অকেজো, বাংলাদেশের বিস্তৃত অঞ্চল শত্রমুক্ত। ক্রমেই অধিকতর এলাকায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কার্যকর প্রশাসন চালু হচ্ছে। আর সৈন্য, সামগ্রী ও মনোবল হারিয়ে শত্রপক্ষ হতাশায় ততই উন্মাদ হয়ে উঠছে। একদিকে রণক্ষেত্রে শত্রর বিপর্যয় ঘটছে, অন্যদিকে বাংলাদেশের জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের প্রতি আন্তর্জাতিক সমর্থন ক্রমশঃ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে ইসলামাবাদের দুষ্কৃতকারীরা আজ দিশাহারা ও কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। নিজেদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সংশয় ও ভীতির উদ্রেক হয়েছে তাদের মনে। বাংলাদেশের জনগনের অপরিমেয় দুর্দশা ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে তারা পশ্চিম পাকিস্তানকেও টেনে নিয়ে গেছে অর্থনৈতিক বিপর্যয় ও রাজনৈতিক ভাঙ্গনের মুখে। এখন তারা চায় ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ বধিয়ে একটা আন্তর্জাতিক সংকট সৃষ্টি করতে। তারা আশা করে যে, এমন একটা যুদ্ধ হলে বাংলাদেশের রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা সংগ্রামের থেকে পৃথিবীর দৃষ্টি অন্যদিকে নিবদ্ধ হবে, মুক্তিবাহিনীর হাতে তাদের পরাজয়ের গ্রানি গোপন করা যাবে এবং এমন একটা পরিস্থিতির উদ্ভব হবে যাতে তাদের পৃষ্ঠপোষকেরা হস্তক্ষেপ করার সুযোগ পাবে। কিন্তু আমি প্রত্যয়ের সঙ্গে বলছি যে, এর একটি উদ্দেশ্য ও সিদ্ধ হবে না। বরঞ্চ এতে তাদের ভ্রামিতা, অপরাধ ও আতুঘাতের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে মাত্র এবং পরিণামে তাদের আত্নবিনাশ সুনিশ্চিত হবে। সামরিক শাসকচক্র আত্নহত্যার যে ব্যবস্থাই করে থাকুক না কেন আর এই উপমহাদেশের জন্য যে ব্যবস্থাই বিশেষ বিশেষ রাষ্ঠের মনঃপূত হোক না কেন, বাংলাদেশের জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যবস্থা একটিই- আর তা হল পূর্ণ স্বাধীনতা। ইতিহাসের অন্যতম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে প্রতিদিন প্রমাণিত হচ্ছে আমাদের স্বাধীনতা সংকল্প ও সে স্বাধীনতা রক্ষার শক্তি। দখলদার সৈন্যবাহিনীবৃ. (অস্পষ্ঠ) ... আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। ইতিহাস মানুষকে অন্ততঃ এই শিক্ষা দিয়েছে যে, জনসাধারনের ইচ্ছাশক্তির পরাজয় নেই- এমনকি, এক বিশ্বশক্তির সমরসম্ভার দিয়েও জনগণের মুক্তি সংগ্রাম দমন করা যায় না। এশিয়ায় গণতন্ত্রের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে কোন পাশ্চাত্য দেশের নিরাসক্তি লক্ষ্য করার মতো। মনে হয় মানুষ হিসেবে মানুষের মর্যাদার চাইতে এখানে তারা সরকারের স্থিতিশীলতার গুরুত্ব দেন বেশী। এটা শোচনীয়। কিন্ত ভারতকে অর্থ সাহায্যের বিনিময়ে বাংলাদেশের শরণার্থীদেরকে সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের প্রস্তাব যখন কোন রাষ্ট্র উত্থাপন করেন, তখন আমরা শিউরে না উঠে পারি না। এই প্রসতাবে গণহত্যা ও তার ফলাফলকে নীরবে মেনে নেওয়া হয়েছে, পর্বতপ্রমাণ অবিচার ও অন্যায়কে বিনা বাক্যে স্বীকার করে নেয়া হয়েছে এবং ভবিষ্যতে গণহত্যা ও ব্যাপক বাস্ত্তত্যাগের পথ প্রশস্ত করা হয়েছে। পাকিস্তানী সন্ত্রাসের ফলে