পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/৫২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

501 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : একাদশ খন্ড শিরোনাম উৎস তারিখ ৪৬। গেরিলা যুদ্ধ সংক্রান্ত একটি ১ নং সেক্টরের দলিলপত্র Ջի ԳՀ ইশতেহার ৷ গেরিলা যুদ্ধ ॥ আত্মসংযম-জ্ঞান-তিতিক্ষা-কষ্ট-সহিষ্ণুতা এই যুদ্ধের রীতি বহু প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন যুদ্ধের সময় অনুসৃত হলেও ১৮০৭ সালের আগে গেরিলা যুদ্ধরীতি একটি সহজ যুদ্ধরীতি হিসেবে সামরিক অভিযানে স্বীকৃত হয়নি। ১৮০৭ সালে নেপোলিয়ানের ফরাসী সৈন্যরা স্পেনের সাইবেরীয় প্রণালী আক্রমণ করলে স্পেনের স্বল্পসংখ্যক অনিয়মিত সৈন্যদল এই কায়দায় যুদ্ধ করে। স্পেনের ভাষায় “গুয়েরিলা’ শব্দের অর্থ হলো ছোট যুদ্ধ বা খণ্ড যুদ্ধ। গেরিলা যুদ্ধের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো যুদ্ধ ব্যাপারটাকে খুব সহজ ও সরলভাবে নেওয়া। অন্যান্য যুদ্ধরীতেতে যে সামরিক সমারোহ, যে সাজসজ্জা ও বিপুল তোড়জোড় তা এতে একেবারেই নেই। এত দেখা যাবে যে, আমাদের অসামরিক অধিবাসীরাও যখন দরকার হবে, হঠাৎ যুদ্ধে যোগদান করতে পারবে এবং অল্পদিনের মধ্যেই কাজ চালাবার মত যুদ্ধবিদ্যা শিখে নিতে পারবে। দৈনন্দিন জীবনের ভিতরে স্বাভাবিকভাবে যুদ্ধ পরিচালনাই হল আর এক বিশিষ্টতা। তার মানে, দিনের বেলায় কলকারখানায় শ্রমিক হিসাবে বা মাঠে চাষী হিসাবে কাজ করে রাত্রিতে শত্রসৈন্যদের আক্রমণ করে তাদের অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পালিয়ে যাওয়া। এতে হয় শত্রদের ভিতর ব্যাপক সন্ত্রাস কিন্তু এই প্রণালী শুধু চলতে পারে যুদ্ধের প্রথম ও দ্বিতীয় স্তরে। বালাবাহুল্য সাররিক বিজ্ঞানে আছে চার প্রকারের যুদ্ধ-সামগ্রিক যুদ্ধ, সাধারণ যুদ্ধ, সীমাবদ্ধ যুদ্ধ ও বৈপ্লবিক যুদ্ধ। সামগ্রিক যুদ্ধ হলো যাতে এক বা একাধিক দেশের সরকার প্রতিপক্ষ সরকারের সম্পূর্ণ ও নিঃশেষিত ধ্বংসের জন্য তার সর্বশক্তি প্রয়োগ করে। গত দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ হলো এই ধরনের যুদ্ধের নজীর। সাধারণ যুদ্ধেও একটি সরকার শত্রপক্ষের পরিপূর্ণ ধ্বংস চায় কিন্তু এই ধ্বংসের জন্য সর্বশক্তি প্রয়োগ হয় না। ১৯৪৮ সালে কোরিয়া যুদ্ধ হলো সীমাবদ্ধ যুদ্ধের একটি দৃষ্টান্ত। এই যুদ্ধে যুদ্ধরত দেশগুলি এক ভৌগলিক সীমার মধ্যে একটা নির্দিষ্ট লক্ষের জন্য যুদ্ধ করে। বৈপ্লবিক যুদ্ধ একটি দেশের দুইটি সরকারের মধ্যে যুদ্ধ। এই যুদ্ধে কোন একটি অস্থায়ী বৈপ্লবিক সরকার অন্য একটি অবাঞ্ছিত প্রতিষ্ঠিত সরকারকে ধ্বংস করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর ইন্দোচীন, মালয়, আলজিরিয়ায় এই ধরনের যুদ্ধ হয়েছে। এই চার রকমের বেতর যে কোন একটিতে গেরিলা যুদ্ধের নকীতি আংশিকভাবে অনুকরণ হতে পারে কিন্তু বেশীর ভাগই বৈপ্লবিক যুদ্ধে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সাধারণতঃ তিনটি সম্ভাবনা দেখা যায় গেরিলা বাহিনীর উদ্ভবের পিছনে- (১) যেখানে নিয়মিত শক্তিশালী সৈন্যদল পরাজিত এবং যেখানে নিয়মিত শক্তিশালী সৈন্যদল গড়ে তোলার আর কোন উপায় থাকে না। (২) অনেকা সময় নিয়মিত শক্তিশালী সৈন্যদল গড়ে তোলার আগেই প্রথম থেকে গেরিলা বাহিনী গড়ে তোলা হয়। (৩) যেখানে নিয়মিত শক্তিশালী আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র সাজ্জিত সৈন্যদল কোন কারণে যুদ্ধ করতে পারে না, সেখানেও গেরিলা বাহিনী গড়ে তোলা হয়