পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/৬৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

667 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : একাদশ খন্ড রাস্তায় বাওই খোলায় গেরিলারা একটি বাস ও একটি ট্রাকের উপর গ্রেনেড চার্জ করে ১৩ জনকে হত্যা করে। এখানে রাজাকারদের সঙ্গে খন্ড যুদ্ধে ৭ জন রাজাকার নিহত হয়। ৫০ জন রাজাকার গ্রেফতার দলে দলে আত্মসমর্পণ অব্যাহত বিশ্বাসঘাতক মীর জাফরের উত্তরসূরী স্বদেশী সৃষ্ট দালাল রাজাকারদের অত্যাচার, আনাচার আর দেখিয়ে নিরীহ ও নিরস্ত্র জনগণকে অযথা হয়রানি করে তুলেছে এবং জোরজবরদস্তি করে টাকা, অলংকার, ঘড়ি, কলম এমনকি পকেট থেকে দু আনা পয়সা পর্যন্ত ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। পশ্চিমা সেনাদের পদলেহনকারী এই সকল রাজাকারের গুপ্তচরবৃত্তি করতে এসে মুক্তিবাহিনীর নিকট এ পর্যন্ত ৫০ জন গ্রেফতার হয়েছে। এর মধ্যে ১৯ জনকে হত্যা করা হয়েছে। যারা আত্মসমর্পণ করেছে। তাদের প্রতি সাধারণ ক্ষমা প্রদর্শন করা হচ্ছে। বল্লার শত্রুঘাঁটিতে গেরিলা আক্রমণ গত ২৭ শে জুলাই মধ্য রাতে মুক্তিবাহিনীর একজন দুঃসাহসী গেরিলা বল্লার হানাদার ছাউনিতে ঢুকে পড়ে অতর্কিতে আক্রমণ চালিয়ে ৬ জন শত্রুখতম করেন। দেওপাড়ায় ৫৬ জন শক্রসেনারা খতম : হানাদার ঘাঁটিতে অগ্নিসংযোগ বিগত ২১শে জুলাই থেকে শেষ সংবাদ পাওয়া পর্যন্ত ঘাটাইল থানার দেওপাড়া রণাঙ্গনে বর্বর পাক হানাদারদের সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর যে প্রচন্ড যুদ্ধ শুরু হয়েছে আজ পর্যন্ত তা অব্যাহত রয়েছে। মুক্তিবাহিনীর দুঃসাহসী গেরিলা যোদ্ধারা অমিত বিক্রমে জল্লাদ বাহিনীকে বিরামহীন আঘাত হেনে চলেছেন। গেরিলা বাহিনী প্রবল আক্রমণাত্মক তৎপরতার সামনে পাক বাহিনী টিকতে না পেরে তাদের ছাউনিতে কচ্ছপের মতো গুটিয়ে বসেছে। গত ২৭শে জুলাই মুক্তিবাহিনীর একটি শক্তিশালী গেরিলা স্কোয়াড রাত্রি বেলা অতর্কিতে তাদের দেখে ছাউনি ঘিড়ে ফেলেন এবং মধ্য রাত্রিতে অগ্নিসংযোগ করেন। অগ্নিবেষ্টনী থেকে বেরিয়ে আসার সময় দুঃসাহসীক গেরিলারা ১১ জন রাজাকারসহ ৩৭ জন শত্রসেনা খতম করেন এবং ১৯ জনকে দারুণভাবে আহত করেন। এই অগ্নিসংযোগের ফলে শক্রছাউনি সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়। পরদিন ভোরে পাক হানাদার বাহিনী হেলিকপ্টারের সাহায্য মৃত পাঞ্জাবী সেনাদের উঠিয়ে নেয় আর রাজাকারদের ১১টি লাশ পানিতে ভাসিয়ে দেয়। মুক্তিবাহিনী ১লা ও ২রা আগষ্ট অতর্কিত আক্রমণ করে বর্বর ইয়াহিয়ার দসু্যসেনাদের ১৯ জনকে নিহত এবং যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকেই ৩ জন রাজাকারকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করেন। এই সব রাজাকাররা আমাদের প্রতিনিধির নিকট জানিয়েছে যে, তাদেরকে বলপূর্বক রাজাকারে ভর্তি করা হয়েছে। বলপ্রয়োগ করে রাজাকারদরে যুদ্ধে সামনে ঠেলে দেওয়া হয় কিন্তু যখন তারা মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে এঁটে উঠতে না পেরে পিছু হটে, তখন পাঞ্জাবীরাই তাদের গুলি করে হত্যা করে। রাজাকারদের দিয়ে পাঞ্জাবী সৈন্যরা আহত হলে নাসের কাজ করানো হয়। এমনকি রাজাকারদের শরীর থেকে জোর করে রক্ত নেয়া হয়। বছিরউদ্দিন নামক রাজাকার করুণ ভাবে আমাদের প্রতিনিধির নিকট বলেছে যে, তার চোখের সামনে পাঞ্জাবীরা তার মা, বোন ও তার ভাবীর ইজ্জত নষ্ট করে এবং তাকে ধরে নিয়ে রাজাকার বাহিনীতে ভর্তি করে মুক্তিফৌজের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাচ্ছে। ভালুকা থানায় ২৫ জন পাক সেনা নিহত গত ৪ঠা আগষ্ট একদল পাকসেনা যখন আঙ্গারপাড়া থেকে ভালুকায় ফিরছিল তখন মুক্তিফৌজ চাঁদপুরে তাদের আক্রমণ করেন। ৯ ঘন্টা স্থায়ী যুদ্ধে ২৫ জন হানাদার সৈন্য খতম ও বহু আহত হয়।