পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/৭০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



682

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : একাদশ খণ্ড

রণ ও রণাঙ্গন

 বাংলাদেশ আজ রণাঙ্গন। সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা বাংলা আজ রক্তাক্ত। রক্তের লাল রং দিয়ে রচিত হচ্ছে বাংলার বর্তমান ইতিহাস। বাংলার সমস্ত কাজের একটি মাত্র নাম ‘রণ’ | আজ বাঙালীরা যা-ই করছে সম্পূর্ণ রণের জন্য। তাই সারা বাংলা রণাঙ্গন আজ রণাঙঙ্গন অর সমস্ত বাঙালীই রণবীর।

 বাংলাদেমে এই রণ পরিচালনা করছেন ৯টি সেক্টরের কমাণ্ডারদের সহযোগিতায় জনগণতান্ত্রিক বাংলাদেশের প্রতিরক্ষমন্ত্রী ও প্রধান সেনাপতি জনাব ওসমানী সাহেব চট্টগ্রাম এলাকা।

 ১৭ই আগষ্ট চাঁদপুরে তিনজন পাক সেনাকে খতম করেন। ১৮ই আগষ্ট কুমিল্লা জেলার মাণ্ডাবাগ, নওগাঁও, লক্ষীপুর জিওফ, রসুলপুর, নারায়ণপুর, প্রভৃতি অঞ্চলে মুক্তিবাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণে বহুসংখ্যক পাকসৈন্য ও রাজাকার নিহত হয়।

টাঙ্গাইল এলাকা

 ১৭ই আগষ্ট, টাঙ্গাইলের গেরিলাগোষ্ঠির হাতে ৩ জনেরও বেশী পাক সেনা নিহত হয়। গেরিলা বাহিনীকে মারার জন্য পাক ব্রিগেড, পাক পদাতিক সেনা ও বোমারু বিমানা কাজে লাগায়। টাঙ্গাইলের মুক্তিসেনারা একটি পাক সেনা জাহাজ ডুবিয়ে দেয়। ফলে ১৫০ জন পাক সেনা নিহত হয়, তাদের কাছ থেকে ২শ’ বাক্স গুলি দখল করেন।

ময়মনসিংহ ও শ্রীহট্ট এলাকা

 ১৭ই আগষ্ট, ময়মনসিং ও শ্রীহট্ট জেলার প্রায় আড়াই হাজার বর্গমাইল এলাকা মুক্তিবাহিনীর দখলে। গত পনের দিনে এই স্থানে পাক বাহিনীর একজন লেফটেন্যাণ্ট কর্নেলসহ প্রায় ১৮৫ জন পাক সেনা মুক্তিবাহিনীর হাতে নিহত হয়। মুক্তিবাহিনী ১০০টি রাইফেল ও চারটি ষ্টেনগানসহ প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র দখল করেন। মুক্তিবাহিনী শ্রীহট্ট জেলার ১৭টি চা বাগান ধ্বংস করেন। ময়মনসিংহ অঞ্চলে কামলপুর, বকশীগঞ্জ, কাছার এবং নাকাশীতে মুক্তিবাহিনী এই সময়ে আক্রমণ চালিয়ে ৫০ জন পাক সেনা খতম করে।

ঢাকা এলাকা

 ১৭ই আগষ্ট, গেরিলা বাহিনীল তৎপরতায় ঢাকা শহরের জেনারেটর অকেজো হওয়ায় ঢাকা শহর ও শহরতলী এলাকা আংশিক নিম্প্রদীপ থাকে। শীতলক্ষ্যা নদীতে পাট, কয়লা বোঝাই চারখানা লঞ্চ জাহাজ মুক্তিবাহিনী ধ্বংস করেছে। মুক্তিবাহিনী গ্রেনেড দিয়ে ঢাকা শহরের পূবালী জুট মিলের দুটি গুদাম উড়াতে গেলে আগুন লেগে তা ভস্মীভূত হয়। শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে ৭ জন দালালকে খতম করেছে। ২৪ শে আগষ্ট সোনাপুর, বেদ্যের বাজার প্রভৃতি এলাকা সম্পূর্ণ মুক্ত হয়।

খুলনা এলাকা

 ১৭ই আগষ্ট, খুলনা সেক্টর এলাকার মুক্তিবাহিনী ১০০ জন রাজাকারের উপর আক্রমণ চালিয়ে ৭০ জনকে খতম করেন, ১৪ জনকে জীবিত বন্দী করতে সক্ষম হন এবং তাদের সমস্ত গোলাবারুদ দখল করেন।

 মোড়লগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধারা ১৫ জন রাজাকার এবং আরও ১০ পাক দালাল খতম করেন।