পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/৭১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



688

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : একাদশ খণ্ড

 এ ছাড়া চট্টগ্রাম ও ঢাকায় বর্তমানে মুক্তিবাহিনীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে জঙ্গীশাহীর খানসেনাদের বন্দুক লড়াই জোর গতিতে এগিয়ে চলেছে।

আদালতে টাইম বোম বিস্ফোরণ

 ঢাকা, ১০ই সেপ্টেম্বর (রয়টার)- গত কয়েকদিন আগে চট্টগ্রাম আদালতে একটি টাইম বোমা বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই দুই ব্যক্তি নিহত এবং ১৭ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা গুরুতর থাকায় চট্টগ্রাম হাসাপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চট্টগ্রাম আদালত ভবনের দ্বিতলে বিস্ফোরণ ঘটে।

 এখানে প্রকাশ ভবনের এক কোণে একটি ছাতার নীচে টাইম বোমাটি লুকানো ছিল।

যশোহরের শ্রীপুর থানা দখল

 মুজিবনগর, ৯ই সেপ্টেম্বর- গত সপ্তাহে অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা যশোহর জেলার শ্রীপুর থানাটি সম্পূর্ণরূপে শক্র কবল মুক্ত করেছে। মুক্তিবাহিনী ও জনতার তুমুল হর্ষধ্বনির মধ্যে সেখানে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে। শ্রীপুরের এই অতর্কিত আক্রমণে পাক বাহিনীর খান সেনাসহ প্রায় ১২৫ জন রাজাকার হত্যা করা হয়েছে। এই আক্রমণের ফলে আমাদের মুক্তিবাহিনী ১৪টি রাইফেল, একটি বৃটিশ রিভলবার, ১০টি শিরস্ত্রাণ এবং বহু কার্তুজ দখল করেছে।

কর্নেল সরফরাজ নিহত

 মুজিবনগর, ৮ই সেপ্টেম্বর- মুক্তিবাহিনীর গেরিলাদের পেতে রাখা মাইন বিস্ফোণের ফলে সম্প্রতি পাকিস্তানের ৩১ পাঞ্জাব বাহিনীর সেনাধক্ষ ও সিলেটের পূর্বতন সামরিক আইন প্রশাসক কর্নেল সরফরাজ খাঁ এক জীপ দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। বাঙালী মুক্তিফৌজের মাইন বিস্ফোরণেই জীপটি ধ্বংস হয়। জীপটির অন্য দুইজন আরোহী জীপ থেকে লাফিয়ে পড়ে দৌড়াতে আরম্ভ করলে গেরিলাদের গুপ্ত আক্রমণের ফলে ঘটনাস্থলেই আরোহী অফিসার দুইজনকে হত্যা করা হয়।



-জন্মভূমি, ১৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
* * * * *

ঢাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপক তৎপরতা

হানাদার কসাই বাহিনী ভীতসন্ত্রস্ত

\নিজস্ব প্রতিনিধি\

 ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে খান সেনাদের শিবির স্থাপন করা হইয়াছে। কিন্তু যাহাদিগকে এইসব শিবিরে প্রেরণ করা হইতেছে তাহারা তাহদের কর্মকর্তাদের উপর খুবই অসন্তুষ্ট হইয়া উঠিতেছে। কারণ তাহাদের ফেলিয়া বড় কর্তারা সকলে সূর্যাস্তের পূর্বেই কুর্মিটোলার সুরক্ষিত ছাউনিতে ঢুকে পড়ে। আর ইহাদিগকে ঢাকার বিভিন্ন ছাউনিতে ডিউটিতে নিযুক্ত করে। কুর্মিটোলার ছাউনী ছাড়িয়া ইহারা শহরের শিবিরে মোটেই নিরাপদ বোধ করে না। কারণ সন্ধ্যার পর হইতেই শুরু হয় মুক্তিযোদ্ধাদের তৎপরতা। মাইন এবং বোমা বিস্ফোরণের শব্দে প্রতি রাত্রে ঢাকা শহর প্রকম্পিত হইয়া উঠে।

 সম্প্রতি গ্রীন রোড এবং সেগুনবাগিচা সঙ্গীত কলেজে খান সেনাদের শিবিরে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে কয়েকজন খান সেনা খতম হওয়ার পর হইতেই খান সেনারা কুর্টোমিটোলার বাহিরে শহরের শিবিরে থাকিতে আর সাহস পাইতেছে না। নির্ভরযোগ্য সূত্র হইতে প্রাপ্ত খবরে জানা যায়, সম্প্রতি একদল হানাদার সেনা শহরের শিবিরে যাইতে অস্বীকার করিলে সামরিক কর্তৃপক্ষ ইহাদিগকে শাস্তি প্রদান করে।