পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/৭১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



691

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : একাদশ খণ্ড

  অপরদিকে হানাদারদের সাহায্যকারী রাজাকার বাহিনীও মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রযাত্রার মুখে সাবাড় হইয়া যাইতেছে। বিভিন্ন রণাঙ্গন হইতে প্রাপ্ত খবরে জানা যায়, খান সেনাদের রাজাকার বাহিনী দলে দলে অস্ত্রশস্ত্রসহ মুক্তিযোদ্ধাদের নিকট আত্মসমর্পণ করিতেছে।

 খুলনা-যশোর কুষ্টিয়া রণাঙ্গনে খুলনা জেলার হরিনগরে মুক্তিযোদ্ধারা গত ১৩ই সেপ্টেম্বর হানাদার সেনা বাহিনীর চারটি লঞ্চ এবং বরিশাল জেলার বানারী পাড়ায় তিনটি লঞ্চ ডুবাইয়া দেন। বানারীপাড়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের অতর্কিত আক্রমণে লঞ্চ নিমজ্জিত হওয়ার ফলে প্রায় ৪০ জন দুস্যসেনার সলিল সমাধি ঘটে। হরিনগর এলাকায় পাক সেনাদের গানবোটের চালকও মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে খতম হয়।

 গত কয়েক দিনে কুষ্টিয়া জেলার প্রায় ২২ জন রাজাকার অস্ত্রশস্ত্রসহ মুক্তিসংগ্রামীদের নিকট আত্মসমর্পণ করে। ইহাদের মধ্যে কোন একটি ইউনিয়ন শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান রহিয়াছে। ১২ই সেপ্টেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা কুমিল্লা জেলার গুথুমা নদীতে টহলদানরত খান সেনাদের উপর অতর্কিত মর্টার আক্রমণ চালাইয়া ৪ জনকে হতাহত করেন। গত ১৩ই সেপ্টেম্বর বীর মুক্তিযোদ্ধারা নোয়াখালী জেলার লক্ষ্মীপুর এলাকায় হানাদার সেনাদের উপর মর্টারযোগে গোলাবর্ষণ করিয়া ৪ জনকে হত্যা করেন। তাঁহারা লক্ষ্মীপুরে খান সেনাদের ৪টি বাঙ্কারও ধ্বংস করিয়া দেন।

 ফেনী এলাকায় তাহারা সম্প্রতি ৫৮ জন খান সেনাকে খতম করেন।

 ঢাকা কুমিল্লা চট্টগ্রাম রণাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা তৎপরতা সেনাদের দিশাহারা করিয়া তুলিয়াছে।

 ১২ই সেপ্টেম্বর তাঁহারা কুমিল্লা জেলার মান্দাবাগ এলাকায় হানাদার খানসেনাদের উপর অতর্কিত ঝাঁপাইয়া পড়িয়া কমপক্ষে ১৫ জন খানসেনা খতম করেন। প্রাপ্ত খবরে জানা যায় খানসেনারা মান্দাবাগ এলাকায় নৌকাযোগে টহল দিয়া বেড়াইতেছিল। খানসেনাদের নৌকা দুইটিও নিমজ্জিত করা হয়। ১১ই সেপ্টেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা আখাউড়ার নিকটে খানসেনাদের ট্রেন আক্রমণ করিয়া ট্রেনটি বিধ্বস্ত করেন। ট্রেনের আরোহী পাকসামরিক অফিসার, ইঞ্জিন ড্রাইভার ও বহুসংখ্যক রাজাকার খতম হয়।

 ১১ই সেপ্টেম্বর সাতা পরার উত্তরে মুক্তযোদ্ধাদের পুতিয়া রাখা মাইন বিস্ফোরণে হানাদার সেনাদের একটি জীপ চূর্ণবিচূর্ণ হইয়া যায় এবং জীপের ৪ জন আরোহী খান সেনা আর সূর্যালোক দেখিবার সুযোগ পায় নাই। মুক্তিযোদ্ধারা লাকসাম-কুমিল্লার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ রেলসেতুও ধ্বংস করিয়া দেন।

 ময়মনসিংহ-সিলেট রণাঙ্গনে হানাদার খান সেনাদের সহিত মুক্তিযোদ্ধাদের তুমুল যুদ্ধ চলিতেছে। ময়মনসিংহ জেলার কামরাইল এলাকায় মুক্তিযোদ্ধারা গত ১৪ই সেপ্টেম্বর পাক হানাদার সেনাদের অবস্থানের উপর আক্রমণ করিয়া ২ জনকে খতম করেন। ১৫ই সেপ্টেম্বর বাগুরামারী এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের পুতিয়া রাখা মাইন বিস্ফোরণে কয়েকজন পাক সেনা আহত হয়।

 সম্প্রতি মুক্তিসংগ্রামীরা ময়মনসিংহ জেলার বাউমী ষ্টেশন এলাকায় ভয়াবহ গেরিলা আক্রমণ চালান। তাহারা জামালপুর জগন্নাথগঞ্জ ঘাটের মধ্যে রেললাইন ধ্বংস করিয়া রেল যোগাযোগ সম্পূর্ণরূপে বিপর্যন্ত করিয়া দেন।

 রংপুর-দিনাজপুর-রাজশাহী রণাঙ্গনের দিনাজপুর জেলার পচাপগড়, দেবীগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও এলাকায় হানাদার বাহিনীর সহিত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচণ্ড লড়াই চলিতেছে। জানা যায়, গত কয়েকদিনে মুক্তিযোদ্ধারা দিনাজপুর জেলার টেীকাপাড়া ডানাকাটা, তেতুলিয়া-ঠাকুরগাঁও এলাকায় ১০ জনেরও বেশী খান সেনা খতম করেন।

 ঠাকুরগাঁও অঞ্চলে মুক্তিযোদ্ধারা হানাদার খান সেনা সাফ করিয়া দিয়া বিস্তীর্ণ এলাকা মুক্ত করেন। এখানে তাঁহারা ১৫ জন রাজাকার গ্রেফতার করেন।