পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/৭১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



692

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : একাদশ খণ্ড

 বহুসংখ্যক খান সেনা এবং ইহাদের সাহায্যকারী রাজাকার খতম করেন। তাহারা পার্বতীপুর সান্তাহারের মধ্যে রেল যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করিয়া দিয়াছেন। ১৫ই সেপ্টেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা শীতলডাঙ্গায় পাক সেনাদের সহিত প্রচণ্ড সংঘর্ষে লিপ্ত হইয়া ৪ জন পাকসেনা খতম এবং ২ জন আহত করেন। একইদিনে তাহারা ঘুঘুডাঙ্গা এলাকায় ৮ জন শত্রসেনা হত্যা করেন।

 ১৪ই সেপ্টেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা পাগলা দেওয়ানহাট এলাকায় ৬ জন খানসেনা খতম করেন। কাড়িয়া এলাকায় স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ব্যাপক পুতিয়া রাখা মাইন বিস্ফোরণে ৪ জন খান সেনা এবং ৮ জন রাজাকার খতম হয়।

 ইহা ছাড়া, মুক্তিযোদ্ধারা ঠাকুরগাঁও-সেতাবগঞ্জের মধ্যে তার যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করিয়া দিয়াছেন। এই অঞ্চলে মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপক তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় খান সেনারা নদীপথেও চলাচল করিতে সাহস পায় না।

 গত ১৭ই সেপ্টেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা রাজশাহী-নাটোরের মধ্যে দুইটি বড় মাইন চার্জ করিয়া একটি মালবাহী ট্রেনের ১২টি ওয়াগন লাইনচু্যত করিয়া দেন। মালবাহী ট্রেন ওয়াগনে খানসেনারাও ছিল। ইহাদের মধ্যে প্রায় ৫০ জন খতম এবং ৩০ জন আহত হয়।

 বাংলাদেশের বিভিন্ন রণাঙ্গনে খান সেনাদের সহিত মুক্তিযোদ্ধাদের তুমুল লড়াই চলিতেছে বলিয়া সর্বশেষ প্রাপ্ত খবরে জানা গিয়াছে।

 বিলম্বে প্রাপ্ত খবরে প্রকাশ, মুক্তিযোদ্ধারা ঢাকা শহর এবং উহার আশেপাশে গেরিলা তৎপরতা জোরদার করিয়াছেন। গত মাসের শেষ সপ্তাহে হানাদার পাকিস্তানী সেনারা ঢাকার ইস্কাটন এলাকার একটি বাড়ীতে আকস্মিক হানা দেয় এবং গৃহকর্তাকে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্ধান দিতে নির্দেশ দেয়। এমন সময় কয়েকজন দুর্ধর্ষ মুক্তিযোদ্ধা ঘটনাস্থলে আসিয়া উপস্থিত হন। তাঁহারা সকলকে বিস্মিত করিয়া দিয়া হানাদার খান সেনাদের উপর ঝাঁপাইয়া পড়িয়া তাহদের নিকট হইতে ষ্টেনগান ছিনাইয়া নেন। এই ঘটনায় ৪ জন হানাদার সেনা খতম হয়। অতঃপর মুক্তিযোদ্ধারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। প্রকাশ, সম্প্রতি হোটেল ইণ্টারকণ্টিনেণ্টাল আক্রমণের সহিত জড়িত মুক্তিযোদ্ধাদের অনুসন্ধানে খান সেনারা ইস্কাটনের এই বাড়ীটিতে হানা দেয়।

 চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বাসাবো এলাকায় খান সেনাদের একটি ক্যাম্পে সুঃসাহসিক মুক্তিযোদ্ধারা প্রকাশ্য দিবালোকে আক্রমণ চালাইয়া খান সেনা ও পশ্চিম পাকিস্তানী পুলিশসহ ১৪ জন শত্রু খতম করেন। প্রকাশ, ঘটনার দিন খান সেনারা যখন দ্বিপ্রাহরিক ভোজে লিপ্ত, তখন দুর্ধর্ষ মুক্তিযোদ্ধারা ক্যাম্পের জানালা দিয়া মেশিনগানের সাহায্যে গোলাবর্ষণ করেন। মাত্র সপ্তাহের ব্যবধানে খানসেনাদের সুরক্ষিত সদর দফতর ঢাকা নগরীতে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ১৮ জন শত্রসেনা নিহত হওয়ায় ইসলামাবাদের ঢাকাস্থ অসুরপুরীতে মহাআতঙ্কের সঞ্চার হইয়াছে। স্মরণ থাকিতে পারে যে, আগষ্ট মাসের প্রথম দিকে সেগুনবাগিচাস্থ মিউজিক কলেজে খানসেনাদের ক্যাম্পে অতর্কিত আক্রমণ চালাইয়া ৬ জন হানাদার সৈন্য খতম করেন।

 চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে মুক্তিযোদ্ধারা নরসিংদীর নিকট পাক বোঝাই একটি কার্গো বার্জ ডুবাইয়া দেন। ৮ই সেপ্টেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা ময়মনসিংহ জেলার মোহনগঞ্জ এলাকায় নদীপথে পাকসেনাদের উপর প্রচণ্ড আক্রমণ চালান। প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র বোঝাই তিনটি নৌকা ফেলিয়াই কাপুরুষ পাকিস্তানী সেনারা পলায়ন করে। মুক্তিযোদ্ধারা এই সকল অস্ত্রশস্ত্র এবং নৌকা দখল করেন। ৫ই সেপ্টেম্বর সিলেট-ময়মনসিংহ সীমান্তে ধর্মপাশা এলাকায় খানসেনাবাহী কয়েকটি নৌকার উপর আকস্মিক আক্রমণ চালাইয়া প্রায় ৬২ জন খানসেনা নিহত হয়। ইহাদের মধ্যে একজন মেজরও রহিয়াছে।

 সর্বশেষ খবরে জানা যায়, গত পাঁচদিনে কুমিল্লা, নোয়াখালী ও কুষ্টিয়ায় প্রায় চারশো জন হানাদার দস্যু খতম হয়েছে।