পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/৭২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



698

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : একাদশ খণ্ড

রণাঙ্গনের খবর

(রণবার্তা পরিবেশক)

 বাংলাদেশের অগ্নিসন্তান মুক্তিযোদ্ধারা হানাদার ইসলামবাদী জানোয়ার বাহিনীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন রণাঙ্গনে প্রচণ্ড আঘাত হানিয় চলিয়াছেন। গত শনিবার বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সাফল্যজনক ৬ মাস অতিক্রান্ত হয়।

 এদিকে বিভিন্ন রণাঙ্গন হইতে প্রাপ্ত খবরে জানা যায় যে, গত এক সপ্তাহে মুক্তিযোদ্ধারা ৫ শতাধিক হানাদার সৈন্য খতম করিয়াছেন। গত সপ্তাহে দুঃসাহসিক মুক্তিযোদ্ধারা বেপরোয়া আক্রমণ চালাইয়া মংলা বন্দরে ইউএসএম লাইটনিং নামক একটি মার্কিন জাহাজ সম্পূর্ন ধ্বংস করিয়া দেন। তাঁহারা বন্দরের অপর একটি বিদেশী জাহাজেরও ক্ষতি সাধন করেন।

 ইহা ছাড়া মুক্তিযোদ্ধারা গেরিলা অভিযান চালাইয়া খান সেনাবাহী দুইটি নৌযানও দখল করেন।

 যমের ভয়ে ভীত কাপুরুষ খান সেনাদের নিরাপত্তার আবরণ রাজাকাররা মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে অস্ত্রশস্ত্রসহ আত্মসমৰ্পন করিতেছে। গত সপ্তাহে কুমিল্লা এলাকায়ই একদিনে ৬৩ জন রাজাকার মুক্তিযোদ্ধাদের নিকট আত্মসমৰ্পন করে।

 কুমিল্লা জেলার মেহারী নামক স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ৬৫ জন হানাদার সেনা খতম হয়।

 বাংলাদেশের উত্তর রণাঙ্গন হইতে প্রাপ্ত এক খবরে জানা যায় দিনাজপুর জেলার ঠাকুরগাঁও এবং রংপুর ক্যাণ্টনমেণ্ট এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা অভিযানের ব্যাপক তৎপরতা বৃদ্ধি পাইয়াছে।

 ২০ শে সেপ্টেম্বর ঠাকুরগাঁও শহরের উত্তরে মুক্তিযোদ্ধাদের অতর্কিত আক্রমনে ৬ জন খানসেনা নিহত হয়।

 কুমিল্লা জেলার নবীনগর এবং কসবা এলাকায় জল্লাদ খান সেনারা নতুনভাবে গণহত্যা এবং লুটতরাজ শুরু করিয়াছে বলিয়া খবর পাওয়া গিয়াছে। জানা যায়, চলতি মাসের প্রথম পক্ষে এই সকল এলাকায় খান সেনারা ৫শত ঘরবাড়ি আগুন দিয়া ভস্মীভূত করিয়া দেয়। খানসেনাদের হাতে এইসব এলাকায় ৩০ জন গ্রামবাসী নিহত হন।

 নবীনগর থানার মীরপুর এলাকায় জল্লাদ সেনারা লুটতরাজ চালায়। বাংলার অতন্দ্র প্রহরী মুক্তিযোদ্ধারা ইহাদিগকে উপযুক্ত জবাব দেন। তাঁহারা শত্রবাহিনীর উপর ঝাঁপাইয়া পড়িযা গ্রামবাসীদের সহায়তায় ৩১ জন খানসেনা খতম করেন। ইহার পর লঞ্জযোগে আরও একদল খানসেনা ঘটনাস্থলে আগমন করিয়া গ্রামে আক্রমণ করে। ইহাছাড়া, দাফুনিয়া বিদ্যাকোট প্রভৃতি গ্রামেও জল্লাদসেনারা আক্রমন করে।

 কসবা থানার চরগরা এলাকার খানসেনারা আড়াইশত ঘরবাড়ি আগুন দিয়া পোড়াইয়া দেয়। ইহারা এই এলাকা হইতে গরুবাছুর ছিনাইয়া লইয়া যায়। ইহা ছাড়া, বাইওনা গ্রামে ৩শ বাড়ি পোড়াইয়া দেয়। খান সেনারা কসবা থানার সিমরাইল গ্রামেও হালা চালায়। বীর মুক্তিযোদ্ধারাও ইহার প্রতিরোধ গ্রহণ করিতে শুরু করিলে খান সেনারা এই এলাকা ছাড়িয়ে যাইতে বাধ্য হয়।

 একই দিনে মুক্তিযোদ্ধরা এই এলাকায় প্রায় ১ শত খানসেন হত্যা করেন। ইহার নৌকাযোগে এই এলাকায় আসিয়াছিল। মুক্তিযোদ্ধারা ইহাদের নৌকাগুলি ডুবাইয়া দেন।