পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/৭২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



700

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : একাদশ খণ্ড

প্রাইভেট ট্যাক্সিযোগে শহরের কোন একটি এলাকায় ঘুরাফেরার সময় টহলরত খান সেনারা মুক্তিফৌজ সন্দেহে তাঁহাদের অনুসরণ করে। খান সেনারা জীপ হইতে গর্জন করিয়া মোটরটিকে থামিতে নির্দেশ দেওয়ার মাত্রই ইহাদের সম্মুখে ট্যাক্সির পিছনের কাচ ভাঙিয়া মুক্তিযোদ্ধাদের মেসিনগান গর্জিয়া ওঠে। হতভম্ব খান সেনাদের হাতের মেশিনগানের ট্রিগারে আঙ্গুল স্পর্শ লাগিবার পূর্বেই তাহাদের রকাক্ত দেহ লুটাইয়া পড়ে ঢাকার পীচ ঢালা কারো রাস্তায় সম্মুখে গাড়িটি ততক্ষণে নিরুদ্দেশ হইয়া যায়।

 এইতো সেই দিন, খান সেনাদের কঠোর প্রহরাধীনে একখানি ট্রেন ঢাকা হইতে ময়মনসিংহ যাইতেছিল। কিন্তু ঢাকা নগরী হইতে প্রায় ৩০ মাইল উত্তরে ঢাকা জেলার সীমান্ত কাওরাইদ অতিক্রম করার পূর্বেই ট্রেনের ইঞ্জিনটি একটি প্রচণ্ড বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে খান হইয়া যায়। ট্রেনের বগী কয়টি উল্টাইয়া পড়ে। ব্যাপার বুঝিবার পূর্বেই খান সেনাদের বুক ঝাঁঝরা হইয়া যায় মেসিনগান আর রাইফেলের গুলিতে।

 সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে খান সেনারা লঞ্চযোগে যাইতেছিল নবাবগঞ্জ ও দোহার থানা দখল করার জন্য। ঢাকা হইতে বুড়িগঙ্গা দিয়া বাহির হইয়া ইছামতীকুলের বান্দুরায় লঞ্চটি পৌছিলে মুক্তিযোদ্ধারা ইহাদের উপর প্রচণ্ড গোলাগুলি বর্ষণ করেন ফলে ৩৪ জন খান সেনা মারা যায়। অন্যান্যদের আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। লঞ্চটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

 এই দিনই নবাবগঞ্জের নিকট মুক্তিযোদ্ধারা খান সেনাদের অপর একটি লঞ্চের উপর আক্রমকণ চালাইয়া প্রায় ২৫ জন শত্রসেনা খতম করেন। ইহাদের লঞ্চটিরও ক্ষতি সাধন করা হয়।

 গত মাসের শেষ সপ্তাহে মুক্তিযোদ্ধারা খুলনা জেলার সাতক্ষীরা মহকুমার অন্তর্গত কাকডাঙ্গা, মাদ্রা এবং বোয়ালিয়া এলাকায় প্রায় এক ব্রিগেড শক্রসেনাদের একটানা তিন দিন ব্যাপী যুদ্ধে লিপ্ত রাখেন।

 এই খণ্ডে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে প্রায় ৪ শত খানসেনা খতম হয় বলিয়া প্রত্যক্ষদশী গ্রামবাসীর নিকট হইতে জানা যায়। মুক্তিযোদ্ধারা এই রনাঙ্গন হইতে ৬ জন শত্রসেনা গ্রেফতার করেন। ইহা ছাড়া প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ দখল করেন। প্রায় ৪ শত খান সেনা নিহত হওয়ার পর অন্যান্য খান সেনারা পলায়ন করে।

রংপুর ও সাতক্ষীরায় সাড়ে ৬ শত শত্রুসৈন্য খতম

 জঙ্গী হানাদার বাহিনীর সঙ্গে তীব্র লড়াই চালাইয়া মুক্তিযোদ্ধারা রংপুর জেলার বক্সীগঞ্জ থানা পুনর্দখল করিয়াছেন। বলিয়া জানা গিয়াছে। গত ২৩শে সেপ্টেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা কোদার কাটিতে পাক জঙ্গীশাহীর তীব্র আক্রমণ প্রতিরোধ করিয়া অন্ততঃ সাড়ে তিন শত পাক সৈন্য খতম করিয়াছেন। বাংলাদেশের বীর গেরিলারা রংপুর জেলায় গত সপ্তাহে বর্বর ইয়াহিয়া বহিনীর ৩টি জলযান ডুবাইয়া দিয়াছেন।

 মুজিবনগরে প্রাপ্ত খবরে প্রকাশ, খুলনা জেলার সাতক্ষীরা মহকুমার কোন এক স্থানে সম্প্রতি মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে সংঘর্ষে ৩০০ জন পাক সৈন্য নিহত হইয়াছে। ৬ জন খান সেনাকে ধরিয়া আনা হইয়াছে।

 বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধাদের সদর দপ্তর হইতে প্রচারিত এক বুলেটিনে বলা হইয়াছে যে, সম্প্রতি ঢাকা, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে মুক্তিযোদ্ধারা মহরীতে অবস্থিত পাক সৈন্যদের উপর অতর্কিত আক্রমণ চালান। ইহাতে ৫ জন শত্রুসৈন্য নিহত ও ৩ জন আহত হইয়াছে।

 মুক্তিযোদ্ধারা গত শনিবার ময়মনসিংহ শ্রীহট্ট অঞ্চলের দেয়ানী বাজারে শত্রু সেনাদের উপর তীব্র আক্রমণ চালান। ফলে ২০ জন পাক সেনা হতাহত হইয়াছে। ঐদিন জয়মতীীপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের মর্টার আক্রমণের ৩ জন শত্রসেনা খতম হইয়াছে।