পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/৭২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



701

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : একাদশ খণ্ড

 মুক্তিযোদ্ধারা উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে মাইন বিস্ফোরণে ঘটাইয়া পাক সৈন্যের একটি সামরিক জীপ উড়াইয়া দেয়। এখানে ২ জন পাকসেনা নিহত হইয়াছে। ঐ এলাকায় শত্রুদের একটি ঘাঁটি আক্রমণ করিয়া ৫ জন শত্রু সেনাকে খতম করিয়াছে।

-বাংলার বাণী, ৫ অক্টোবর, ১৯৭১

 খান সেনা ও মুক্তিফৌজের মধ্যে কামানের লড়াই কৃষ্ণনগর, ৫ ই অক্টোবর গত ১লা অক্টোবর সন্ধ্যার দিকে বাংলাদেশের খুলনা সেক্টরের সাতক্ষীরার অধীনে উকসাতে খান সেনা মুক্তিফৌজের মধ্যে প্রচণ্ড কামানের লড়াই হয়। ঘন ঘন কামানের শব্দ ভারতীয় সীমারন্ত এলাকা থেকেও শোনা যায়।

 মুক্তিফৌজের সূত্রে প্রাপ্ত বিশদ বিবরণে জানা গেছে যে এক ব্রিগেড খান সেনা (সংখ্যায় প্রায় ৬০০ জন) ২৩ ট্রাকে করে সাতক্ষীরা থেকে উক্ত মহকুমার কালিগঞ্জ থানার অন্তর্গত উকসায় মুক্তিফৌজের ঘাঁটি আক্রমণ করার জন্য অগ্রসর হয় এবং ভারী কামান থেকে গোলাবর্ষণ শুরু করে। মুক্তিবহিনীও তাদের মর্টার থেকে গোলাবর্ষণ করে তার উপযুক্ত জবাব দেয়। মুহুর্মুহু কামানের গোলাবর্ষণের শব্দে ভারতীয় সীমান্ত এলাকাও কেপে উঠতে থাকে।

 মুক্তিফৌজের প্রচণ্ড প্রতিরোধের মুখে টিকতে না পেরে খান সেনারা উকসার কিছু দূরে পিছিয়ে যায় এবং সেই খানেই অবস্থানরত থাকে। এই লড়াইয়ের ক্ষয়ক্ষতির বিশদ বিবরণ এখনও না পাওয়া গেলেও কয়েকজন খান সেনা নিহত হয়েছে এবং একজন মুক্তিফৌজ আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।

 অপর এক সংবাদে জানা গেছে যে, গত ২৮ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরায় শ্যামনগরের কাছে একস্থানে একটি পাকিস্থনী গানবোট মুক্তিফৌজের একটি ঘাটির ওপর গোলাবর্ষণ করলে উভয়পক্ষে প্রচণ্ড গুলি বিনিময়ের পর পাক গানবোট পশ্চাদপসরন করে। পাক সৈন্যদের ক্ষয়ক্ষতির সংবাদ জানা যায়নি। মুক্তিফৌজের পক্ষে তিনজন অল্পবিস্তর আহত হয়।

খুলনা সেক্টরে ৫০০ খান সেনা নিহত

 মুক্তিফৌজের হিসাবে দেখা গেছে যে, গত দু’মাসে মুক্তিফৌজের হাতে খুলনা সেক্টরে বিভিন্ন স্থানে লাড়াইয়ে ৫০০ খানসেনা ও ২০০ রাজাকার নিহত হয়েছে। তাছাড়া ৬০০ টি পাক রাইফেল দখল করা হয়েছে এবং ৬০ জন রাজাকার মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে।

 পাঞ্জাবী পুলিশ (বাংলাদেশে এখন পাঞ্জাবী পুলিশ আমদানি করা হয়েছে) ও ৮ জন খান পুলিশ নিহত হয়েছে। তাছাড়া ৬৬টি খান সেনাদের রাইফেল মুক্তিফৌজের হস্তগত হয়েছে। মুক্তিফৌজ খান সেনাদের ২টি লঞ্চ ও একটি গানবোট ধ্বংস করেছে ও একটি লঞ্চ হস্তগত করেছে।

বরিশালের বিভিন্ন স্থানে লড়াই চলছে

  মুজিবনগরে আগত খুলনা সেক্টরের বরিশালে লড়াইরত মুক্তিফৌজের জনৈক মুখপাত্রের কাছ থেকে জানা গেছে যে, বরিশালের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে দোয়ারিকা, রহমতপুর, উজিরপুর, হবিবপুর, বানারীপাড়া, মুলাদী প্রভৃতি স্থানে খণ্ড খণ্ড ভাবে গেরিলা লড়াই চলছে। 

-আনন্দবাজার পত্রিকা, ৬ অক্টোবর, ১৯৭১