পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/৭২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

704 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : একাদশ খন্ড মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি মুক্তিসেনাদের কঠের মনোবল, অসমসাহস, দুর্জয় আত্মবিশ্বাস এবং আত্মোৎসর্গের বিপুল প্রেরণা দেখে গর্ববোধ করেন। তিনি তাদেরকে আরও তৎপর হতে এবং ত্যাগ স্বীকারের জন্য আহবান জানান। তিনি ভাষনদান কালে মুক্তিযোদ্ধাদের অসমসাহসিকতা ও দোশাত্মবোধের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সমগ্র জাতি তাঁদের এই দুঃসাহসী অভিযানের জন্য গর্বিত বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি আরও বলেন যে, আপনারা এই মুক্তিসংগ্রামের ভেতর দিয়ে একটি নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করে চবলেছেন। প্রধান সেনাপতি তাঁদেরকে একথা স্মরণ করিয়ে দেন, বাঙালিরা নাকি যোদ্ধা জাতি নয়, এই ভ্রান্ত ধারণা আপনারা একদম পাল্টে দিয়েছেন। তিনি তাঁর ভাষণে আরও বলেন যে, ছয় মাসের যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা যে সাহসিকতা দেখিয়েছেন তাতে করে আমাদের জনসাধারণের আত্মবিশ্বাস আরও বেড়ে গেছে। শ্যামনগর-কালিগঞ্জ দুর্জয় ঘাঁটি কিন্তু...... -মিন্টু বসু শারদীয় ছুটি অতএব হাতে প্রচুর সময়। কেননা এবার তো আর পুজোর ব্যাবস্থা নেই। তাই ভেবেচিন্তে ঠিক করলাম, মুক্তিবাহিনীর ঘাঁটি পরিদর্শন করতে যাব। ২৭শে সেপ্টেম্বর বৈকাল চারটায় আমরা ফিরোজ বাঙালি এবং আমি। কিছুদুর এগুতেই শেলিং- এর শব্দ শুনতে পেরাম। গ্রামের লোকমুলে শুনলাম, মুক্তিবাহিনী বসন্তপুরের পাক ছাউনি আক্রমণ করেছে। মনে হল ঐ বিকটাকার শব্দগুলো যেন আমাদেরকে সাদর সম্ভাষন জানাচ্ছে- দ্রুত এগিয়ে চললাম। রাত তখন আটটা ঘাঁটির কাছাকাছি এসে পৌছলাম। এবার আমাদেরকে অতি সন্তপনে এগুতে হবে। কেননা দু’পক্ষেই গোলাগুলি হচ্ছে অতএব এবার আমরা ক্রলিং করে এগুলে লাগলাম। এমনভাবে কিছুদুরে এগুনোর পর ঘাটিতে এস পৌছলাম। এর কিছুক্ষণ বাদেই গোলাগুলি থেমে গেল। আরো পরে ক্যাপ্টেন হুদা এবং এগারজন মুক্তিযোদ্ধা সমস্ত গায়ে কাঁদামাখা অবস্থায় ক্যাম্পে ফিরে এলেন, তার মুখেই শুনলাম বসন্তপুরে তিনি এবং তার দল স্বাধীন বাংলার পতাকা তুলতে সক্ষম হয়েছেন, দুঃসাহসী ক্যাপ্টেন এবং তার সেনাদের প্রতি শ্রদ্ধায় স্বভাবতঃই মাথাটা নুয়ে এল। মনে মনে বললাম , বাংলাদেশ আজ আর দুর্বল নয়। বাংলার এই দুর্জয় শক্তি আমার জননী জন্মভূমিকে মুক্ত করবেই। কয়েকশত মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে লাইনে বসে আহার পর্ব সমাধা করে তাঁবুর নীচে রাতের মত আশ্রয় নিলাম। ভোরের ঘুম ভাঙল আবার সেই শব্দে। শুনলাম শ্যামনগর ও কালিগঞ্জ দখল করার জন্য পাক সৈন্যরা আমাদের উপর আক্রমণ করেছে। মুখ-হাত ধুয়ে আসতেই ক্যাপ্টেন সাহেবের চায়ের টেবিলে ডাক পড়ল আমাদের। সবে গিয়ে বসেছি ঠিক তখনই সংবাদ এল পাক সৈন্যরা পিরোজপুরের বাঙ্কার দখল করে নিয়েছে, তাই ৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা এবং গোলাবারুদ পাঠাতে হবে। দেখলাম মুহুর্ত মধ্যে ৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে ক্যাপ্টেন সাহেব যাবার জন্য প্রস্ত্তত হয়েছেন। হঠাৎ আমরা স্থির করলাম এ যুদ্ধে অংশগ্রহন করব। ক্যাপ্টেন সাহেবেকে বলায় তিনি সব ব্যবস্থা করে দিলেন। বেলা দশটায় গিয়ে পৌঁছলাম শ্যামনগর থানার পিরোজপুরে। আমাদের যেখানে ডিফেন্স ছিল তার থেকে দু’শ গজ দুরে শত্রুসৈন্য। দাঁড়িয়ে দেখরাম দুশ গজ দূরে আমাদের বাঙ্কারের মধ্যে খান সেনারা। দু'পক্ষেই সমানে গোলাগুলি চলছে। শুনলাম এর মধ্যেই প্রায় ৫০/৬০ জন রাজাকারসহ শত্রুসৈন্য খতম হয়েছে আমাদের অসমসাহসী মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে।